নয়াদিল্লি, 27 জানুয়ারি: দুর্নীতি ইস্যুতে ফের বিরোধীদের আক্রমণ করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ শনিবার তিনি দাবি করেন যে যাঁরা শৃঙ্খলা ভাঙেন, বিরোধীরা তাঁদের পাশে গিয়ে দাঁড়ান ৷ একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, আদালত থেকে দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিদের গৌরবান্বিত করা আসলে প্রশাসন, বিচার বিভাগ ও সংবিধানের অপমান ৷
সর্বভারতীয় প্রিসাইডিং অফিসারদের সম্মেলনে এ দিন একটি ভিডিয়ো বার্তা দেন প্রধানমন্ত্রী ৷ সেখানেই তিনি এই কথা বলেন৷ তাঁর আরও বক্তব্য, আজকের পরিস্থিতিতে আইনসভা ও কমিটিগুলির দক্ষতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে সজাগ নাগরিকরা প্রতিটি প্রতিনিধিকে যাচাই করে ।
উল্লেখ্য, বিহারে এখন রাজনৈতিক পরিস্থিতি টালমাটাল হয়ে রয়েছে ৷ জেডিইউ-এর নীতীশ কুমার আরজেডি ও কংগ্রেসের সঙ্গে ছেড়ে বিজেপির হাত ধরার জন্য প্রস্তুত ৷ ঠিক সেই পরিস্থিতিতে এ দিন প্রধানমন্ত্রীর এই মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ৷ কারণ, আরজেডি সুপ্রিমো লালু প্রসাদ যাদব বিরোধীদের জোট ‘ইন্ডিয়া’য় রয়েছেন ৷ তিনি পশুখাদ্য মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ৷ শারীরিক অসুস্থতার কারণে জামিনে জেলের বাইরে রয়েছেন ৷ মনে করা হচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রীর এ দিনের মন্তব্য, সেই দিকেই ইঙ্গিত করছে ৷
তাই প্রিসাইডিং অফিসারদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আবেদন, কিভাবে আইনসভায় শৃঙ্খলা মেনে চলা উচিত, তা নিয়ে আলোচনা করা উচিত ৷ তিনি বলেন, "আজ আমরা আরও একটি পরিবর্তনের সাক্ষী হচ্ছি । আগে সংসদের কোনও সদস্যের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে, সবাই তাঁর থেকে দূরে সরে যেত । কিন্তু আজকে আমরা দেখছি, এমনকি আদালতের মাধ্যমে দোষী সাব্যস্ত হওয়া দুর্নীতিবাজরাও প্রকাশ্যে মহিমান্বিত হচ্ছেন... এটি কার্যনির্বাহী বিভাগের অপমান । এটি বিচার বিভাগের অপমান । এটি ভারতের মহান সংবিধানেরও অপমান । এই সম্মেলনে এই বিষয়ে আলোচনা এবং সুনির্দিষ্ট পরামর্শ ভবিষ্যতের জন্য একটি নতুন রাস্তা তৈরি করবে ৷’’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, "একটা সময় ছিল, যখনই সংসদের কোনও সদস্য শৃঙ্খলা লঙ্ঘন করতেন এবং যদি নিয়ম অনুসারে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হত, তখন হাউসের অন্যান্য সিনিয়র সদস্যরা সেই সদস্যকে বোঝাতেন, যে ভুলগুলি সংসদের পরিবেশ এবং এর শৃঙ্খলাকে প্রভাবিত করে, ভবিষ্যতে যাতে তাঁরা সেই কাজ না করেন । কিন্তু বর্তমান সময়ে, আমরা দেখেছি যে কিছু রাজনৈতিক দল এই জাতীয় সদস্যদের সমর্থনে দাঁড়িয়ে তাঁদের ভুলকে রক্ষা করতে শুরু করেছে । এই পরিস্থিতি সংসদে হোক বা বিধানসভায়, যে কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয় । কিভাবে আইনসভার শৃঙ্খলা বজায় রাখা যায়, এই নিয়ে আলোচনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷’’
প্রধানমন্ত্রীর এ দিনের ভাষণে আরও অনেক বিষয় উঠে এসেছে ৷ তাঁর মধ্যে অন্যতম, সংসদে মহিলা সংরক্ষণ বিল ৷ 75তম সাধারণতন্ত্র দিবসের পরই এই সম্মেলন হওয়ায়, তার একটি বিশেষ তাৎপর্য তৈরি হল বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ এবারের সম্মেলনের আলোচনার বিষয় বিধান মণ্ডল ও বিভিন্ন কমিটির কার্যকারিতা ৷ সেই বিষয়টিও ভাষণে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী ৷ পাশাপাশি জানান, সাধারণ মানুষ জনপ্রতিনিধিদের কাজ খুবই কড়া নজরে পর্যবেক্ষণ করেন ৷ তাছাড়া প্রিসাইডিং অফিসারদের প্রতি তাঁর আবেদন যে তাঁরা এমন কিছু করুন, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে নজির হয়ে থাকে ৷
এবারের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে মহারাষ্ট্র বিধানসভা চত্বরে ৷ এবার 84তম সম্মেলন (অল ইন্ডিয়া প্রিসাইডিং অফিসার্স কনফারেন্স) আয়োজন করা হয়েছে ৷ সম্মেলনের সূচনা করেন লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লা ৷
সংবাদসংস্থা - এএনআই
আরও পড়ুন: