বারাসত, 19 জুলাই: মুখ্যমন্ত্রীর স্পষ্ট নির্দেশ রয়েছে, কোথাও যেন জলাভূমি কিংবা পুকুর ভরাট করে অবৈধ নির্মাণ না হয় । কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই নির্দেশের পরেও নজরদারি কোথায় ? প্রশ্নটা উঠছে কারণ মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে পুকুর ভরাট কিন্তু চলছেই উত্তর 24 পরগনার সদর শহর বারাসতে । শুধু পুকুর ভরাটই নয় ! সেখানে কংক্রিটের পিলার দিয়ে অবৈধ নির্মাণও হয়েছে বলে অভিযোগ । যা ঘিরে সরগরম হয়ে উঠেছে বারাসত ।
আগেও উত্তর 24 পরগনার এই সদর শহরে পুকুর ভরাটের ভুরি ভুরি অভিযোগ সামনে এসেছিল । অভিযোগ, কোথাও অসাধু প্রোমোটার নিজের স্বার্থে পুকুর ভরাট করেছেন । আবার কোথাও জলাভূমি ভরাট করে অবৈধ নির্মাণ করেছেন জমি মালিকরা । কিছু ক্ষেত্রে প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়েছে ঠিকই । কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি বদলায়নি এতটুকু । বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী যেখানে অবৈধ দখলদার, জলাশয় ভরাট ঠেকাতে কড়া বার্তা দিয়েছেন, সেখানে পুকুর ভরাট রুখতে প্রশাসনের নজরদারি প্রায় নেই বলেই অভিযোগ ৷
যার ফলে একশ্রেণীর অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে বারাসত শহরে । এই নিয়ে পুর-প্রশাসনের ভূমিকা যখন প্রশ্নের মুখে, তখন আবার শাসকদলের সঙ্গে এই অসাধু চক্রের যোগের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিরোধী শিবির । যদিও, তা অস্বীকার করেছে শাসক শিবির । আর এতেই রাজনীতির পারদ চড়তে শুরু করেছে উত্তর 24 পরগনার জেলাসদর বারাসতে ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসতে যে পুকুরের একাংশ ভরাট করে অবৈধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে, সেটাকে ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরের রেকর্ডে শ্রেণি পুকুর হিসেবেই দেখানো রয়েছে । জমির মালিকের নাম বিনয় বিশ্বাস । এলাকাটি বারাসত পুরসভার চার নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত । মৌজা অনন্তপুর । সেই মৌজার জমির দাগ নম্বর 15 এবং খতিয়ান নম্বর 1242 । জমির মোট পরিমাণ 0.06 একর । এর মধ্যে 0.5000 অংশে পুকুর রয়েছে । সেটি বুজিয়েই ওই ব্যক্তি কংক্রিটের পিলারের উপর অবৈধ নির্মাণ তৈরি করছেন বলে অভিযোগ ।
ইতিমধ্যে সেই কাজ অনেকটাই এগিয়ে গিয়েছে । কিন্তু, প্রশ্ন হল মুখ্যমন্ত্রীর কড়া বার্তার পরেও কিভাবে তিনি পুকুর বুজিয়ে এই অবৈধ নির্মাণ তৈরি করতে পারলেন ! পুর-প্রশাসনই বা কী করছিল ? নাকি সবকিছু জেনেও চোখ বুজে ছিল প্রশাসনের একাংশ ? এমনই সব প্রশ্ন উঁকি মারতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে ।
যদিও স্থানীয় কাউন্সিলর শিল্পী দাস দাবি করেছেন, ঘটনাটি জানা মাত্রই তিনি সেখানে গিয়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ করে দিয়ে এসেছেন । পাশাপাশি চেয়ারম্যানকেও বিষয়টি জানিয়েছেন । তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে কেউ যদি এই ধরনের ঘটনা ঘটায়, আমরা তা বরদাস্ত করব না । এটুকু বলতে পারি ।"
পুরসভা সূত্রে খবর, চেয়ারম্যানের নির্দেশে পুর-কর্তৃপক্ষ খতিয়ে দেখার পর আপাতত এই অবৈধ নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে । সেই সঙ্গে জমির মালিকের কাছেও নোটিশ পাঠানো হয়েছে । তাঁর কাছে এ সংক্রান্ত কৈফিয়ত চাওয়া হয়েছে ৷
বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই ঘটনায় কাউন্সিলরই তো সবার প্রথমে ছবি পাঠিয়ে আমাকে অবগত করেছেন । সেই মতো পদক্ষেপও করা হয়েছে । ওই জমি মালিকের বিরুদ্ধে এফআইআর করছি আমরা । ভরাট করতে যে সাদা বালি পুকুরে ফেলা হয়েছে, তা আমরা তুলে দিয়ে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেব । এটাই আমাদের শপথ ।"
এই বিষয়ে প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "দীর্ঘদিন ধরেই ওখানে একটি পুকুর রয়েছে । সেটা কারোরই অজানা নয় । অথচ পুকুর বুজিয়ে, গাছ কেটে আদতে আমরা প্রকৃতিরই সর্বনাশ করছি । এটা তো শুধু চার নম্বর ওয়ার্ডেই সীমাবদ্ধ নেই । বারাসত পুরসভার সর্বত্রই এই জিনিস চলছে চেয়ারম্যানের অবগতিতে । আমরা চাই পুকুর ভরাট রুখতে প্রশাসন উদ্যোগী হোক । নইলে এই ধরনের ঘটনা আরও বাড়বে ।"
অন্যদিকে, এই ইস্যুতে শাসকদলকে নিশানা করেছে গেরুয়া শিবির । এই নিয়ে বিজেপির রাজ্য কমিটি সদস্য তাপস মিত্র বলেন, "পুকুর ভরাট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বার্তা দিচ্ছেন ঠিকই । কিন্তু তাঁর সেই বার্তা শুনছে কোথায় প্রশাসনের লোকজন ! আসলে এই সমস্ত পুকুর ভরাট, অবৈধ দখলদারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন শাসকদলের নেতা-কর্মীরাই । এখান থেকে মোটা অঙ্কের কাটমানি পাচ্ছেন তাঁরা । তাই তো পুকুর ভরাট কিংবা সরকারি জমি দখল করে অবৈধ নির্মাণ চলছে বারাসতে ।"