কলকাতা, 29 ডিসেম্বর: হায়দরাবাদ এফসি ম্যাচে ক্লেইটন সিলভার পেটে গোলরক্ষক অর্শদীপ সিংয়ের লাথির ঘটনায় উত্তাল ভারতীয় ফুটবল । খেলা শেষের পরেই কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন ডগলাস ডি’সিলভা এবং শিল্টন পাল । প্রথম জন ব্রাজিলিয়ান, লাল-হলুদ জার্সি পরে মাঝমাঠে খেলেছেন । শিল্টন পাল সবুজ-মেরুন জার্সি পড়ে গোলরক্ষকের ভূমিকা এবং নেতৃত্বর ব্যাটন সামলেছেন । দু’জনেই অর্শদীপ এবং ক্লেইটন সিলভার সংঘর্ষ ও পরবর্তীতে রেফারির নিষ্ক্রিয় কর্মকাণ্ডে সরব । মাঠ ও মাঠের বাইরে অর্শদীপ সিংয়ের কড়া শাস্তি প্রাপ্ত ছিল বলে দাবি করেছেন ।
এবার এই দুই প্রাক্তনের সুরে সুর মেলালেন ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায় । ইস্টবেঙ্গলের হয়ে সরকারিভাবে সওয়াল করেছেন লাল-হলুদের প্রাক্তন অধিনায়ক । ভাস্কর বলেন, “ভারতীয় ফুটবলের বর্তমান অবস্থা নিয়ে কিছু কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই । আইএসএলে নিম্নমানের রেফারিং নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই আলোচনা কানে আসছিল । শুনেছিলাম প্রায় প্রতি ম্যাচেই রেফারির ভুল সিদ্ধান্তে ডুবছে ইস্টবেঙ্গল । রেফারিংয়ের মান কি সত্যিই তলানিতে ? শনিবার টিভির পর্দায় ইস্টবেঙ্গল বনাম হায়দরাবাদ ম্যাচ দেখে বলতে বাধ্য হচ্ছি, পাড়ার ফুটবলেও এমন খারাপ রেফারিং হয় না । বিশেষ করে হায়দরাবাদ গোলরক্ষক নিজেদের বক্সে যেভাবে সিলভাকে ফাউল করলেন তা দেখে শিউরে উঠেছি । বরাতজোরে বড় দুর্ঘটনা ঘটেনি । তার চেয়েও বিস্মিত রেফারির ভূমিকায় । হায়দরাবাদ গোলরক্ষককে লাল কার্ড দেখানোর বদলে নিশ্চুপ রইলেন তিনি । এমন সিদ্ধান্ত ফুটবলের জন্য ক্ষতিকারক ।’’
তিনি বলেন, ‘‘সর্বভারতীয় ফুটবল সংস্থার সভাপতি কল্যাণ চৌবে নিজে প্রাক্তন গোলরক্ষক । আমার অনুরোধ, উদ্যোগী হয়ে এবার পদক্ষেপ নিক ফেডারেশন । না-হলে অচিরেই অন্ধকারে তলিয়ে যাবে ভারতীয় ফুটবল । তার দায় বর্তাবে ফেডারেশনের উপর । ইস্টবেঙ্গল টিম ম্যানেজমেন্টের কাছে আমার অনুরোধ, অবিলম্বে কড়া পদক্ষেপ নিন তাঁরা । প্রয়োজনে এএফসি আর ফিফার কাছে ভিডিয়ো ফুটেজ পাঠানো হোক । প্রাক্তন ফুটবলারদের পাশে নিয়ে প্রবল আন্দোলন শুরুর সময় হয়েছে । এভাবে ফুটবল চলতে পারে না । বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলতে না-পারলে সমূহ বিপদ ।”
1982 এশিয়াডে ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক ছিলেন ভাস্কর । সেইসময় ভারতীয় দল নিয়মিত বিশ্বের সেরা ফুটবল খেলিয়ে দেশের বিরুদ্ধে লড়াই করত চোখে চোখ রেখে । এশিয়ান গেমসে পদকের স্বপ্ন দেখত । ভাস্করের মতে, এখন শুধুই শূন্যতা । প্রচারের ঢঙ্কা নিনাদে সমস্ত ব্যর্থতা, দৈন্যদশা লুকোনোর চেষ্টা চলছে । “শুধু রেফারিং নয়, ফুটবল পরিকাঠামো ধ্বংসের পথে । চলতি সন্তোষ ট্রফিতে সিনিয়র প্লেয়াররা নেই, একদিনের ব্যবধানে ম্যাচ খেলতে হচ্ছে সব দলকে । কোনওরকমে টুর্নামেন্ট শেষ করতে পারলে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে ফেডারেশন । নেই ব্র্যান্ডিং, বিপণন । প্রায় ফাঁকা গ্যালারির সামনে সেমি-ফাইনাল ম্যাচ খেলল বাংলা । ভারতীয় ফুটবলের জন্য যা অশনি সঙ্কেত । ফুটবলের নামে প্রহসন বন্ধ হোক,” আক্ষেপ-ক্ষোভ মিলেমিশে ভাস্কর গঙ্গোপাধ্যায়ে গলায় ।