গঙ্গাসাগর, 11 জানুয়ারি: গঙ্গাসাগরে অস্থায়ী স্নানঘাট তৈরির জন্য অবৈধভাবে খালের বাঁধের মাটি কাটার অভিযোগ ঠিকাদার সংস্থার বিরুদ্ধে ৷ পাশাপাশি, খালের বাঁধে থাকা ম্যানগ্রোভ নষ্ট করার অভিযোগও করেছেন গ্রামবাসী ৷ ঘটনায় জেলা প্রশাসনের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন গ্রামবাসী ৷
উল্লেখ্য, গঙ্গাসাগর মেলার জন্য অস্থায়ী স্নানঘাট তৈরি করতে একটি ঠিকাদার সংস্থাকে বরাত দিয়েছে জেলা প্রশাসন ৷ সেই কাজের জন্য জেলাশাসকের দফতরের অনুমতিতেই গঙ্গাসাগরের মোহানায় অবস্থিত বেগুয়াখালির খালের পাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে গিয়েছে ঠিকাদার সংস্থা ৷ কিন্তু গ্রামবাসীদের অভিযোগ, খালের মাটি কাটার ফলে বর্ষাকাল বা বড় কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে প্লাবিত হতে পারে বেগুয়াখালি ৷ তারই প্রতিবাদে খালের বাঁধের মাটি কাটতে বাধা দেয় গ্রামবাসী ৷
কিন্তু, ঘটনাস্থলে থাকা প্রশাসনিক আধিকারিকরা জানান, জেলাশাসকের অনুমতিতেই তাঁরা মাটি কাটছেন ৷ এ নিয়ে কোনও অভিযোগ থাকলে, তা জেলাশাসককে জানাতে ৷ এমনকি স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যও ঘটনাস্থলে আসেন ৷ তাঁকেও একই কথা জানান উপস্থিত আধিকারিকরা ৷
এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ঊষারানি ভিক বলেন, "প্রতিবছর কোটালে বেগুয়াখালি প্লাবিত হয় ৷ সাগরের নোনা জল ঢুকে যায় গ্রামে ৷ প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্যানগ্রোভ লাগানো হয়েছিল ৷ কিন্তু, গঙ্গাসাগর মেলার সময় অস্থায়ী স্নানঘাট তৈরি করতে ঠিকাদার সংস্থার লোকেরা এসে মাটি কেটে নিয়ে গিয়েছে ৷ প্রশাসনকে জানিয়ে কোনও লাভ হয়নি ৷ প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং কোটাল এলে সমুদ্রের জল ঢুকে যাবে ৷"
নারায়ণ মণ্ডল বলেন, "ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা প্রশাসনের উপস্থিতিতে খালপাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে চলে গিয়েছে ৷ প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি ৷ পঞ্চায়েত সদস্য এসেছিলেন ৷ তিনিও বাধা দেন ৷ কিন্তু, আমাদের বাধা মানতে চায়নি ৷ বলেছে, জেলাশাসকের সঙ্গে কথা বলতে ৷"
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ভগীরথ মণ্ডল বলেন, "এটা সত্যই খালপাড় থেকে মাটি কেটে নিয়ে গিয়েছে ঠিকাদার সংস্থার কর্মীরা ৷ গঙ্গাসাগর মেলায় অস্থায়ী স্নানঘাট তৈরির জন্য ৷ আমি স্থানীয় প্রশাসনকে বারবার জানিয়েছিলাম, কোনও লাভ হয়নি ৷ বাঁধের মাটি কাটার সময় ম্যানগ্রোভ নষ্ট হয়েছে ৷ কিন্তু, অধিকাংশ ম্যানগ্রোভ রয়েছে ৷"
তবে, এই ঘটনার পিছনে গঙ্গাসাগরের তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধেই সব অভিযোগ করেছে বিজেপি ৷ বিজেপির মথুরাপুর সাংগঠনিক জেলার নেতা অরুণাভ দাস অভিযোগ করেছেন, "মুখ্য়মন্ত্রী নিজে বলছেন, বেআইনিভাবে মাটি কাটা যাবে না ৷ কিন্তু, তাঁর দলের নেতারা সেই কথা শোনেন না ৷ গঙ্গাসাগর মেলায় অস্থায়ী স্নানঘাট তৈরির জন্য বেগুয়াখালির খাল থেকে মাটি কেটে নিয়ে গিয়েছে ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘কোনও প্রাকৃতিক বিপর্যয় এলে এখানকার মানুষগুলোর বাড়িতে সাগরের নোনাজল ঢুকে যায় ৷ আদতে তৃণমূলের নেতারা এভাবে বাঁধের মাটি কাটবে ৷ আর বর্ষাকালে সরকারের থেকে আবার বাঁধ তৈরির জন্য টাকা দেওয়া হবে ৷ তখন এরা সব টাকা নিজেদের পকেটে ঢোকাবে ৷"
সুন্দরবন পুলিশ জেলার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অবৈধভাবে মাটি কাটার অভিযোগে ঠিকাদার সংস্থার বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ এ নিয়ে দক্ষিণ 24 পরগনার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তাকে ফোন ধরা হয় ইটিভি ভারতের তরফে ৷ তবে, তিনি এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷ পরবর্তী সময়ে সুন্দরবন উন্নয়ন পরিষদের মন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরা বলেন, "আমি বিষয়টা নিয়ে খোঁজ নিয়ে দেখছি ৷ তারপরেই কিছু বলতে পারব ৷"