শান্তিপুর, 3 সেপ্টেম্বর: কয়েকদিন পরেই উমা আসবে বাপের বাড়ি ৷ আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠবে আলোক মঞ্জীর ৷ কুমোর পাড়ায় তাই এখন চরম ব্যস্ততা ৷ তবে এবার পটুয়া পাড়ার অন্তরে ঢুঁ মেরে দেখা গেল অন্য ছবি ৷ বড়'র থেকেও ছোট দুর্গা প্রতিমার রমরমা ৷ শাড়ির পাশাপাশি নদিয়ার শান্তিপুর মৃৎশিল্পের জন্যও বিখ্যাত । সেখানেই বড় দুর্গার থেকেও ছোট প্রতিমা তৈরিতে বেশি মজেছেন মৃৎশিল্পীরা ৷
শান্তিপুর থেকে এই ছোট দুর্গা পরিবার-সহ পাড়ি দিচ্ছেন কলকাতার কুমোরটুলিতে ৷ সেখান থেকে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা তো বটে, বিদেশেও যাবে প্রতিমাগুলি ৷ শান্তিপুরের ছোট দুর্গা প্রতিমার উচ্চতাও দেখার মতো । এক ফুট থেকে শুরু হচ্ছে প্রতিমার উচ্চতা । সর্বাধিক 4 ফুট পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে এই ছোট দুর্গাগুলি । এখন কাগজের পেটিতে খড় দিয়ে বিশেষভাবে প্যাকেট করে পাঠানো হচ্ছে এই ছোট ছোট দুর্গা প্রতিমাগুলি । সঙ্গে যাচ্ছেন উমার সন্তান লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক ও গণেশ ।
অনেকটা বড় ঠাকুরের মতোই চার ফুটের দুর্গা তৈরি করা হয় শান্তিপুরে । প্রথমে বাঁশের কাঠামো করা হয় । এরপর বাসের সঙ্গে বিচুলি বাঁধা হয় । তার উপর মাটির প্রলেপ দেওয়া হয় । তারপর সেই মাটি শুকিয়ে গেলে রং করা হয় । শেষে বস্ত্র পরানো হয় প্রতিমাকে । কিন্তু দুই ফুটের দুর্গা প্রতিমাগুলি কখনও ছাঁচের মাধ্যমে, আবার কখনও হাত দিয়েই তৈরি করা হয় । চার ফুটের দুর্গা প্রতিমা পাইকারি বাজারে কোনওটা বিকোয় 7 হাজার, আবার কোনওটা 8 হাজার টাকায় বিক্রি হয় । সেই তুলনায় দুই ফুটের দুর্গা প্রতিমার দাম অনেকটা কম । পাইকারি বাজারে 3 হাজার টাকায় বিক্রি হয় দুই ফুটের দুর্গা প্রতিমা ।
এই বিষয়ে শান্তিপুরের ছোট দুর্গা প্রস্তুতকারী মৃৎশিল্পী গৌর পাল জানাচ্ছেন, তিনি প্রায় 30 বছর থেকে ছোট দুর্গা প্রতিমা তৈরি করছেন । এই প্রতিমা তৈরির বরাত আসে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে । এই প্রতিমার চাহিদা ব্যাপক কলকাতায় । দামেও কম বলে গৃহস্থ পরিবারের সদস্যরাও বেশি পছন্দ করেন এই ছোট দুর্গা প্রতিমা । তিনমাস আগে থেকে এই প্রতিমা তৈরি করছেন মৃৎশিল্পী গৌর পাল । তবে কোভিড অতিমারির পর এই প্রতিমার চাহিদা বেড়েছে । এখন এই প্রতিমা তৈরি করে অনেকটাই স্বাছন্দ্য ফিরেছে মৃৎশিল্পীর পরিবারে ৷ এমনটাই দাবি করলেন গৌর পাল ।
তবে সরকারের কাছে বিশেষ আবেদন জানিয়েছেন তিনি । গৌর পাল বলেন, "রাজ্য সরকার যদি একটু সাহায্য করে তাহলে শান্তিপুরের এই মৃৎশিল্পের আরও উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ।" প্রায় 30 বছর ধরে প্রতিমা তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকার পরেও ওঁনার গলায় শোনা গেল আফসোস ৷ তাঁর কথায়, "এখন নতুন করে মৃৎশিল্পের কাজে ঝুঁকছে না নব প্রজন্ম ৷ কারণ অতি ধৈর্যের কাজ এটা । এক একটি প্রতিমা তৈরি করা যেমন সময় সাপেক্ষ, তেমনই নিপুণ ক্ষুদ্র কাজ করতে হয় ৷ সেই কারণে এই কাজের প্রতি আর নতুন করে ঝোঁক নেই ।"