ETV Bharat / sports

প্রতিকূলতাকে জয়ের আরেক নাম ভারতীয় প্যারা-অ্যাথলিট দীপ্তি - Para Athlete - PARA ATHLETE

World Champion in Para-Athletics: চোখে সমস্যা রয়েছে ৷ বিশেষভাবে সক্ষম হওয়ায় সমাজের কম বঞ্চনার শিকার হননি তিনি ৷ সেই সব প্রতিকূলতাকে জয় করে আজ বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন তেলেঙ্গানার দীপ্তি ৷ তাঁর গল্প হার মানাবে সিনেমাকে ৷

Para Athlete Deepti
প্যারা-অ্যাথলিট দীপ্তি (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : May 21, 2024, 10:08 PM IST

হায়দরাবাদ, 21 মে: কন্যা তুমি অনন্যা ৷ মেয়েরা পারে না এমন কিছু বোধহয় এই জগতে নেই ৷ সে আসুক হাজার বাধা ৷ তাকে অতিক্রম করেই এগিয়ে যাওয়ার আরেক নাম নারী ৷ তেমনই এক নারী হলেন ভারতীয় প্যারা-অ্যাথলিট দীপ্তি ৷ দারিদ্র্য এবং কুসংস্কারের অন্ধকারের বেরাজালকে ভেঙে আলোর পথের দিশারি এই কন্যে ৷ প্রতিকূলতাকে জয় করে বিশ্ব দরবারে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন এই বিশেষভাবে সক্ষম খোলোয়াড় ৷ হয়ে উঠেছেন প্যারা-অ্যাথলেটিক্সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ৷

তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গল জেলার কাল্লেদা গ্রামের বাসিন্দা দীপ্তি ৷ গ্রাম থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তাঁর এই যাত্রাটা সহজ ছিল না ৷ অনেক জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে ৷ তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তি তাঁকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে ৷ এমন একটি পরিবারে দীপ্তি জন্মগ্রহণ করেছিলেন যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় ৷ তাঁর উপর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল সমাজের কাছে কলঙ্ক ৷ সেই কলঙ্কের ছায়ার জেরে দীপ্তি এমন বাধার মুখোমুখি হয়েছিল যা তাঁর কাছে ভেদ করা অপ্রতিরোধ্য বলে মনে হয়েছিল ৷ কিন্তু দীপ্তির জন্য ভাগ্যের পরিকল্পনা ছিল অন্য ৷

দীপ্তি ওয়ারাঙ্গলে একটি স্কুল মিট চলাকালীন ভারতীয় জুনিয়র দলের প্রধান কোচ নাগপুরী রমেশের নজরে পড়েন । তাঁর খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনাকে দেখে রমেশ দীপ্তির বাবা-মাকে তাঁকে প্রশিক্ষণের জন্য হায়দরাবাদে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন ৷ তবে খারাপ আর্থিক পরিস্থিতির কারণে দীপ্তির বাবা-মা এই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না । তবে রমেশের সাহায্য এবং এনাডু সিএসআর প্রোগ্রাম 'লক্ষ্য'-এর গাইড পুল্লেলা গোপীচাঁদের হস্তক্ষেপ, দীপ্তির মহানতার যাত্রার পথ প্রশস্ত করেছিল ৷

খেলার শুরু থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা কুড়নো পর্যন্ত, দীপ্তির যাত্রা অসাধারণ ছাড়া আর কিছু নয় । আর্থিক সহায়তা এবং শীর্ষস্থানীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি প্যারা-অ্যাথলেটিক্সের শীর্ষে উঠেছিলেন ৷ ভারতের হয়ে সোনা পেয়েছিলেন এবং বিশ্ব মঞ্চে একের পর এক রেকর্ড গড়েছিলেন ৷

তাঁর মুকুটে একাধিক সাফল্যের পালক যোগ হয়েছে ৷ এর মধ্যে রয়েছে মরক্কোতে 2022 ওয়ার্ল্ড প্যারা গ্র্যান্ড প্রিক্সে জয় ৷ যেখানে তিনি টি20 এবং 400 মিটার ইভেন্টে তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক সোনা জিতেছিলেন এবং টি20 বিভাগে একটি নতুন রেকর্ড তৈরি করেছিলেন । ব্রিসবেনে ভার্টাস এশিয়ান গেমসে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স অব্যাহত ছিল ৷ যেখানে তিনি 26.82 সেকেন্ডে 200 মিটারে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন এবং 400 মিটার একটি শ্বাসরুদ্ধকর 57.58 সেকেন্ডে জয় হাসিল করেছিলেন ৷ উভয় ইভেন্টই দীপ্তি সোনা পেয়েছিলেন ।

