হায়দরাবাদ, 16 জুলাই: আর্তেমিয়ো ফ্রানসি কাপ ৷ বর্তমানের লা ফাইনালিসিমা ৷ যার পোশাকি নাম কনমেবল-উয়েফা কাপ অফ চ্যাম্পিয়ন্স ৷ উয়েফা ইউরো চ্যাম্পিয়ন বনাম কোপা আমেরিকা চ্যাম্পিয়নের দ্বৈরথ ৷ এবার সেই কাপ ঘরে তুলতে নামবে আর্জেন্তিনা ও স্পেন ৷
কলম্বিয়াকে উড়িয়ে ফের লাতিন আমেরিকা সেরা হয়েছে ‘লা অ্যালবিসেলেস্তে’ ৷ অন্যদিকে, এক যুগ পর ইউরোপ সেরা হওয়ার গরিমা গা’য়ে মেখেছে ‘স্প্যানিশ আর্মাডা’ ৷ আগামি বছর মুখোমুখি হবে দুই চ্যাম্পিয়ন দেশ ৷ ঠিক হবে, চ্যাম্পিয়ন অফ চ্যাম্পিয়নস কারা ৷ গতবার 1 জুন হয়েছিল এই ম্যাচ ৷ চলতি বছরেও প্রায় একই সময় অনুষ্ঠিত হতে পারে কনমেবল-উয়েফা কাপ অফ চ্যাম্পিয়ন্স ৷
Finalissima 2025 is SET 🇪🇸🇦🇷🏆🏆
— FOX Soccer (@FOXSoccer) July 15, 2024
Who is coming out on top when the two champions face off, Spain or Argentina? pic.twitter.com/vgkvlyjnOJ
শুধু দুই দেশ নয়, আগামি ফাইনালিসিমা দুই তারকারও ৷ একজন ভগবান হলে দ্বিতীয়জন নিঃসন্দেহে সামনের সারিতে বসা ভক্ত ৷ লিও মেসি ও লামিনে ইয়ামাল ৷ 17 বছর আগে জোয়ান ম্যানফোর্ট বলে এক চিত্রগ্রাহক একটি চ্যারিটি ক্যালেন্ডারের জন্য কিছু ছবি তুলেছিলেন ৷ লেন্সের সামনে ছিলেন তরুণ লিও ও মাস ছয়েকের ইয়ামাল ৷ কাতালুনিয়ার ইয়ামালের শৈশব তখন থেকেই মেসিময় ৷ নিজের এবং ঈশ্বরের কাপজয়ী ছবি পাশাপাশি রেখে ইয়ামাল লিখেছেন, ‘ফুটবলের জয় হল’৷ আগামি বছর ফাইনালিসিমায় নামবেন দুই তারকা ৷ যে ম্যাচে অবশ্য ঈশ্বর-আহুতি নয়, দেশের জার্সিতে আদর্শকে ছাপিয়ে যেতে চাইবেন ‘লা রোজা’র নয়া ভরসা ৷
ওই ছবি তোলার 17 বছর পর মেসি এখন কেরিয়ারের সায়াহ্নে ৷ দেশের জার্সিতে সমস্ত ট্রফিই রয়েছে লিও’র ক্যাবিনেটে ৷ ফুটবলের রাজপুত্রর পৃথিবীটাই বদলে গিয়েছে, বদলায়নি শুধু জেতার খিদেটা ৷ কোপা ফাইনালে চোট পেয়ে উঠে যাওয়ার পর বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়ের কান্না শুধু তাঁর ব্যথার নয়, ফুটবলের প্রতি তাঁর ভালোবাসার প্রতিচ্ছবি ৷ যা বোঝায়, দেশের জার্সিতে সব ট্রফি জিতে ফেললেও তিনি সন্তুষ্ট নন ৷
