ETV Bharat / sports

রবি আলোয় মিঞা তর্পণ ! বছরের শেষ রাতে ‘ঊষাকাল’ বঙ্গ ফুটবলে - RABI HANSDA

2025 সালে বাংলার ফুটবল এখন নতুন রবির আলোয় ভরে ওঠার অপেক্ষায় ৷ মা, স্ত্রী আর দেড় বছরের মেয়েকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন রবির মুখেও ।

Bengal Footballer Rabi Hansda Shines Bright Amid All Odds
রবি আলোয় মিঞা তর্পণ (ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Sports Team

Published : Jan 1, 2025, 1:05 PM IST

কলকাতা, 1 জানুয়ারি: প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার মহম্মদ হাবিবের শহরে গোলের নজির ছুঁয়ে শ্রদ্ধা রবি হাঁসদার । কিংবদন্তিকে বাঙালি স্ট্রাইকারের সেরা শ্রদ্ধাঞ্জলির মাধ্যম এর থেকে ভালো কিছু হওয়ার ছিল না । রবি আলোয় মিঞা তর্পণে ফুটবলের জয়গান । একটি সন্তোষ ট্রফিতে এক ডজন গোল । তাও আবার বাঙালি স্ট্রাইকারের পা থেকে ৷ বিদায়ী বছরের শেষ দিনে এর থেকে ভালো ছবি বাংলার ফুটবলের জন্যও বোধহয় হতে পারত না ।

ফুটবল মানেই সংগ্রামের গল্প । আইএসএল পরবর্তী ভারতীয় ফুটবলে সেই ছবিটা আরও কঠিন । স্বীকৃতির নিশ্চয়তা নেই । প্রচারের আর্ক লাইট পড়ার জো নেই । শুধুই আছে বঞ্চনা ও তাচ্ছিল্যের গল্প । ব্যর্থতার সামান্য ঠোকাঠুকিতে যে গল্পে কটাক্ষের শর তড়িৎ গতিতে ছুটে আসে । রবি হাঁসদার সন্তোষ ট্রফিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পেছনে রয়েছে সেইরকম লড়াইয়ের কথা ।

পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার অন্তর্গত মশারু গ্রামের আদিবাসী পরিবারের ছেলে রবি । দ্রারিদ্রের সেখানে বাস বারোমাস । নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থায় চর্মগোলককে সঙ্গী করে জীবনের রাজপথে দৌড়নোর ইচ্ছে সাধারণভাবে বিলাসিতা মনে হতে পারে । পায়ে পায়ে প্রতিকুলতার মাঝে রবির ফুটবলার হয়ে ওঠা । রবির ফুটবল দেখতে মাঠে নিয়মিত আসতেন ওর বাবা । স্বপ্ন দেখতেন ছেলে ফুটবলার হয়েছে । সেই বাবার আচমকা মৃত্যু দিশেহারা করে দিয়েছিল রবিকে । মনে হয়েছিল, এবার ফুটবলটাই ছেড়ে দিতে হবে । ফুটবল এবং জীবনজীবিকার টানাপোড়েনের মধ্যে বাবার অপূর্ণ ইচ্ছেকে মর্যাদা দেওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন রবি । তাই মাস ছ'য়েক আগে খেলা ছেড়ে বাবার টোটো নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েননি । কিংবা মায়ের সঙ্গে চাষবাসের কাজে নেমে পড়েননি । আর সে জন্যই চলতি সন্তোষ ট্রফির সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে লেখা রইল এক স্ট্রাইকারের নাম, তিনি রবি হাঁসদা ।

Bengal Footballer Rabi Hansda Shines Bright Amid All Odds
সঞ্জয় সেনের প্রশিক্ষণাধীন বাংলা দলের এই সাফল্য আত্মত্যাগের রূপকথা (ইটিভি ভারত)

কল্যাণীতে বাছাই পর্ব ও হায়দরাবাদে মূলপর্ব মিলিয়ে বছর পঁচিশের রবির ঝুলিতে মোট 12 গোল । কল্যাণীতে প্রাথমিক পর্বে শেষ খেলার দিন উপস্থিত ছিলেন রবির স্ত্রী এবং দেড় বছরের ছোট্ট সন্তান । মাঠের ধারে জালের বাইরে অপেক্ষারত গর্বিত স্ত্রী’র সুখের হাসি, সন্তানের মুখে বাবার জন্য আদুরে দুষ্টুমিতে রবির মুখে গোধুলির আলো । সেদিন তিনি বলছিলেন জীবনের লড়াইয়ের কথা । বলেছিলেন আর্থিক অনিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তার কথা ।

