কলকাতা, 1 নভেম্বর: আবাস-দুর্নীতির অভিযোগের জেরে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলায় এই প্রকল্পের বরাদ্দ বন্ধ করে দিয়েছে ৷ এই পরিস্থিতিতে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের তরফেই আবাস প্রকল্পে বাড়ি তৈরি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ৷ কিন্তু এই নিয়ে বিতর্ক বেঁধেছে ৷ অভিযোগ উঠেছে, আবাস প্রকল্পে ঘর দিতে দুর্নীতি করা হচ্ছে ৷ বাদ যাচ্ছে যোগ্যদের নাম ৷ তৃণমূলের কারসাজিতেই এই দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ ৷
স্বাভাবিকভাবেই তাই কৌতূহল তৈরি হয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আবাস প্রকল্পের নিয়ম নিয়ে ৷ কী কী কারণে প্রকল্প থেকে নাম বাদ যাচ্ছে, সেই প্রশ্নই সবচেয়ে বেশি উঠছে ৷ এই প্রশ্নের উত্তর খতিয়ে দেখতে গিয়ে সামনে চলে আসছে 11টি কারণ ৷ কী কী সেই কারণগুলি, দেখে নেওয়া যাক একনজরে ৷
কোন কোন ক্ষেত্রে মিলবে না আবাস প্রকল্পের বাড়ি ?
- পাকা বাড়ি
- তিন বা চারচাকার গাড়ি
- কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায় এমন তিন বা চার চাকার গাড়ি
- পরিবারে কোনও সরকারি চাকুরে
- সরকারের কাছে নথিভুক্ত থাকা অকৃষিজ সংস্থা
- পরিবারের কোনও সদস্যের মাসিক আয় 15 হাজার টাকা
- আয়কর দাতা
- 15 হাজার টাকার বেশি আয় প্রফেশনাল ট্যাক্স-দাতা
- আড়াই একর বা তার বেশি চাষযোগ্য জমি
- পাঁচ একর বা তার বেশি চাষযোগ্য নয় এমন জমি
- অন্য কোনও প্রকল্প বা আবাস প্রকল্পের সুবিধাপ্রাপক
আবাস প্রকল্পে ঘর বরাদ্দ করার আগে সমীক্ষা শুরু করা হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে ৷ সেই সমীক্ষাতেই এই মাপকাঠিগুলিই খতিয়ে দেখে আবাস প্রকল্পে ঘর পাওয়ার দেওয়ার ক্ষেত্রে যোগ্য বা অযোগ্য বিচার করা হচ্ছে ৷ নবান্ন সূত্রে খবর, শুধুমাত্র পাকা বাড়ি থাকার কারণেই 4 লক্ষ 18 হাজার 455 জনের নাম বাদ পড়েছে ৷
স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে যে পাকা বাড়ি যদি থাকে, তাহলে কীভাবে তালিকায় নাম উঠল ? সেই সম্পর্কে জানা যাচ্ছে যে যখন তালিকা তৈরি হয়, সেই সময় বাদ পড়া প্রায় 4 লক্ষ জনের পাকা বাড়ি ছিল না ৷ পরবর্তীতে তা তৈরি হওয়ায়, এখন নাম বাদ পড়ে যাচ্ছে ৷ একইভাবে অনান্য নিয়মের পূরণ না-হওয়ার জেরেও অনেকের নাম বাদ গিয়েছে ৷
যারা জেরে জেলায় জেলায় বিক্ষোভ হয়েছে ৷ বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, সমীক্ষায় দুর্নীতি করা হচ্ছে ৷ এই পরিস্থিতিতে আসরে নেমেছে রাজ্য প্রশাসনও ৷ স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি মানবিকভাবে দেখার কথা বলেছেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী বলছেন শর্তের কড়াকড়ি নয়, মানবিকভাবে বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করতে হবে ।
প্রশাসনের তরফেও পুরো প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন করার কথা বলা হয়েছে ৷ মুখ্যসচিবও তালিকা থেকে বাতিল হওয়া মানুষদের নামগুলি আবার বিভিন্ন জেলার জেলাশাসকদের পুনর্মূল্যায়নের নির্দেশ দিয়েছেন । কিন্তু পুনর্মূল্যায়নের ফলও যদি একই হয়, তাহলে কী হবে ? এই প্রশ্নের উত্তর অবশ্য মেলেনি ৷
এই পরিস্থিতিতে সমীক্ষার সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে ৷ আগে সমীক্ষা শেষের তারিখ 30 অক্টোবর ছিল ৷ এখন তা বাড়িয়ে 15 নভেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে ৷ এই সমীক্ষা শেষ হওয়ার আগে পর্যন্ত বলা সম্ভব নয়, ঠিক কারা আবাস প্রকল্পে বাড়ি পেতে চলেছেন ৷
যাদের নাম বাদ গিয়েছে, তাঁদের কাছে এখন ভরসা যে মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ৷ কারণ, পঞ্চায়েত সচিব পি উলগানাথনকে পাশে নিয়ে তিনি জানিয়েছেন, তালিকায় থাকা উপভোক্তাদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই । ধাপে ধাপে সকলেই বাড়ির সুযোগ পাবেন।
এখন দেখার এই আশ্বাস প্রশাসনের তরফে কীভাবে বাস্তবায়িত করা হয় ? এর জন্য নিয়মে কোনও আসবে কি? উত্তরের অপেক্ষায় সকলে ৷