কলকাতা, 8 জুন: লক্ষ্য ছিল তিরিশ পার করার ৷ সেই লক্ষ্য তো পূরণ হয়ইনি ৷ উলটে 2019 সালের চেয়ে খারাপ হয়েছে বিজেপির ৷ স্বাভাবিকভাবেই তাই বাংলার গেরুয়া কর্মী-সমর্থকদের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ ক্রমশ বাড়তে শুরু করেছে ৷ পরিস্থিতি এমনই যে বিভিন্ন জেলা থেকে কর্মীরা রাজ্য দফতরে ছুটে আসছেন ৷ সেখানে এসে মিডিয়ার সামনে ক্ষোভ উগড়ে দিচ্ছেন ৷
তেমনই একজন শামসুর রহমান ৷ হুগলির জাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দা এই ব্যক্তি আদি বিজেপি কর্মী এবং বিজেপি বাঁচাও-এর সদস্য ৷ দিনকয়েক আগে তিনি কলকাতার মুরলিধর সেন লেনে বিজেপির পার্টি অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে দলীয় নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একাধিক বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন ৷
তাঁর দাবি, বিজেপির বর্তমান রাজ্য কমিটি তৃণমূলের তৈরি করে দেওয়া ৷ তিনি সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের সঙ্গে যোগসাজশের অভিযোগ করেছেন ৷ আর বর্তমান রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারকে ‘রাবার স্ট্যাম্প সভাপতি’ বলে কটাক্ষ করেছেন ৷ একই সঙ্গে সুকান্তর বিরুদ্ধে তিনি অবৈধ আর্থিক লেনদেনের অভিযোগও তুলেছেন ৷
কী কী বলেছেন তিনি, দেখে নেওয়া যাক একজনরে -
আদি-নব্য লড়াই: শামসুর রহমান বলেন, ‘‘বিষয়টি আদি ও নব্য়ের লড়াই নয় ৷ বিজেপির শুরুর দিকে তো এই সমস্যা ছিল না ৷ বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে ৷ সেই কারণে সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) ও রাজ্য সভাপতিকে সরানো হয়েছে ৷ বর্তমান সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) ও রাজ্য কমিটি তৃণমূলের তৈরি ৷ বর্তমান সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) নিজে বলেছেন যে তিনি মমতা-অভিষেককে সমর্থন করেছেন ৷ প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে ওঁর যোগাযোগ ছিল ৷’’
তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক: শামসুর রহমান বলেন ‘‘এই কারণেই বিজেপি বাঁচাও মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে ৷ গত বছর 10 জুন অপদার্থ সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন)-কে সরানোর দাবিতে আন্দোলন করেছি ৷ সুকান্ত মজুমদার তো রাবার স্ট্যাম্প সভাপতি ৷ তিনি সংগঠন সামলাতে পারেননি ৷ এখন সাফাই দিয়ে পালানোর মনোভাব নিয়েছেন ৷ নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে ওঁর পদত্যাগ করা উচিত ৷ উনি পদের মোহে রয়েছেন ৷ উনি অবৈধ লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত আছেন ৷ সেই কারণেই তিনি পদ ছাড়ছেন না ৷’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘আর্থিক লেনদেনে যুক্ত রাজ্য সভাপতি ৷ অনুব্রত মণ্ডল জেলে ৷ তার জেলায় দু’টো লোকসভা আসনে কী করে হারল বিজেপি ? রাজ্য সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) ও সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ চট্টোপাধ্য়ায় কয়লা মাফিয়ার থেকে টাকা পান ৷ এঁদের বিরুদ্ধে ইডি-সিবিআই তদন্ত করুক ৷’’
খারাপ ফলের দায় কার: শামসুর রহমান বলেন, ‘‘সংগঠন নেই ৷ যে কোনও রাজনৈতিক দল সংগঠনের উপর নির্ভর করে ৷ সংগঠন থাকলে এই অবস্থা হতো না ৷ কেন্দ্রকে ভুল রিপোর্ট দিচ্ছেন নেতারা ৷ অমিত মালব্য ভুরি ভুরি ভুল রিপোর্ট দিচ্ছেন ৷’’
দিলীপ ঘোষ প্রসঙ্গে: শামসুর রহমান বলেন, ‘‘ভালো কাজ করার পরও কেন সরানো হবে ? তাঁকে কেন্দ্রীয় পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল ৷ অফিস থেকে সরিয়ে দেওয়া হল ৷’’
এখন প্রশ্ন হল, কে এই শামসুর রহমান ? তাঁর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল যে তিনি 2018 সালে হুগলি জেলা পরিষদের প্রার্থী ছিলেন ৷ তার আগে শ্রীরামপুর ও অবিভক্ত হুগলি জেলার শিক্ষা সেলের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ৷ এর পর রাজ্যে সংখ্যালঘু মোর্চার কোষাধ্যক্ষ করা হয় তাঁকে ৷ সেখান থেকে সংখ্যালঘু মোর্চায় রাজ্যের সহ-সভাপতিও হন তিনি ৷ বর্তমানে শামসুর রহমান বিজেপির কোনও পদে নেই ৷ তবে এবারের ভোটে তিনি শ্রীরামপুরে বিজেপি প্রার্থীর প্রচারক হিসেবে কাজ করেছেন ৷
তিনি জানিয়েছেন, বিজেপিতে সাংগঠনিক হাল ফেরাতে তাঁরা আন্দোলনে নামবেন ৷ তাঁরা ইতিমধ্যে বিজেপির জাতীয় সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়েছেন ৷
এখন দেখার বিক্ষোভ সামলাতে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব কী ব্যবস্থা নেয় ?