সর্বভারতীয় স্তরে মনে রাখার মতো বাঙালি ফুটবলার নেই বলে আক্ষেপ। কোন পথে বাঙালি ফিরে পাবে তার ফুটবল ঐতিহ্য তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত । ভূমিপুত্র খেলাও, বয়সভিত্তিক লিগ কর, কত মত । লক্ষ কাঁদুনির মধ্যে এই সন্তোষ ট্রফিতে রবির উত্থান তাঁদের কাছে বড় জবাব ।

পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার অন্তর্গত মশারু গ্রামের আদিবাসী পরিবারের ছেলের ফুটবলের হাত ধরে জীবনের রাজপথে দৌড়নোর ঋত্বিক অসিত রায় । জনাইয়ের এই ফুটবল কর্তার হাত ধরে কলকাতা লিগে কাশীপুর সরস্বতী ক্লাবে সই করেছিলেন রবি । সেখান থেকে রেনবো ঘুরে কাস্টমসের হয়ে খেলে বাংলা দলের হয়ে জাতীয় গেমসে প্রতিনিধিত্ব । বাংলাকে জাতীয় গেমসে চ্যাম্পিয়ন করায় বড় ভূমিকা ছিল রবির । তারপরেও ছবিটা উজ্জ্বল হয়নি । সন্তোষ ট্রফির বাছাই পর্বে খেলতে গিয়ে 2023 সালের শুরুতে হাঁটুতে চোট । যার জেরে বছরটাই মাঠের বাইরে কেটেছিল । রবির সেইসময় রুটিরোজগার ছিল ‘খেপ’ খেলা । চোটের ধাক্কায় সেটাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভীষণই হতাশায় ডুবে গিয়েছিলেন । এই সময়ে পরিত্রাতা হন কাস্টমস ক্লাবের কর্তারা । এই যোগাযোগে ফের রবিদয় । কিন্তু প্রতিবন্ধকতা রবির প্রতিটি চলার বাঁকে ।

Bengal Footballer Rabi Hansda Shines Bright Amid All Odds
বছরের শেষ রাতে ‘উষাকাল’ বঙ্গ ফুটবলে (ইটিভি ভারত)

এ বছর বাবার আচমকা মৃত্যু । পাশে ফের কাস্টমস ক্লাবের কর্তারা । কলকাতা লিগে 9 গোল করার পরে সন্তোষ ট্রফিতে একডজন রবি-ম্যাজিক । সুনীল ছেত্রীর ভক্ত এবার সামনে তাকাতে চান । বাবাকে হারানোর আক্ষেপ চোখে-মুখে । কয়েকটি কথার পরেই প্রয়াত বাবার কথা বলেন রবি । সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হলে বাংলা দলকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী । ইস্টবেঙ্গল ক্লাবও সংবর্ধনা দেওয়ার কথা বলেছে ।

Bengal Footballer Rabi Hansda Shines Bright Amid All Odds
2025 সালে বাংলার ফুটবল এখন নতুন রবির আলোয় ভরে ওঠার অপেক্ষায় (ইটিভি ভারত)

মা, স্ত্রী আর দেড় বছরের মেয়েকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন রবির মুখে । আইএসএলের টিমে সুযোগ পেয়ে নিজেকে সফল স্ট্রাইকার হিসেবে প্রমাণ করার স্বপ্নও রয়েছে । তারপর জাতীয় দলের দরজা খোলার চেষ্টা । লক্ষ্যপূরণের জন্য রবি সন্তোষ ট্রফিতে নিজেকে নিঙড়ে দিয়েছেন । সঞ্জয় সেনের প্রশিক্ষণাধীন বাংলা দলের এই সাফল্য আত্মত্যাগের রূপকথা । বিদায়ী বছরের শেষ রাতে নিজামের শহরে রবি তেজে বাংলার ফুটবলের নতুন সূর্যোদয় । 2025 সালে বাংলার ফুটবল এখন নতুন রবির আলোয় ভরে ওঠার অপেক্ষায় ।

আরও পড়ুন

কলকাতা, 1 জানুয়ারি: প্রয়াত কিংবদন্তি ফুটবলার মহম্মদ হাবিবের শহরে গোলের নজির ছুঁয়ে শ্রদ্ধা রবি হাঁসদার । কিংবদন্তিকে বাঙালি স্ট্রাইকারের সেরা শ্রদ্ধাঞ্জলির মাধ্যম এর থেকে ভালো কিছু হওয়ার ছিল না । রবি আলোয় মিঞা তর্পণে ফুটবলের জয়গান । একটি সন্তোষ ট্রফিতে এক ডজন গোল । তাও আবার বাঙালি স্ট্রাইকারের পা থেকে ৷ বিদায়ী বছরের শেষ দিনে এর থেকে ভালো ছবি বাংলার ফুটবলের জন্যও বোধহয় হতে পারত না ।

ফুটবল মানেই সংগ্রামের গল্প । আইএসএল পরবর্তী ভারতীয় ফুটবলে সেই ছবিটা আরও কঠিন । স্বীকৃতির নিশ্চয়তা নেই । প্রচারের আর্ক লাইট পড়ার জো নেই । শুধুই আছে বঞ্চনা ও তাচ্ছিল্যের গল্প । ব্যর্থতার সামান্য ঠোকাঠুকিতে যে গল্পে কটাক্ষের শর তড়িৎ গতিতে ছুটে আসে । রবি হাঁসদার সন্তোষ ট্রফিতে সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার পেছনে রয়েছে সেইরকম লড়াইয়ের কথা ।

পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার অন্তর্গত মশারু গ্রামের আদিবাসী পরিবারের ছেলে রবি । দ্রারিদ্রের সেখানে বাস বারোমাস । নুন আনতে পান্তা ফুরোনোর অবস্থায় চর্মগোলককে সঙ্গী করে জীবনের রাজপথে দৌড়নোর ইচ্ছে সাধারণভাবে বিলাসিতা মনে হতে পারে । পায়ে পায়ে প্রতিকুলতার মাঝে রবির ফুটবলার হয়ে ওঠা । রবির ফুটবল দেখতে মাঠে নিয়মিত আসতেন ওর বাবা । স্বপ্ন দেখতেন ছেলে ফুটবলার হয়েছে । সেই বাবার আচমকা মৃত্যু দিশেহারা করে দিয়েছিল রবিকে । মনে হয়েছিল, এবার ফুটবলটাই ছেড়ে দিতে হবে । ফুটবল এবং জীবনজীবিকার টানাপোড়েনের মধ্যে বাবার অপূর্ণ ইচ্ছেকে মর্যাদা দেওয়াকেই প্রাধান্য দিয়েছিলেন রবি । তাই মাস ছ'য়েক আগে খেলা ছেড়ে বাবার টোটো নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে পড়েননি । কিংবা মায়ের সঙ্গে চাষবাসের কাজে নেমে পড়েননি । আর সে জন্যই চলতি সন্তোষ ট্রফির সর্বোচ্চ স্কোরার হিসেবে লেখা রইল এক স্ট্রাইকারের নাম, তিনি রবি হাঁসদা ।

Bengal Footballer Rabi Hansda Shines Bright Amid All Odds
সঞ্জয় সেনের প্রশিক্ষণাধীন বাংলা দলের এই সাফল্য আত্মত্যাগের রূপকথা (ইটিভি ভারত)

কল্যাণীতে বাছাই পর্ব ও হায়দরাবাদে মূলপর্ব মিলিয়ে বছর পঁচিশের রবির ঝুলিতে মোট 12 গোল । কল্যাণীতে প্রাথমিক পর্বে শেষ খেলার দিন উপস্থিত ছিলেন রবির স্ত্রী এবং দেড় বছরের ছোট্ট সন্তান । মাঠের ধারে জালের বাইরে অপেক্ষারত গর্বিত স্ত্রী’র সুখের হাসি, সন্তানের মুখে বাবার জন্য আদুরে দুষ্টুমিতে রবির মুখে গোধুলির আলো । সেদিন তিনি বলছিলেন জীবনের লড়াইয়ের কথা । বলেছিলেন আর্থিক অনিশ্চয়তা নিয়ে চিন্তার কথা ।

