মেদিনীপুর, 27 ফেব্রুয়ারি: শিলদার ইএফআর ক্যাম্পে হামলার ঘটনায় 14 বছর পর 23 জন মাওবাদীকে দোষী সাব্যস্ত করল মেদিনীপুর আদালত ৷ সাজা ঘোষণা হবে আগামিকাল ৷
2010 সালে 15 ফেব্রুয়ারি শিলদা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র চত্বরে ইএফআর ক্যাম্পে হামলা চালিয়েছিল মাওবাদীরা । গুলি চালানোর পাশাপাশি ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে 24 জন ইএফআর জওয়ানকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় । জওয়ানদের পালটা প্রতিরোধে পাঁচজন মাওবাদীর মৃত্যু হয় ৷ সেই ঘটনায় 23 জন মাওবাদীকে দোষী সাব্যস্ত করল মেদিনীপুর আদালত । এই ঘটনায় রায় ঘোষণা হবে আগামিকাল, বুধবার ।
2010 সালে 15 ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত পশ্চিম মেদিনীপুরে শিলদায় ইস্টার্ন ফ্রন্টিয়ার রাইফেলসের ক্যাম্পে ভয়ংকর মাওবাদী হানা নাড়িয়ে দেয় গোটা রাজ্যকে । তখন গোটা পশ্চিম মেদিনীপুর-সহ জঙ্গলমহল জুড়ে চলছে মাওবাদীদের দৌরাত্ম্য । মাওবাদীদের রুখতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছিল জেলার বিভিন্ন প্রান্তে । কিন্তু 15 ফেব্রুয়ারি রাত ন'টা নাগাদ শিলদা ইএফআর ক্যাম্পে সশস্ত্র অবস্থায় আচমকা আক্রমণ করে মাওবাদীরা ।ক্যাম্পে আগুন লাগিয়ে দেয় মাওবাদীরা। সে দিনের ঘটনায় 24 জন জওয়ানের মৃত্যু হয় ৷ চুরি হয়ে যায় জওয়ানদের অস্ত্রশস্ত্র । যদিও সেই পালটা আক্রমণে পাঁচ মাওবাদীরও মৃত্যু হয় ৷
সেই ঘটনায় তৎকালীন পুলিশ প্রশাসন অর্ণব দাম-সহ 26 জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয় ৷ কিন্তু 2019 সালে অর্ণবকে জামিন দেয় আদালত ৷ মূলত সংশোধনাগারে তাঁর আচরণ ভালো হওয়ার জন্যই তাঁকে জামিন দেওয়া হয় । সংশোধনাগার থেকেই নেট উত্তীর্ণ হন মেধাবী ওই মাওবাদী নেতা ৷ পরবর্তীকালে সুদীপ চোংদার নামে এক মাওবাদী নেতার মৃত্যু হয় । বাকি 23 জন মাওবাদীর দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া চলতেই থাকে । অবশেষে আজ মেদিনীপুরে অতিরিক্ত দায়রা আদালতে অভিযুক্তদের তোলা হয় ।
এই মামলায় প্রথমে মাও নেতা রঞ্জন মুণ্ডা গ্রেফতার হয়েছিল ৷ এর পর একের পর এক মাওবাদী নেতানেত্রীদের গ্রেফতার করা হয় । যদিও অধরা ছিলেন মাও নেত্রী সুচিত্রা মাহাত । পরে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করে সুচিত্রা । প্রথমে এই মামলা শুরু হয় ঝাড়গ্রাম আদালতে ৷ পরর্বতীতে সেই মামলার শুনানি শুরু হয় পশ্চিম মেদিনীপুর আদালতে । মঙ্গলবার জেলবন্দি 14 জন মাওবাদীকে তোলা হয় ষষ্ঠ অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক সালিম শাহির এজলাসে । এছাড়াও বাকি যারা জামিনে মুক্ত রয়েছেন, তাদেরও মঙ্গলবার আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় । মঙ্গলবার এই মামলার অভিযুক্ত 23 জনকে দোষী সাব্যস্ত করে আদালত । বুধবার ও বৃহস্পতিবার দুই ধাপে দোষী সাব্যস্তদের সাজা ঘোষণা করা হবে ।
এ দিন সরকারি আইনজীবী দেবাশিস মাইতি বলেন, "দীর্ঘদিন ধরে চলা এই ঘটনায় অবশেষে দোষী সাব্যস্ত করল মেদিনীপুর আদালত । এই ঘটনায় একজন জুভেনাইল আছে, আর আরেকজন মারা গিয়েছে । বাকি সবাইকেই দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে ।"
অন্যদিকে, মাওবাদীদের হয়ে লড়া আইনজীবী অজয়কুমার ঘোষ বলেন, "বিচারক মনে করেছেন তাই দোষী সাব্যস্ত করে রায় ঘোষণা করেছেন ৷ এ বিষয়ে আমাদের কোনও মন্তব্য নেই ৷ আসামিপক্ষ যদি উচ্চ আদালতে যান তাহলে যেতে পারেন । উচ্চ আদালতই ঠিক করবে এই নির্দেশ বহাল রাখবে, না বাতিল করবে ।"
আরও পড়ুন: