মালদা, 3 জুন: দু’দিন আগেই আলিপুরের বার্তা ধরে মাঝিয়ান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়ে দিয়েছে, রেমালের হাত ধরে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু উত্তরবঙ্গের সঙ্গে গৌড়বঙ্গের তিন জেলাতেও ঢুকে পড়েছে ৷ অর্থাৎ কাগজে কলমে মালদা জেলায় বর্ষা শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ সেই মৌসুমি বায়ুর হাত ধরেই সম্ভবত জেলায় শুরু হয়ে গিয়েছে গঙ্গার আগ্রাসন ৷ ইতিমধ্যে রতুয়া 1 নম্বর ব্লকে শুরু হয়ে গিয়েছে নদীর ভাঙন ৷ তবে ভোট গণনায় ব্যস্ত প্রশাসনিক কর্তারা এখনও ভাঙন পরিদর্শনে যাননি ৷ ঠিক একই কারণে এই সময় মানুষের আতঙ্ক নিয়ে ভাবার সময় নেই নেতা-নেত্রীদেরও ৷
কয়েক বছর ধরেই গঙ্গার গ্রাসে পড়ছে রতুয়া 1 নম্বর ব্লকের মহানন্দটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু গ্রাম ৷ এ বার বর্ষার বৃষ্টি শুরু না-হতেই ভাঙন শুরু হয়েছে কান্তটোলা গ্রামে ৷ নদীর এক ধাক্কায় তলিয়ে গিয়েছে 10 কাঠা পরিমাণ জমি ৷ এলাকাবাসীর অভিযোগ, গত বর্ষার পর আর ভাঙন রোধের কাজ করেনি প্রশাসন ৷ এমনকি এলাকাতেও যাননি প্রশাসনের আধিকারিকরা ৷ ভোটের আগে নেতা-নেত্রীরা আশ্বাস দিয়েছিলেন, যে কোনও মূল্যে ভাঙন রোধের ব্যবস্থা করবেন ৷ ভোট বাজারে তাঁদেরও আর দেখা যায় না ৷ গত বছরের মতো ভাঙন শুরু হলে এ বার দু’চারটি গ্রামই নিশ্চিহ্ন হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে ৷
শ্রীকান্তটোলা গ্রামের রাজকুমার মণ্ডল বলছেন, “বিহার, ঝাড়খণ্ড আর বাংলা দিয়ে গঙ্গা এখানে বইছে ৷ গত বছর বন্যার সময় শেষবার ভাঙন হয়েছিল ৷ তারপর থেকে গঙ্গা আর পাড় কাটেনি ৷ শুধু পশ্চিমা বাতাস বইলে সামান্য মাটি ঝরে পড়ে ৷ কিন্তু গতকাল রাতে হঠাৎ মাটির চাপ জলে পড়ার শব্দ পাই ৷ নদীর পাড়ে এসে দেখি, গঙ্গার ভাঙন শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ প্রায় 10 কাঠা মাটি চোখের সামনে তলিয়ে গেল ৷ বছরের এই সময় ভাঙনের কথা ভাবতেই পারছি না ৷ গতবার বন্যার সময় শেষবার পাড়ে বালির বস্তা পড়েছিল ৷ তারপর আর কোনও কাজ হয়নি ৷ সরকারি দফতর থেকে বলছে কাজ হবে ৷ কিন্তু কবে, জানি না ৷ গঙ্গার ভাঙনে ইতিমধ্যে জঞ্জালিটোলা গ্রাম নিশ্চিহ্ন ৷ গতবার 15-20টা বাড়ি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে ৷ এ বার যদি গতবারের মতো ভাঙন হয় আর ভাঙন রোধের কাজ না হয়, তবে কান্তটোলা, শ্রীকান্তটোলা, মুলিরামটোলা, আমিরচাঁদটোলা, পটলডাঙা গ্রাম এবারই গঙ্গায় চলে যাবে ৷ এখন নেতাদেরও আর দেখা যায় না ৷ অথচ ভোটের আগে তাঁরা অনেক বড় বড় কথা বলেছিলেন ৷”
একই বক্তব্য শ্রীকান্তটোলা গ্রামের মতিলাল মণ্ডলের ৷ তিনি জানান, “শুখা মরশুম চলে গেল ৷ নদীতে এক বস্তা মাটি ফেলা হয়নি ৷ গতবার বন্যার সময় ভাটিতে কিছু বস্তা ফেলা হয়েছিল ৷ তারপর সবাই চুপচাপ ৷ শুধুমাত্র হচ্ছে হবে ছাড়া আর কিছু শোনা যায়নি ৷ গতকাল ভোর চারটে থেকে আড়াই ঘণ্টার মধ্যে ইলেকট্রিক পোল-সহ 10 কাঠা মাটি চলে গিয়েছে ৷ যদি দ্রুত ভাঙন রোধের কাজ না হয়, তাহলে মাসখানেকের মধ্যে 4-5টি গ্রাম নেই হয়ে যাবে ৷ আর গতবারের মতো ভাঙন হলে তো দু’দিনের মধ্যেই সব উজাড় হয়ে যাবে ৷ সবাইকে এখান থেকে বিদায় নিতে হবে ৷ বিহারে কিছুটা কাজ হলেও এখানে কাজ হচ্ছে না ৷”
শ্রীকান্তটোলা গ্রামের সুবোধ মণ্ডলের বক্তব্য, “গতকাল রাতে খুব বাতাস ছিল ৷ আজ ভোর থেকে ভাঙন শুরু হয়ে যায় ৷ এখানে ভাঙন রোধের কোনও কাজ হচ্ছে না ৷ বিহারের কিছু জায়গায় সেই কাজ হচ্ছে ৷ এতে আমাদের এলাকায় সমস্যা আরও বাড়বে ৷ নদীর জল এখানেই মাটি কাটতে শুরু করবে ৷ এবার মনে হয় বাড়িঘর বাঁচবে না ৷ ছবিটোলা আর খাকচাবোনার মাঝামাঝি জায়গায় গঙ্গা আর ফুলহরের ব্যবধান এখন 500 মিটারে এসে দাঁড়িয়েছে ৷ দুই নদী মিশে গেলে গোটা রতুয়াই বিপন্ন হয়ে পড়বে ৷ এবারই দুই নদীর মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ৷ আমরা চাই, এই এলাকার 50 হাজার মানুষকে বাঁচাতে দুই সরকারই কোনও ব্যবস্থা নিক ৷ ভাঙনের জন্য অনেকে ভিনরাজ্যে চলে গিয়েছে ৷ এখন তারা শ্রমিক ৷ আমরা এখানে কোনও আশার আলো দেখতে পাচ্ছি না ৷”