বসিরহাট, 8 ডিসেম্বর: নবান্নের নির্দেশ আগেই ছিল ৷ সেই মতো আবাস যোজনা প্রকল্পে বাড়ি তৈরি নিয়ে দুর্নীতি রুখতে কড়া পদক্ষেপ করা শুরু করল বসিরহাট পুরসভা ৷ আবাসের টাকা নয়ছয় করার অভিযোগে এবার চার উপভোক্তার বিরুদ্ধে পুর কর্তৃপক্ষ থানায় এফআইআর করল ৷
সম্প্রতি নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আবাস যোজনার বাড়িতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপের নির্দেশ দিয়েছেন ৷ সব জেলার জেলাশাসকদের নিয়ে সেই বৈঠক করেছিলেন তিনি ৷ তার পরেও নবান্ন থেকে রাজ্যের সব পুরসভা ও পঞ্চায়েতকে দুর্নীতি প্রতিরোধে বেশকিছু নির্দেশ পাঠানো হয়েছে ৷ তাতে বলা হয়েছে, আবাসের টাকা নিয়ে বাড়ি তৈরি না-করলে পুরসভা ও পঞ্চায়েত যেন উপভোক্তার বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করে ৷ প্রয়োজন হলে থানায় এফআইআর করার নির্দেশও দিয়েছে রাজ্য সরকার ৷
সরকারের সেই নির্দেশ পাওয়ার পর বিভিন্ন পুরসভা আবাস যোজনা দুর্নীতি নিয়ে কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটতে শুরু করেছে ৷ উত্তর 24 পরগনার বসিরহাট পুরসভা 'দুর্নীতির বিড়াল' প্রথম রাতেই মারতে তৎপর হয়ে উঠেছে ৷ 2018-19 অর্থবর্ষে শতাধিক উপভোক্তার নামে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা বরাদ্দ হয়েছিল ৷ তারপর কয়েকটি ওয়ার্ড থেকে বেশ কয়েকজন উপভোক্তার নামে ওই টাকা নিয়ে বাড়ি না-করার অভিযোগ ওঠে ৷ পুরসভার আধিকারিকরা সেই অভিযোগের তদন্তেও নামেন ৷
তাতে দেখা গিয়েছে, 5 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইমরান সরদার, 9 নম্বর ওয়ার্ডের সফিকুল গাজি, 14 নম্বর ওয়ার্ডের অঞ্জনা সেন এবং 18 নম্বর ওয়ার্ডের রবীন বিশ্বাস আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির টাকা পেয়েছেন ৷ কিন্তু, তারপরেও তাঁরা বাড়ি তৈরি করেননি বলে অভিযোগ ৷ এরপরই আসরে নামে বসিরহাট পুরসভা ৷ আবাস যোজনার বরাদ্দ টাকা পেয়েও, বাড়ি তৈরি না-করার অভিযোগে পুর কর্তৃপক্ষ ওই চার উপভোক্তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷
এ নিয়ে পুরপ্রধান অদিতি মিত্র রায়চৌধুরী নির্দিষ্ট তালিকা ধরে জিআই ট্যাগের নম্বর দিয়ে বসিরহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ এই বিষয়ে পুরপ্রধান বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরেই আবাস যোজনার টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে ৷ তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকার এই প্রকল্পের টাকা দিচ্ছে, গরিব মানুষ যাতে আবাস যোজনার ঘর তৈরি করতে পারে ৷ কিন্তু, কিছু মানুষ টাকা পেয়েও ঘর তৈরি করছেন না ৷ আবার কেউ সেই টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গিয়েছেন ৷ তাঁদের কোনও খোঁজ মিলছে না ৷ সরকারি টাকা নিয়ে ঘর তৈরি না-করা একটা অপরাধ ৷ সরকারি টাকা আত্মসাতের অধিকার কারও নেই ৷ তাই, আমরা চার উপভোক্তার বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করতে বাধ্য হয়েছি ৷"
এদিকে, যে চার উপভোক্তা বিরুদ্ধে বসিরহাট থানায় এফআইআর করেছে পুর কর্তৃপক্ষ, তাঁদের একজন রবীন বিশ্বাস ৷ তিনি বলেন, "টাকা নিয়ে আবাস যোজনার ঘর তৈরি না-করার অভিযোগ ঠিক নয় ৷ অসুস্থতার কারণে ঘরের বাকি অংশের কাজে হাত দেওয়া সম্ভব হয়নি ৷ দু-একদিনের মধ্যে ঘরের বাকি অংশের কাজ শুরু করব ৷ আমি কোনও দোষ করিনি ৷ তাই, পালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না ৷" অন্যদিকে, পুর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ পেয়ে ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে বসিরহাট থানার পুলিশ ৷ সূত্রের খবর, অভিযুক্ত উপভোক্তাদের জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হতে পারে ৷