সর্বভারতীয় স্তরে মনে রাখার মতো বাঙালি ফুটবলার নেই বলে আক্ষেপ। কোন পথে বাঙালি ফিরে পাবে তার ফুটবল ঐতিহ্য তা নিয়ে নানা মুনির নানা মত । ভূমিপুত্র খেলাও, বয়সভিত্তিক লিগ কর, কত মত । লক্ষ কাঁদুনির মধ্যে এই সন্তোষ ট্রফিতে রবির উত্থান তাঁদের কাছে বড় জবাব ।

পূর্ব বর্ধমানের ভাতার থানার অন্তর্গত মশারু গ্রামের আদিবাসী পরিবারের ছেলের ফুটবলের হাত ধরে জীবনের রাজপথে দৌড়নোর ঋত্বিক অসিত রায় । জনাইয়ের এই ফুটবল কর্তার হাত ধরে কলকাতা লিগে কাশীপুর সরস্বতী ক্লাবে সই করেছিলেন রবি । সেখান থেকে রেনবো ঘুরে কাস্টমসের হয়ে খেলে বাংলা দলের হয়ে জাতীয় গেমসে প্রতিনিধিত্ব । বাংলাকে জাতীয় গেমসে চ্যাম্পিয়ন করায় বড় ভূমিকা ছিল রবির । তারপরেও ছবিটা উজ্জ্বল হয়নি । সন্তোষ ট্রফির বাছাই পর্বে খেলতে গিয়ে 2023 সালের শুরুতে হাঁটুতে চোট । যার জেরে বছরটাই মাঠের বাইরে কেটেছিল । রবির সেইসময় রুটিরোজগার ছিল ‘খেপ’ খেলা । চোটের ধাক্কায় সেটাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ভীষণই হতাশায় ডুবে গিয়েছিলেন । এই সময়ে পরিত্রাতা হন কাস্টমস ক্লাবের কর্তারা । এই যোগাযোগে ফের রবিদয় । কিন্তু প্রতিবন্ধকতা রবির প্রতিটি চলার বাঁকে ।

Bengal Footballer Rabi Hansda Shines Bright Amid All Odds
বছরের শেষ রাতে ‘উষাকাল’ বঙ্গ ফুটবলে (ইটিভি ভারত)

এ বছর বাবার আচমকা মৃত্যু । পাশে ফের কাস্টমস ক্লাবের কর্তারা । কলকাতা লিগে 9 গোল করার পরে সন্তোষ ট্রফিতে একডজন রবি-ম্যাজিক । সুনীল ছেত্রীর ভক্ত এবার সামনে তাকাতে চান । বাবাকে হারানোর আক্ষেপ চোখে-মুখে । কয়েকটি কথার পরেই প্রয়াত বাবার কথা বলেন রবি । সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হলে বাংলা দলকে সংবর্ধনা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী । ইস্টবেঙ্গল ক্লাবও সংবর্ধনা দেওয়ার কথা বলেছে ।

Bengal Footballer Rabi Hansda Shines Bright Amid All Odds
2025 সালে বাংলার ফুটবল এখন নতুন রবির আলোয় ভরে ওঠার অপেক্ষায় (ইটিভি ভারত)

মা, স্ত্রী আর দেড় বছরের মেয়েকে নিয়ে বাঁচার স্বপ্ন রবির মুখে । আইএসএলের টিমে সুযোগ পেয়ে নিজেকে সফল স্ট্রাইকার হিসেবে প্রমাণ করার স্বপ্নও রয়েছে । তারপর জাতীয় দলের দরজা খোলার চেষ্টা । লক্ষ্যপূরণের জন্য রবি সন্তোষ ট্রফিতে নিজেকে নিঙড়ে দিয়েছেন । সঞ্জয় সেনের প্রশিক্ষণাধীন বাংলা দলের এই সাফল্য আত্মত্যাগের রূপকথা । বিদায়ী বছরের শেষ রাতে নিজামের শহরে রবি তেজে বাংলার ফুটবলের নতুন সূর্যোদয় । 2025 সালে বাংলার ফুটবল এখন নতুন রবির আলোয় ভরে ওঠার অপেক্ষায় ।

আরও পড়ুন

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.