কলকাতা, 15 জুলাই: দৃষ্টিহীনদের জন্য এবার আলিপুর চিড়িয়াখানায় বসল ব্রেইল বোর্ড। যা কার্যত নজির গড়ল দেশে । রবিবার দেশে প্রথম কোনও চিড়িয়াখানায় ব্রেইল বোর্ডের উদ্বোধন হয়েছে । বেশ কয়েকজন দৃষ্টিহীনকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যের বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা এদিন এই ব্রেইল বোর্ডের উদ্বোধন করেন ।
মূলত, দৃষ্টিহীন দর্শকদের কথা মাথায় রেখেই এই পদক্ষেপ আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের । মন্ত্রী বলেন, "কাজের স্বার্থে বহু জায়গায় এটা হয় । অনেক সময় শুনতে হয়, বিশেষভাবে সক্ষম । যা আমার কাছে খারাপ লাগার বিষয় ছিল । কিন্তু, আজ আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ সেই সমস্যার কিছুটা সমাধান ঘটিয়েছে । সকলেই সমান সুযোগ পাবেন ।"
বাঘ, শিম্পাঞ্জি, জিরাফ মিলিয়ে মোট 20টি পশুপাখির এনক্লোজারের সমানে এই ব্রেইল বোর্ড বসানো হয়েছে । চোখ নিয়ে কাজ করা কলকাতার এক বেসরকারি সংস্থার তরফে এই ব্রেইল বোর্ডগুলো দেওয়া হয়েছে বলে খবর । কিন্তু, আলিপুর চিড়িয়াখানায় 100-র কাছাকাছি পশুপাখির খাঁচা বা এনক্লোজার রয়েছে । তার মধ্যে মাত্র 20টিতে এই ব্রেইল বোর্ড বসানো হয়েছে । একারণেই মন্ত্রী, আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ-সহ বন বিভাগের উপস্থিত আধিকারিকরা ওই বেসরকারি সংস্থাকে বাকি এনক্লোজারের জন্য ব্রেইল বোর্ড ব্যবস্থার অনুরোধ জানিয়েছেন।
নদিয়ার কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা গৌর হালদার বিশেষভাবে সক্ষম বা দৃষ্টিহীন । চিড়িয়াখানায় এই ব্রেইল বোর্ড বসানোতে তিনি আপ্লুত । তিনি বলেন, "খুব আনন্দ লাগছে । এই বোর্ড পড়ে পশুপাখির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে পারছি । আগে এই সুযোগ ছিল না । কোন পশুপাখির খাঁচার সমানে দাঁড়িয়ে আছি তা জানতে অন্যের সাহায্য নিতে হত । এখন তা আর হবে না । পরজীবী হতে হবে না । নিজেই পড়ে জানতে পারব । কোন পশুপাখি, কোথা থেকে নিয়ে আসা হয়েছে, কতদিন বাঁচে ইত্যাদি সব জানতে পারব ।"
আলিপুর চিড়িয়াখানার অধিকর্তা শুভঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, "বহু জায়গা থেকে দলে দলে দৃষ্টিহীন দর্শকরা আলিপুর চিড়িয়াখানায় আসেন । অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা কোন জন্তু-জানোয়ার বা পশু পাখির খাঁচার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন তা বুঝতে পারেন না। বা ডাক শুনে বুঝতে পারলেও সে পশু পাখি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য গ্রহণ করতে পারেন না । তাই তাঁদের কথা মাথায় রেখেই আমাদের এই উদ্যোগ ।"
চিড়িয়াখানা সূত্রে আরও খবর, আরও কিছু আকর্ষণীয় জীবজন্তু চিড়িয়াখানা আনার চেষ্টা চলছে । পরিকাঠামোগত পরিবর্তনের একটা পরিকল্পনা করা হচ্ছে । কিন্তু বাস্তবায়নের পর্যায়ে না এলে এখনই কিছু বলা সম্ভব নয় বলে শুভঙ্কর সেনগুপ্ত জানিয়েছেন ।