দীপ্তি এই সাফল্যের জন্য পরামর্শদাতা গোপীচাঁদ এবং রমেশের সমর্থন এবং 'লক্ষ্য'-এর অনুষ্ঠান কৃতিত্ব দেয়, যা তাঁর জীবনকে বদলে দেয় । তবে প্যারালিম্পিকে দীপ্তির যাত্রা এখনও শেষ হয়নি । তাঁর সংকল্প এবং অটল মনোভাব সকলের জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করছে ৷ তিনি প্রমাণ করেছেন যে অধ্যবসায় এবং নিজের লক্ষ্যে অটল থাকলে বিজয় আসতে বাধ্য ৷

দীপ্তির পরিবার তাঁর কৃতিত্বের দীপ্তিতে ভাসছে ৷ গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং জনপ্রতিনিধিরা দীপ্তিতে সংবর্ধনায় ভরিয়ে তুলেছে ৷ দীপ্তির জীবনের গল্প অনুপ্রেরণা জোগাবে অনেককে ৷ চ্যালেঞ্জে ভরা পৃথিবীতে দীপ্তির যাত্রা একটি উদাহরণ ৷ তাঁর এই যাত্রা মানুষকে স্বপ্ন দেখায় উদ্বুদ্ধ করে ৷ সঙ্গে এই বার্তা দেয় যে স্বপ্ন যতই দুঃসাধ্য হোক না কেন তারা সেটিকে পূরণ করতে পারে, যারা স্বপ্নকে তাড়া করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দেখায় ৷

আরও পড়ুন:

  1. 62 হাজার মুখোশ-পুষ্প বৃষ্টিতে সুনীলের বিদায়ী ম্যাচ স্মরণীয় করার পরিকল্পনা
  2. হায়দরাবাদের 'সূর্য ডুবিয়ে' তিন বছর পর ফাইনালে চোখ কেকেআরের
  3. নীরজ চোপড়ার পরামর্শ মেনে 2026 এশিয়াডে পদকে চোখ মৌমিতার

হায়দরাবাদ, 21 মে: কন্যা তুমি অনন্যা ৷ মেয়েরা পারে না এমন কিছু বোধহয় এই জগতে নেই ৷ সে আসুক হাজার বাধা ৷ তাকে অতিক্রম করেই এগিয়ে যাওয়ার আরেক নাম নারী ৷ তেমনই এক নারী হলেন ভারতীয় প্যারা-অ্যাথলিট দীপ্তি ৷ দারিদ্র্য এবং কুসংস্কারের অন্ধকারের বেরাজালকে ভেঙে আলোর পথের দিশারি এই কন্যে ৷ প্রতিকূলতাকে জয় করে বিশ্ব দরবারে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন এই বিশেষভাবে সক্ষম খোলোয়াড় ৷ হয়ে উঠেছেন প্যারা-অ্যাথলেটিক্সে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ৷

তেলেঙ্গানার ওয়ারাঙ্গল জেলার কাল্লেদা গ্রামের বাসিন্দা দীপ্তি ৷ গ্রাম থেকে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার তাঁর এই যাত্রাটা সহজ ছিল না ৷ অনেক জীবন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে ৷ তবে শেষ পর্যন্ত তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও ইচ্ছাশক্তি তাঁকে সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছে ৷ এমন একটি পরিবারে দীপ্তি জন্মগ্রহণ করেছিলেন যেখানে নুন আনতে পান্তা ফুরোয় ৷ তাঁর উপর শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছিল সমাজের কাছে কলঙ্ক ৷ সেই কলঙ্কের ছায়ার জেরে দীপ্তি এমন বাধার মুখোমুখি হয়েছিল যা তাঁর কাছে ভেদ করা অপ্রতিরোধ্য বলে মনে হয়েছিল ৷ কিন্তু দীপ্তির জন্য ভাগ্যের পরিকল্পনা ছিল অন্য ৷

