কলকাতা, 19 এপ্রিল: এবারের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী ভোট এককাট্টা করার চেষ্টা করছে বাম-কংগ্রেস । সেই সামঝোতায় আইএসএফ থাকল না । অন্যদিকে, একই জেলায় পাশাপাশি দুই কেন্দ্রে দুই দলের দুই শীর্ষনেতা প্রার্থী । বহরমপুরে অধীর, মুর্শিদাবাদে মহম্মদ সেলিম । এই সামগ্রিক বিষয় নিয়ে ইটিভি ভারতের মুখোমুখি মহম্মদ সেলিম ।
ইটিভি ভারত: প্রচারে কেমন চলছে ? সাধারণ মানুষের সাড়া পাচ্ছেন ?
মহম্মদ সেলিম: সব গ্রামে, সব বাড়িতে পৌঁছে যাওয়ার চেষ্টা করছি । রমজান মাসে প্রচণ্ড রোদে দিনভর কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না । তাই, যেখানে কর্মিসভা হচ্ছে, সেখানে মিছিল করছি । মুর্শিদাবাদ লোকসভা পুরোটাই মুসলিম অধ্যুষিত নয় । হিন্দু এলাকার বহু মানুষ বলছেন তৃণমূলকে আটকাতে বিজেপি করেছিলাম । কিন্তু, এখন দেখা যাচ্ছে দুই ফুল এক । হেমন্ত সোরেন, কেজরিওয়াল গ্রেফতার হচ্ছে । তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের গ্রেফতার করা হচ্ছে । আর এদিকে কাকুর কন্ঠস্বর নিতে ছ’মাস লাগছে । রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে না । মুখ্যমন্ত্রী (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ও তাঁর ভাইপোর (অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) দিকে হাত বাড়াচ্ছে না তদন্তকারী সংস্থা । এসব সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরে হতাশ । আমাকে ওখানে প্রার্থী পেয়ে বহু মানুষ খুশি । বামপন্থী-কংগ্রেসপন্থী ছাড়াও বহু মানুষ আমার হয়ে রাস্তায় নামছেন ।
ইটিভি: অধীররঞ্জন চৌধুরী বলেছেন সেলিম জিতে বসে আছেন ! আপনিও কি তাই মনে করেন ? কী বলবেন ? একই জেলায় পাশাপাশি দুই কেন্দ্রে দুই দলের দুই শীর্ষ নেতা, বাড়তি সুবিধা পাচ্ছেন ?
মহম্মদ সেলিম: প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হওয়ার আগে অধীর মুর্শিদাবাদ জেলার নেতা । তিনি ওই জেলাকে হাতের তালুর মতো চেনেন । তবে, আমরা বাম-কংগ্রেস এক হয়েছি তৃণমূল-বিজেপির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে । সেই জেলার হৃতগৌরব ফিরিয়ে আনার জন্যই জনপ্রাণ দিয়ে লড়াই করছি । কারণ, ঐতিহাসিক গুরুত্ব তো সকলের জানা । ওই জেলা থেকেই প্রণববাবু রাষ্ট্রপতি হয়েছেন । অধীর আমার প্রচারে আমি তাঁর প্রচারে থাকছি । মুর্শিদাবাদ ও বহরমপুর দুই লোকসভার বর্ডার এলাকায় দু’জন দু’জনের জন্যই বলছি । ঈদ-নববর্ষের শুভেচ্ছার যৌথ হোর্ডিং হয়েছে ।
ইটিভি: কোচ মহম্মদ সেলিম প্রার্থী, ক্যাপ্টেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায় প্রার্থী নয় কেন ?
মহম্মদ সেলিম: মীনাক্ষী আন্দোলন সংগ্রামের সাথী । কমরেড । সে সকলের প্রচারে থাকবেন । আর দল আমাকে ওখানে প্রার্থী করেছে ।
ইটিভি: সবুজসাথী সাইকেল চালিয়ে প্রচার করছেন । তৃণমূল বলছে তাদের সুবিধা হচ্ছে ?
মহম্মদ সেলিম: সাইকেলটা সরকারের । আমার ভালো হচ্ছে তৃণমূল সেটাকে প্রচার করছে । এরপর রেলে উঠলে বলবেন তো রেলটা মোদির । এরা সরকারি সম্পত্তিকে বাপের সম্পত্তি বলে মনে করে । এরা গণতন্ত্র বিরোধী । বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য প্ৰথম মেয়েদের সাইকেল দেওয়া শুরু করেছিলেন । কিন্তু, এখানকার সাইকেল ঠিক করতেই অনেক টাকা খরচ হয়ে যাচ্ছে ।
ইটিভি: বাম-কংগ্রেস সমঝোতা করলেও আইএসএফ এল না ? কতটা ক্ষতি ?
মহম্মদ সেলিম: আদৌ কোনও সমস্যা হবে না । এই 42টি আসনে বামফ্রন্ট ও তাঁর বাইরের শরিকদের সঙ্গে সমঝোতা করেছে । তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী ভোট যাতে এককাট্টা না হয়, তার জন্য ইলেক্টোরাল বন্ডের টাকা ছুড়ছে । তারা চাইছে এই জোটটা না তৈরি হয় । কনফিউশন তৈরির চেষ্টা চলছে । আমরা আশাবাদী, বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী ভোট যাতে ভাগাভাগি না হয় ।
ইটিভি: এত চেষ্টা করলেন, তবুও জোটে নওশাদ-রা এল না !
মহম্মদ সেলিম: তুমি ঘোড়াকে নিয়ে যেতে পারো জলের কিনারায় । তুমি জোর করে ঘোড়াকে জল খেতে বাধ্য করতে পারবে ? আমরা বিজেপি-তৃণমূল বিরোধী রাজনৈতিক অবস্থানে তাঁদের নিয়ে এসেছিলাম । এবার তাঁরা ঢোক গিলবেন না, জল গিলবেন, তাঁদের ব্যাপার ।
ইটিভি: মাইনোরিটি ভোট ব্যাংক ধাক্কা খাবে না ?
মহম্মদ সেলিম: 'মাইনোরিটি ভোট ব্যাংক' কথাটা আরএসএসের কথা । ব্যাংকে তো টাকা থাকার কথা । এখানে নেই কেন ? আইএসএফ কি মাইনরিটি ভোট ব্যাংকের মধ্যে পড়ে ? এটা কে ঠিক করল ? এটা ঠিক গরিব প্রান্তিক মানুষের মধ্যে একটা উৎসাহ দেখা গিয়েছিল । সেটাকে দমানোর জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রীয় এজেন্সি কাজ করছে জল ঢালার জন্য । তবে, তৃণমূল-বিজেপি বিরোধী ভোট ভাগ হবে না । উৎসাহে ভাটা পড়বে না ।
আরও পড়ুন: