মঙ্গলকোট, 6 জানুয়ারি: বাড়ি ফিরতেই রবি হাঁসদাকে নিয়ে আবেগে ভাসল পুরো গ্রাম। সন্তোষ ট্রফিজয়ীর নায়ক রবি ও তাঁর পরিবারও আনন্দে আত্মহারা ৷ তবে চ্যাম্পিয়ন হতেই হবে, এই চিন্তাভাবনা প্রথম থেকেই দলের প্রত্যেকের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন তাঁর কোচ সঞ্জয় সেন ৷ সেই ভাবনা মাথায় রেখেই সন্তোষ ট্রফিতে নেমেছিলেন রবি হাঁসদা। রবিবার বাড়ি ফিরতেই সাঁওতালি রীতি মেনে রবিকে ধামসা-মাদল বাজিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়। পাশাপাশি চলে আদিবাসী নাচও।
রবির পরিবার
পূর্ব বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটের মুশারু গ্রামের আদিবাসী পাড়ার বাসিন্দা রবি হাঁসদা। বাবা সুলতান হাঁসদা ছিলেন দিনমজুর। তবে তাঁর স্বপ্ন ছিল ছেলে ফুটবলার হয়ে দেশের মুখ উজ্জ্বল করবে। কিন্তু, রবির সাফল্য তিনি দেখে যেতে পারেননি। গত বছর জুন মাসে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হয়েছেন তিনি। ফলে আরও অর্থ সংকট দেখা দেয় পরিবারে। দিনমজুরি না-করলে সংসারে হাঁড়ি চড়বে না। মা তুলসী হাঁসদা দিনমজুরি করে সংসার সামলেছেন। কিন্তু, রবিকে মাঠের কাজে না-পাঠিয়ে পাঠিয়েছেন ফুটবল খেলতে। তিনিই রবিকে ফুটবল কিনে দেন। রবি হাঁসদারা এক ভাই এক বোন। বোন রাসমণির বিয়ে হয়ে গিয়েছে। স্ত্রী ও দেড় বছরের মেয়েও রয়েছে তাঁর ৷
রবির ফুটবল জার্নি-
- রবির বয়স যখন ছয় বা সাত হবে, সেই সময় থেকে মুশারু গ্রামের আদিবাসী পাড়া মিলন সংঘ ক্লাবের মাঠে ফুটবল খেলার জন্য ভরতি হয়।
- 12 বছর বয়সে ভাতার একাদশ অ্যাথেলেটিক্স ক্লাবে ফুটবল কোচিংয়ে তিনি ভর্তি হন। আর্থিক অনটনের মধ্যেও তাঁর পরিবার রবিকে ফুটবল খেলার জন্য উৎসাহ জুগিয়েছিল।
- 2017 সালে অনূর্ধ্ব-19 বাংলা দলে সুযোগ পান রবি।
- 2022 সালে ন্যাশনাল গেমসে বাংলা চ্যাম্পিয়ন হয়, রবি 5টি গোল করেছিলেন।
- এবারে সন্তোষ ট্রফির ফাইনাল ছাড়াও টুর্নামেন্টে রবি মোট 12টি গোল করেন।
ছেলের সাফল্যে আনন্দে আত্মহারা মা তুলসী হাঁসদা। তাঁর মতে, ছেলে ভালো খেলছে, আমি খুব খুশি ৷ রবি হাঁসদা বলেন, "কল্যাণী থেকে শুরু করেছিলাম। তবে ভালো খেলব, সেই আশা প্রথম থেকেই ছিল। আমাদের কোচ প্রথম থেকেই মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন কোনও ম্যাচকে হালকাভাবে নিলে হবে না। সব ম্যাচই টাফ হবে। তিনি প্রথমেই আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন চ্যাম্পিয়ন হতে হবে। তবে সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পরের মুহূর্তটা আমাদের জীবনে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।"