দীপ্তি ওয়ারাঙ্গলে একটি স্কুল মিট চলাকালীন ভারতীয় জুনিয়র দলের প্রধান কোচ নাগপুরী রমেশের নজরে পড়েন । তাঁর খেলোয়াড় হওয়ার সম্ভাবনাকে দেখে রমেশ দীপ্তির বাবা-মাকে তাঁকে প্রশিক্ষণের জন্য হায়দরাবাদে পাঠানোর জন্য অনুরোধ করেছিলেন ৷ তবে খারাপ আর্থিক পরিস্থিতির কারণে দীপ্তির বাবা-মা এই প্রস্তাবে রাজি ছিলেন না । তবে রমেশের সাহায্য এবং এনাডু সিএসআর প্রোগ্রাম 'লক্ষ্য'-এর গাইড পুল্লেলা গোপীচাঁদের হস্তক্ষেপ, দীপ্তির মহানতার যাত্রার পথ প্রশস্ত করেছিল ৷

খেলার শুরু থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে প্রশংসা কুড়নো পর্যন্ত, দীপ্তির যাত্রা অসাধারণ ছাড়া আর কিছু নয় । আর্থিক সহায়তা এবং শীর্ষস্থানীয় প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তিনি প্যারা-অ্যাথলেটিক্সের শীর্ষে উঠেছিলেন ৷ ভারতের হয়ে সোনা পেয়েছিলেন এবং বিশ্ব মঞ্চে একের পর এক রেকর্ড গড়েছিলেন ৷

তাঁর মুকুটে একাধিক সাফল্যের পালক যোগ হয়েছে ৷ এর মধ্যে রয়েছে মরক্কোতে 2022 ওয়ার্ল্ড প্যারা গ্র্যান্ড প্রিক্সে জয় ৷ যেখানে তিনি টি20 এবং 400 মিটার ইভেন্টে তিনি প্রথম আন্তর্জাতিক সোনা জিতেছিলেন এবং টি20 বিভাগে একটি নতুন রেকর্ড তৈরি করেছিলেন । ব্রিসবেনে ভার্টাস এশিয়ান গেমসে তাঁর দুর্দান্ত পারফরম্যান্স অব্যাহত ছিল ৷ যেখানে তিনি 26.82 সেকেন্ডে 200 মিটারে নিজের আধিপত্য বিস্তার করেছিলেন এবং 400 মিটার একটি শ্বাসরুদ্ধকর 57.58 সেকেন্ডে জয় হাসিল করেছিলেন ৷ উভয় ইভেন্টই দীপ্তি সোনা পেয়েছিলেন ।

দীপ্তি এই সাফল্যের জন্য পরামর্শদাতা গোপীচাঁদ এবং রমেশের সমর্থন এবং 'লক্ষ্য'-এর অনুষ্ঠান কৃতিত্ব দেয়, যা তাঁর জীবনকে বদলে দেয় । তবে প্যারালিম্পিকে দীপ্তির যাত্রা এখনও শেষ হয়নি । তাঁর সংকল্প এবং অটল মনোভাব সকলের জন্য অনুপ্রেরণা হিসাবে কাজ করছে ৷ তিনি প্রমাণ করেছেন যে অধ্যবসায় এবং নিজের লক্ষ্যে অটল থাকলে বিজয় আসতে বাধ্য ৷

দীপ্তির পরিবার তাঁর কৃতিত্বের দীপ্তিতে ভাসছে ৷ গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং জনপ্রতিনিধিরা দীপ্তিতে সংবর্ধনায় ভরিয়ে তুলেছে ৷ দীপ্তির জীবনের গল্প অনুপ্রেরণা জোগাবে অনেককে ৷ চ্যালেঞ্জে ভরা পৃথিবীতে দীপ্তির যাত্রা একটি উদাহরণ ৷ তাঁর এই যাত্রা মানুষকে স্বপ্ন দেখায় উদ্বুদ্ধ করে ৷ সঙ্গে এই বার্তা দেয় যে স্বপ্ন যতই দুঃসাধ্য হোক না কেন তারা সেটিকে পূরণ করতে পারে, যারা স্বপ্নকে তাড়া করে এগিয়ে যাওয়ার সাহস দেখায় ৷

আরও পড়ুন:

  1. 62 হাজার মুখোশ-পুষ্প বৃষ্টিতে সুনীলের বিদায়ী ম্যাচ স্মরণীয় করার পরিকল্পনা
  2. হায়দরাবাদের 'সূর্য ডুবিয়ে' তিন বছর পর ফাইনালে চোখ কেকেআরের
  3. নীরজ চোপড়ার পরামর্শ মেনে 2026 এশিয়াডে পদকে চোখ মৌমিতার
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.