মেদিনীপুর, 12 জুলাই: ভোটের পরই অবৈধ জমি দখল এবং হকার উচ্ছেদ নিয়ে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কড়া বার্তা দিয়েছেন জমি মাফিয়া ও অবৈধ প্রোমোটারদের ৷ এই আবহে মেদিনীপুর সদরে অন্যের জায়গা নিজের নামে করে রাতারাতি বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ উঠল শাসক দলের এক প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে । একাধিক প্রশাসনিক দফতর ও নবান্নের দুয়ারে গিয়েও এখন সমস্যার সুরাহা হয়নি বলে অভিযোগ জমিহারা ওই চাষি ৷
মেদিনীপুর কোতোয়ালির অন্তর্গত জামকুন্ডা মৌজার ধর্মা এলাকা তখনও ঠিকঠাক গড়ে ওঠেনি। সেই এলাকার অন্তর্গত প্রায় 11 একর 32 ডেসিমেলের মালিক ছিলেন চাষি দাউদ আলি। 1984 সালে এই জমি নিয়ে আত্মীয়দের সঙ্গে বিবাদের জেরে কোর্টে একটি মামলা করেন দাউদ ৷ তাঁর ছেলে ইউসুফ আলি জানান, দীর্ঘ 30 বছর সেই মামলা চলার পর অবশেষে 2015 সালের শেষ দিকে তাঁদের হয়েই রায় দেয় আদালত ৷
ইউসুফের অভিযোগ, মামলা চলাকালীন শাসক দলের কয়েকজন প্রভাবশালী জমি মফিয়া সেই জমিটিকে প্লট করে নিজেদের নামে স্থানান্তরিত করে বিক্রি করে দিয়েছেন একাধিক ব্যক্তির কাছে ৷ তাঁদের অজান্তেই পেট্রোল পাম্প, বড় বড় বাড়ি, ফ্ল্যাট ইত্যাদি তৈরি হয়ে গিয়েছে সেই জমিতে ৷ ইউসুফের কথায়, "বাবার পৈতৃক সম্পত্তি অথচ কিছু জমি মাফিয়া ভূমি দফতরের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাতারাতি এই জায়গা অন্যের নামে বিক্রি করে দিয়েছে । বহু জায়গায় আবেদন জানিয়েছি আমি ৷ এখন আমি চাই এই জমি উদ্ধার করে দিক পুলিশ প্রশাসন ও সরকার ।"
দাউদ আলি মারা গিয়েছেন আগেই ৷ এবার সেই জায়গা ফিরে পেতে মরিয়া লড়াই করছেন ইউসুফ ৷ তাঁর অভিযোগ, কোর্টের রায় সত্ত্বেও সেই জমি ফিরিয়ে দিতে নারাজ দখলকারীরা ৷ জমি ফেরত পেতে একের পর এক ভূমি দফতর, সদর মহকুমা শাসক, জেলাশাসক, পুলিশ সুপার এমনকী নবান্নেও চিঠি লিখেছেন তিনি । কিন্তু তাতেও জায়গা উদ্ধার হয়নি ৷ এই আবহে কয়েকবার হুমকি দেওয়া হয়েছে তাঁকে বলে অভিযোগ ইউসুফের ৷ তাঁর অভিযোগ, যাঁরা হুমকি দিয়েছেন, বর্তমানে তাঁরা অনেকেই শাসক দলের বিভিন্ন পদে রয়েছেন ৷ যদিও এই ঘটনায় কড়া ভূমিকা নিয়েছে শাসক দল ৷ অন্যদিকে, যাঁরা বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে তাঁরা কেউই এই বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি ৷ উলটে তাঁদের দাবি, আদালতের তরফে কিংবা পুলিশ প্রশাসনের তরফে ডেকে পাঠানো হলে, তাঁরা বিষয়টি জানাবে ৷
অবশ্য বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে শাসক দলের নেতা-মন্ত্রীরা ৷ তৃণমূলের জেলা সভাপতি সুজয় হাজরা বলেন, "মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বয়ং ঘোষণা করেছেন এই জমি মাফিয়া এবং হকার উচ্ছেদ নিয়ে। এর উপরে আমাদের কিছু বলার নেই । তবে এক্ষেত্রে যদি শাসক দলের কেউ জড়িত থাকে তবে দলগতভাবে অবশ্যই তাঁর বা তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে ।" ঘটনায় তীব্র নিন্দা করেছে বিজেপি । বিজেপির মুখপাত্র অরূপ দাস বলেন, "এটা কোনও নতুন ঘটনা নয় ৷ এরকম রাজ্যে বহু জামকুন্ডা রয়েছে । একাধিক জায়গায় শাসক দলের নেতা-নেত্রীরা রাতারাতি লোকের জমি ঘিরে প্রোমোটারি করছে ৷" পাশাপাশি তিনি শাসক দলের জনপ্রতিনিধিদেরও জড়িয়ে থাকার অভিযোগ তুলেছেন ৷