কলকাতা, 26 নভেম্বর: সংবিধান দিবস নিয়ে রাজ্য বিধানসভায় একটি প্রস্তাব এনেছিলেন বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । আর তাতেই জমজমাট তরজা শাসক এবং বিরোধীদের । একে অপরের বিরুদ্ধে তারা আনল সংবিধান না-মানার অভিযোগ ৷
এই আলোচনায় প্রথম দিনে বিধানসভায় বক্তব্য রাখেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ফিরহাদ হাকিমের মতো নেতারা । বিরোধী রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে বক্তব্য রাখেন শুভেন্দু অধিকারী, শঙ্কর ঘোষ ও নওশাদ সিদ্দিকী । এই প্রস্তাব বুধবার দ্বিতীয় দিনের দ্বিতীয় অর্ধে আরও একবার উঠবে । সেই সময় বক্তব্য রাখতে পারেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়, পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী ।
এদিন এই আলোচনায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে শাসক এবং বিরোধী পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে । ছাড় পাননি বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও । এই প্রস্তাবনায় কেন্দ্রীয় সরকার এবং কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা নিয়ে সমালোচনা থাকায় স্পিকারের প্রস্তাবনাকে রাজনৈতিক প্রস্তাব বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা । তিনি এও বলেন, "অধ্যক্ষের পদ বরাবরই নিরপেক্ষ হিসেবে ধরা হয় । কিন্তু এই প্রস্তাবনা আনতে গিয়ে তিনি যেভাবে কেন্দ্রীয় সরকার বা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সমালোচনা করেছেন, তাতে তাঁর নিরপেক্ষতার বিষয়টি আর অক্ষত রয়েছে এ কথা বলা যাচ্ছে না ।"
একইসঙ্গে এই আলোচনায় যেভাবে মানসরঞ্জন ভুঁইয়া বিবেকানন্দের শিকাগো বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে বিজেপিকে বিঁধেছেন, তা নিয়েও সরব হন শুভেন্দু । সেচমন্ত্রী দাবি করেন, শিকাগো বক্তৃতা দিতে গিয়ে স্বামীজি নিজেকে সনাতনীদের প্রতিভূ বলেছিলেন । যে ধর্ম সব ধর্মকে সম্মান করে, সব ধর্মকে আশ্রয় দেয় । একইসঙ্গে তাঁর প্রশ্ন, "এখন কি তা রক্ষিত হচ্ছে ? কেন্দ্রে যে শাসকেরা রয়েছে, তারা সংবিধানকে প্রত্যেক মুহূর্তেই অমান্য করছে ।"
এখানেই আপত্তি শুভেন্দুর । তিনি বলেন, যেভাবে স্বামীজীর কথা বলতে গিয়ে রাজনৈতিক দলের প্রসঙ্গ টেনে আনা হয়েছে সেটা স্বামী বিবেকানন্দকে অপমান করা । এটা কোনও ভাবে মেনে নেওয়া যায় না । এদিন বক্তব্য রাখতে গিয়ে শুভেন্দু অধিকারী আবার শাসকদলের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বিরোধীদের এড়িয়ে যাওয়া, তাদের গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন । এর পালটা জবাব দিয়েছেন কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম ।
তিনি বলেন, "আমি কী খাব ? আমার খাবারে মাটন আছে না বিফ আছে ? তা দেখা হচ্ছে । পিটিয়ে মারা হচ্ছে । আমার ধর্মস্থান আক্রান্ত হচ্ছে । মানুষ মারা যাচ্ছে । এগুলি আদতে সংবিধানকে অবমাননা ।" এদিন তিনি এও দাবি করেছেন, বাংলার বাইরে সংবিধানের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে । সেই কারণেই এই রাজ্যে বলা হয়, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার । আজ সব জায়গায় মানুষ অধিকারের লড়াই লড়ছে । বেশিরভাগ রাজ্যপাল যাঁরা আসছেন তাঁরা এখন রাজনৈতিক ভাবে চালিত । রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যকে রাজভবনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। এটা কী করে হতে পারে ? নির্বাচিত সরকারের মন্ত্রীর সঙ্গে এটা করা যায় না ।"