অন্যদিকে, ক্লাবের জার্সি গা’য়ে চাপানো ইয়ামাল সবে পদার্পণ করেছেন বিশ্ব ফুটবলে ৷ তাঁকে নিয়ে তৈরি হওয়া বিশ্বাসের মর্যাদাও দিয়েছেন সবুজ গালিচায় ৷ 2006 সালের বিশ্বকাপে লিও’কে ঘিরে তৈরি হওয়া উন্মাদনা, 2024-এর ইউরোয় এসে নিজের করে নিয়েছেন সদ্য সতেরোয় পা দেওয়া স্ট্রাইকার ৷ পার্থক্য হল, 2006 সালে আর্জেন্তিনার জার্সিতে মেসি পড়েছিলেন হোসে পেকারম্যান নামক এক ভদ্রলোকের হাতে, ফুটবল বিশ্ব যাঁকে চিনত ‘পাকারম্যান’ নামে ৷ ইয়ামালের ভাগ্য ভালো, হেডস্যর লুইস দে লা ফন্তে জহুরির মতোই রত্ন চিনতে ভুল করেননি ৷
ফলে আগামি বছরের ফাইনালিসিমা জিতে কেরিয়ারের শেষটা বর্ণময় করতে চাইবেন লিও মেসি৷ ইয়ামাল চাইবেন আদর্শের সামনে নিজের সেরাটা মেলে ধরতে ৷ ফুটবল বিশ্বকে বোঝাতে যে লিও’র রেখে যাওয়া ধ্বজাটা এগিয়ে নিয়ে যেতে তিনি তৈরি ৷
এতো গেলো দুই তারকার কথা ৷ কিন্তু ‘লা ফাইনালিসিমা’ তো নিছকই কোনও ম্যাচ নয় ৷ লাতিন আমেরিকা আর ইউরোপ সেরার মধ্যে হওয়া কোনও ফুটবল সাক্ষাৎকারও নয় ৷ মাত্র তিন'বার এই টুর্নামেন্ট হলেও ইউরোপের দলের বিরুদ্ধে যেকোনও খেলাই লাতিন আমেরিকার কাছে সংগ্রাম ৷ অত্যাচারী শাসকের দম্ভের বিরুদ্ধে বসন্তের একটুকরো হাওয়া নিয়ে আসার লড়াই ৷
‘ফুটবলীয় সম্পর্ক’ মধুর হলেও স্পেন ও আর্জেন্তিনা আদপে শাসক ও শাসিত ৷ প্রায় তিন শতাব্দির অত্যাচার পেরিয়ে স্বাধীন হয়েছিল আর্জেন্তিনা ৷ 2016 সালের স্বাধীনতার 200 বছর উদযাপন করেছে মেসি-মারাদোনার দেশ ৷ ফলে ধনকুবের ইউরোপীয়ানদের বিরুদ্ধে যেকোনও খেলাই লাতিনদের কাছে লড়াইয়ের ৷ আর তাতে জেতা ‘ফকল্যান্ডের যুদ্ধে হেরে, ইংল্যান্ডকে দিল মেরে’র মতোই আবেগের ৷ জয়োল্লাস ‘শোধবোধ অস্ত্রবিনা’র মতোই সুন্দর ৷ সবুজ গালিচায় গোলাকার স্বপ্নকে ঘিরে তো শুধু 11 জন নয়, যেন প্রতিশোধের আগুনে ফোটে গোটা লাতিন আমেরিকা ৷
এই একদিন সবুজ-হলুদ কিংবা নীল-সাদা নয়, শাসকের সামনে একজোট হয়ে চোখে চোখ রেখে লড়াই করার দিন ৷ বছরের পর বছর ধরে এমনটাই তো মনে করে এসেছেন লাতিনরা ৷ ফলে দুই ফুটবলার, দুই দেশ নয় ৷ 2025 ফাইনালিসিমা দম্ভের লড়াই, অধিকার বুঝে নেওয়ার লড়াই ৷ আপাত দৃষ্টিতে হওয়া ফুটবল সেদিন মহাসংগ্রাম ৷ সেই আবেগের মধ্যেই সবুজ গালিচায় আল্পনা আঁকবেন দুই জাদুকর, প্রতীক্ষায় গোটা বিশ্ব ৷