বিষ্ণুপুর, 17 মার্চ: সৌমিত্র খাঁ ৷ বিষ্ণুপুরের সাংসদ ৷ আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে ওই কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ৷ নাম ঘোষণা হতেই বেরিয়ে পড়েছেন প্রচারে ৷ কী কী কাজ করেছেন সেই খতিয়ান যেমন তিনি তুলে ধরছেন প্রচারের মাঝে, তেমনই জানাচ্ছেন 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে জিতলে তিনি আর কী কী কাজ করবেন ৷
সাংসদের দাবি, 2019 সাল থেকে 2024 সালের মধ্যে সাংসদ উন্নয়ন তহবিলের মোট 19 কোটি টাকা খরচ করেছেন ৷ কোভিড অতিমারীর জন্য ওই তহবিলে এক বছরের জন্য পাঁচ কোটি টাকা পাননি, সেই কথাও জানাতে ভোলেননি তিনি ৷ তাছাড়া বিষ্ণুপুরের উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি জানান, বিষ্ণুপুর লোকসভা কেন্দ্রের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে সাত হাজার কোটি টাকার প্রজেক্ট নিয়ে এসেছেন । যার মধ্যে বাঁকুড়া থেকে মশাগ্রাম হয়ে হাওড়া রেলপথ সংযোগ স্থাপন, বাঁকুড়া তারকেশ্বর রেলপথের প্রসারণ, বিষ্ণুপুর শহরের রেলওয়ে ওভারব্রিজ হয়েছে ।
তিনি আরও জানান, এছাড়াও রয়েছে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার তত্ত্বাবধানে বিষ্ণুপুরের বিভিন্ন মন্দিরের মেরামতি, বিষ্ণুপুরের বাবা ষাঁড়েশ্বর মন্দির, বিষ্ণুপুর স্টেশনের চলমান সিঁড়ি নির্মাণ-সহ আরও অনেক কিছু করা হয়েছে । তাই তাঁর কোনও আক্ষেপ নিয়ে সৌমিত্র জানিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "আক্ষেপ কিছু নেই ৷ তবে কিছু করা বাকি রয়েছে যেমন বেলিয়াতোড় থেকে দুর্গাপুর রেলপথ স্থাপন, কয়েকটা নদী ব্রিজ নির্মাণ ।’’
একই সঙ্গে এবারও জয়ী হলে কী কী কাজ করবেন, সেই খতিয়ানও দিয়েছেন ৷ সৌমিত্র জানান, আরেকবার সাংসদ হিসেবে নির্বাচিত হলে বিষ্ণুপুরে দশ হাজার কোটি টাকার কাজ করানোর পরিকল্পনা রয়েছে । যার মধ্যে থাকবে দামোদর নদের উপর দু’টো ব্রিজ, সোনামুখী বাইপাস নির্মাণ, দ্বারকেশ্বরের ওপর ব্রিজ নির্মাণ-সহ আরও অনেক কিছু ।
কিন্তু সত্যিই কি তাই! বিষ্ণুপুরের মানুষ কী বলছে ৷ সেখানে সাধারণ মানুষের কথা বলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেল ৷ অনুপম রজক নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘প্রশাসনিক বাধা সত্ত্বেও অনেক কাজ করেছেন ৷ এবারও উনিই জিতবেন ৷’’ তবে এই মতের শরিক নন পিন্টু গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তিনি বরং বলেছেন, ‘‘কোনও কাজ করেননি ৷ গত পাঁচ বছর এলাকায় দেখা যায়নি ৷’’ অন্যদিকে উত্তম শিট বলেন, ‘‘অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৷ কোনও কাজ করেননি ৷ সেই কারণে তৃণমূল করতে শুরু করি ৷ সেখানেও কোনও কাজ হয় না ৷ এখন সবাই নিজের স্বার্থে রাজনীতি করে ৷’’
তবে বিষ্ণুপুরের এবারের ভোট নানা কারণে অন্যরকম ৷ প্রথমত, সৌমিত্র খাঁ এই প্রথম কোনও একই দলের হয়ে দ্বিতীয়বার প্রার্থী হয়েছেন ৷ কারণ, 2013 সালে উপ-নির্বাচনে কংগ্রেসের টিকিটে জিতে কোতুলপুরের বিধায়ক হন ৷ কিন্তু তার পরই তিনি দল বদলে তৃণমূল কংগ্রেসে আসেন ৷ 2014 সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের দলের হয়ে বিষ্ণুপুর আসনে জিতে লোকসভার সাংসদ হন ৷ কিন্তু 2019 সালের লোকসভা ভোটের আগে তিনি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে চলে আসেন ৷ সেবার তিনি বিজেপির টিকিটে ভোটে লড়েন ওই কেন্দ্রে ৷ জিতে ফের সাংসদ হন ৷
দ্বিতীয়ত, 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনে আদালতের নির্দেশে বিষ্ণুপুরে প্রবেশই করতে পারেননি সৌমিত্র খাঁ ৷ কোনও সভা-সমাবেশ-মিছিলে অংশ না নিয়েই ভোটে জেতেন ৷ ফলে এবারই তিনিই সাংসদ হিসেবে আরও একবার জেতার লক্ষ্যে প্রথমবার বিষ্ণুপুরে প্রচারে নেমেছেন ৷
তৃতীয়ত, 2019 সালে সৌমিত্রর হয়ে প্রচারে নেমেছিলেন সুজাতা মণ্ডল খাঁ ৷ কিন্তু পরবর্তী পাঁচ বছরে তাঁদের সম্পর্কে অনেক পরিবর্তন হয়েছে ৷ এখন সুজাতা সৌমিত্রর প্রাক্তন ৷ দু’জনের বিবাহবিচ্ছেদ হয়ে গিয়েছে ৷ আর দু’জনেই এবার ভোটের ময়দানে মুখোমুখি ৷ সৌমিত্রর বিরুদ্ধে তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী করেছে সুজাতা মণ্ডলকে ৷ সম্ভবত সারা দেশে একমাত্র কেন্দ্র বিষ্ণুপুর, যেখানে প্রাক্তন স্বামী-স্ত্রী সাংসদ হওয়ার লড়াইয়ে নেমেছেন ৷
পাঁচ বছর আগে সৌমিত্রর জয়ে সুজাতার কৃতিত্বের কথা সাধারণ মানুষও বলছেন ৷ স্থানীয় বাসিন্দা সজলকুমার দে বলেন, ‘‘সৌমিত্র খাঁকে সুজাতা মণ্ডলের জন্য ভোট দিয়েছিলাম ৷ কিন্তু কাজ হয়নি ৷ তাই এবার সুজাতাদিদির দিকেই পাল্লাভারী ৷’’ তাই বিষ্ণুপুর জুড়ে এখন একটাই প্রশ্ন, সুজাতা কি পারবেন তাঁর প্রাক্তন স্বামী সৌমিত্র খাঁকে প্রাক্তন সাংসদ করতে ? নাকি সিপিএমের অজিতকুমার সাহা ও সন্ধ্যা বাউড়ির মতো তিনিও বিষ্ণুপুরে জয়ের হ্যাটট্রিক করবেন !
আরও পড়ুন: