ETV Bharat / state

নেই রাজা, না-আছে রাজত্ব; 515 বছরের পুজোয় এখনও হয় 'নরবলি' - Durga Puja 2024

Baikunthpur Rajbari's Durga Puja: রাজ আমলের সেই রাজাও নেই । রাজপাটও নেই । কিন্তু পাঁচশো বছরেরও আগের সেই সমস্ত রীতি মেনে এখনও হয়ে চলেছে জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজো। বসু পরিবারের এবারের দুর্গাপুজো 515তম বর্ষে পদার্পণ করল। পাঁচশো বছর পেরিয়েও এই পুজোয় 'নরবলি'র প্রথা কীভাবে চালু রেখেছেন পরিবারের সদস্যরা ? জেনে নিন ইটিভি ভারতের এই বিশেষ প্রতিবেদনে...

Baikunthpur Rajbari's Durga Puja
প্রাচীন পুজোকে ঘিরে আজও শহরবাসীর আবগ জড়িয়ে রয়েছে (ইটিভ ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Sep 20, 2024, 1:45 PM IST

জলপাইগুড়ি, 20 সেপ্টেম্বর: 'বাজল তোমার আলোর বেনু' ৷ মা আসছেন, আলোয় ভরে উঠেছে দশদিশা। শরৎ কালের সোনালী রোদ, নীল আকাশ, কাশ ফুল, শিউলি ফুল জানান দিচ্ছে মা আসছেন। বাংলার শহরে-গ্রামে, নগরে-প্রান্তরে আরজি কর আবহে উৎসবের রেশ ধরা না-পড়লেও, পুজোর আর দেরি নেই। জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির গরিমা দুর্গাপুজোর প্রাচীনত্ব ও ঐতিহ্যের দিক থেকে কোনও অংশে কম নয়। 515 বছরে পা-দিল এই পুজো। 515 বছরের দুর্গাপুজো নিয়ে উৎসাহ তুঙ্গে। আগে নরবলি হলেও এখন নরবলির বদলে চালের গুড়ো দিয়ে নর বানিয়ে বলি দেওয়া হয়।

বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি (ইটিভি ভারত)

মায়ের রূপ-

তপ্ত কাঞ্চন বর্ণা, রাজকীয় সাজ, খোলা চুল। টানা টানা চোখে মমতাময়ী মা। পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির কনক দুর্গার রূপ দেখতে এরাজ্যের পাশাপাশি, বাংলাদেশ থেকেও আসেন অনেকে। শোনা যায়, 515 বছর আগে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন রাজপরিবারের দুই সদস্য শিষ্য সিংহ ও বিশ্ব সিংহ। কথিত আছে, দেবী দুর্গার আশীর্বাদে সেই বছরই কোচবিহারের রাজা হন বিশ্ব সিংহ, আর জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুরে এসে রাজত্ব শুরু করেন শিষ্য সিংহ।

Baikunthpur Rajbari's Durga Puja
রাজপরিবারের দুর্গাপুজো 515তম বর্ষে পদার্পণ করল (নিজস্ব ছবি)

পুজোর বিশেষত্ব-

  • রাজবাড়ির সোনার দুর্গা প্রতিমাটি নিত্যপুজো হলেও প্রতিপদ থেকে কালী মন্দিরে পুজো হয়। এরপর সপ্তমীর দিন থেকে সোনার দুর্গা মায়ের মন্দিরের দুর্গা ঠাকুরের সঙ্গেই পূজিত হন। প্রতীকী নরবলির সঙ্গে এখনও পায়রা, পাঁঠাবলি দেওয়া হয় মা উপলক্ষে। রাজবাড়ির দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে পুজো মণ্ডপে ভিড় জমান দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির পাঁচ শতাধিক বছরের প্রাচীন পুজোকে ঘিরে আজও শহরবাসীর আবগ জড়িয়ে রয়েছে।
    Baikunthpur Rajbari's Durga Puja
    পুজো মণ্ডপে ভিড় জমান দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা (নিজস্ব ছবি)

রাজ পরিবার সম্পর্কে জানা গেল-

  • রাজপরিবারের সদস্য প্রণত বসু বলেন, "কথিত রয়েছে 1510 সালে বিশু সিংহ ও শিশু সিংহ রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়। পুরানো রীতি মেনেই পুজোর আয়োজন করা হয়। রায়কত বংশের রাজধানী সুবর্ণপুরে ছিল। সেখানেই পুজো চালু হয়। পরে এই বৈকুণ্ঠপুর রাজ্যের রাজধানী তিস্তা নদীর পাড়, জলপাইগুড়িতে স্থানান্তরিত হয়। তারপর থেকেই জলপাইগুড়িতে রাজবাড়ি আজও রয়েছে। রাজপাট না-থাকলেও মায়ের পুজোর আয়োজন মা নিজেই করে নেন। কোনও সমস্যা হয় না।
  • জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজপরিবারের পুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, "কালিকাপুরাণ মতেই পুজো হয়ে থাকে। চাল দিয়ে মানুষের মতো মণ্ড বানিয়ে কুশ দিয়ে বলি দেওয়া হয়। রাজবাড়ির প্রতিমা তপ্ত কাঞ্চন বর্ণা। মা দুর্গাকে প্রতিদিনই আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। কোনওদিন ইলিশ মাছ, চিতল মাছ, ইলিশের মাথা দিয়ে কচু শাক, বিজয় দশমীর দিন পুঁটি মাছ, পান্তা ভাত দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য নান্দোৎসব ও কাদাখেলার মধ্যে দিয়েই শুরু হয়ে যায় জলপাইগুড়ির রাজ পরিবারের দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। ওইদিন থেকেই 515তম বর্ষের জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির কাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়। কাদা খেলার পর সেই সেখানকার মাটি দিয়েই দুর্গা মূর্তি বানানো শুরু হয়ে যায় ।

জলপাইগুড়ি, 20 সেপ্টেম্বর: 'বাজল তোমার আলোর বেনু' ৷ মা আসছেন, আলোয় ভরে উঠেছে দশদিশা। শরৎ কালের সোনালী রোদ, নীল আকাশ, কাশ ফুল, শিউলি ফুল জানান দিচ্ছে মা আসছেন। বাংলার শহরে-গ্রামে, নগরে-প্রান্তরে আরজি কর আবহে উৎসবের রেশ ধরা না-পড়লেও, পুজোর আর দেরি নেই। জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির গরিমা দুর্গাপুজোর প্রাচীনত্ব ও ঐতিহ্যের দিক থেকে কোনও অংশে কম নয়। 515 বছরে পা-দিল এই পুজো। 515 বছরের দুর্গাপুজো নিয়ে উৎসাহ তুঙ্গে। আগে নরবলি হলেও এখন নরবলির বদলে চালের গুড়ো দিয়ে নর বানিয়ে বলি দেওয়া হয়।

বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি (ইটিভি ভারত)

মায়ের রূপ-

তপ্ত কাঞ্চন বর্ণা, রাজকীয় সাজ, খোলা চুল। টানা টানা চোখে মমতাময়ী মা। পাঁচ শতাব্দী প্রাচীন জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির কনক দুর্গার রূপ দেখতে এরাজ্যের পাশাপাশি, বাংলাদেশ থেকেও আসেন অনেকে। শোনা যায়, 515 বছর আগে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন রাজপরিবারের দুই সদস্য শিষ্য সিংহ ও বিশ্ব সিংহ। কথিত আছে, দেবী দুর্গার আশীর্বাদে সেই বছরই কোচবিহারের রাজা হন বিশ্ব সিংহ, আর জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুরে এসে রাজত্ব শুরু করেন শিষ্য সিংহ।

Baikunthpur Rajbari's Durga Puja
রাজপরিবারের দুর্গাপুজো 515তম বর্ষে পদার্পণ করল (নিজস্ব ছবি)

পুজোর বিশেষত্ব-

  • রাজবাড়ির সোনার দুর্গা প্রতিমাটি নিত্যপুজো হলেও প্রতিপদ থেকে কালী মন্দিরে পুজো হয়। এরপর সপ্তমীর দিন থেকে সোনার দুর্গা মায়ের মন্দিরের দুর্গা ঠাকুরের সঙ্গেই পূজিত হন। প্রতীকী নরবলির সঙ্গে এখনও পায়রা, পাঁঠাবলি দেওয়া হয় মা উপলক্ষে। রাজবাড়ির দুর্গাপুজোকে কেন্দ্র করে পুজো মণ্ডপে ভিড় জমান দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা। জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির পাঁচ শতাধিক বছরের প্রাচীন পুজোকে ঘিরে আজও শহরবাসীর আবগ জড়িয়ে রয়েছে।
    Baikunthpur Rajbari's Durga Puja
    পুজো মণ্ডপে ভিড় জমান দূর-দূরান্ত থেকে আসা দর্শনার্থীরা (নিজস্ব ছবি)

রাজ পরিবার সম্পর্কে জানা গেল-

  • রাজপরিবারের সদস্য প্রণত বসু বলেন, "কথিত রয়েছে 1510 সালে বিশু সিংহ ও শিশু সিংহ রাজবাড়ির দুর্গাপুজো শুরু হয়। পুরানো রীতি মেনেই পুজোর আয়োজন করা হয়। রায়কত বংশের রাজধানী সুবর্ণপুরে ছিল। সেখানেই পুজো চালু হয়। পরে এই বৈকুণ্ঠপুর রাজ্যের রাজধানী তিস্তা নদীর পাড়, জলপাইগুড়িতে স্থানান্তরিত হয়। তারপর থেকেই জলপাইগুড়িতে রাজবাড়ি আজও রয়েছে। রাজপাট না-থাকলেও মায়ের পুজোর আয়োজন মা নিজেই করে নেন। কোনও সমস্যা হয় না।
  • জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজপরিবারের পুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, "কালিকাপুরাণ মতেই পুজো হয়ে থাকে। চাল দিয়ে মানুষের মতো মণ্ড বানিয়ে কুশ দিয়ে বলি দেওয়া হয়। রাজবাড়ির প্রতিমা তপ্ত কাঞ্চন বর্ণা। মা দুর্গাকে প্রতিদিনই আমিষ ভোগ দেওয়া হয়। কোনওদিন ইলিশ মাছ, চিতল মাছ, ইলিশের মাথা দিয়ে কচু শাক, বিজয় দশমীর দিন পুঁটি মাছ, পান্তা ভাত দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য নান্দোৎসব ও কাদাখেলার মধ্যে দিয়েই শুরু হয়ে যায় জলপাইগুড়ির রাজ পরিবারের দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। ওইদিন থেকেই 515তম বর্ষের জলপাইগুড়ি বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির কাঠামো তৈরির কাজ শুরু হয়। কাদা খেলার পর সেই সেখানকার মাটি দিয়েই দুর্গা মূর্তি বানানো শুরু হয়ে যায় ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.