ফুরফুরা, 5 এপ্রিল: লোকসভা নির্বাচনে জোট হল না বাম কংগ্রেস ও আইএসএফের। গত বিধানসভা নির্বাচনে সংযুক্ত মোর্চার অন্যতম মুখ হয়েছিলেন আইএসএফের নওশাদ সিদ্দিকী। তারপর থেকে একাধিক নির্বাচনে আইএসএফের সঙ্গে জোট হয়নি । এবারও দড়ি টানাটানি হলেও জোট বা সমঝোতা কিছুই হয়নি তিন দলের ।
রাজনৈতিক মহলের দাবি, এতে বাড়তি সুবিধা হবে তৃণমূল ও বিজেপির । কিন্তু তাতে বিশেষ পাত্তা দিতে নারাজ নওশাদ সিদ্দিকী । নতুন দল ও নতুন মুখ নিয়ে একলা লড়ার দাবি করেছেন তিনি । তাঁর বক্তব্য, "জোট হলে সুবিধা হত । এখন কষ্ট হবে ৷ কিন্তু তৃণমূল ও বিজেপির বিরুদ্ধে লড়বেন আইএসএফ প্রার্থীরা।" তবে এর জন্য যে আগামী নির্বাচনে ফের জোটের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল সেটা নয় । এরপর জোট শরিকরা চাইলে ফের জোটের ব্যাপারে আশাবাদী আইএসএফের একমাত্র বিধায়ক । জোট ভবিষ্যৎ থেকে শুরু করে তাঁর প্রার্থী না হওয়া, সব বিষয়ে কথা ইটিভি ভারতের সঙ্গে কথা বললেন নওশাদ সিদ্দিকী ৷
ইটিভি ভারত : ডায়মন্ড হারবারে প্রার্থী হওয়ার ইচ্ছা ছিল আপনার !
নওশাদ সিদ্দিকী : দলের তরফে কিছু কারণ দেখিয়ে লোকসভা ভোট থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে আমাকে। তাই আমি প্রার্থী হইনি ।
ইটিভি ভারত : ডায়মন্ড হারবারে যিনি প্রার্থী হয়েছেন তিনি খুব একটা চেনা মুখ নন । সেখানে কী খুব একটা প্রভাব পড়বে ?
নওশাদ সিদ্দিকী : আমাদের দল খুব একটা পুরনো নয়। সেখানে স্বভাবতই নতুন মুখই আসবে। ডায়মন্ড হারবারের প্রার্থী হয়েছেন মজনু লস্কর । উনি আমাদের দলের আইনের বিষয়টি দেখেন । 2021 সালের আগে নওশাদ সিদ্দিকীও পরিচিত মুখ ছিল না । নির্বাচনে জয়লাভের পর মানুষ আমায়0 চিনেছে । আমাদের 100 বছরের দল নয় বা বিজেপির গর্ভে জন্ম হওয়া দলও নয় । আমরা যাঁদের প্রার্থী করেছি তাঁদের মধ্যে যথেষ্টই সম্ভাবনা আছে । আগামিদিনে তাঁরা মুখ হয়ে উঠবে ।
ইটিভি ভারত : নির্বাচনী জোট নিয়ে কী বলবেন ? ভবিষ্যতে জোটের আশা থাকবে ?
নওশাদ সিদ্দিকী : ভোট শেষ জোট শেষ আমরা বলিনি । সংযুক্ত মোর্চার শরিক ও সর্বভারতীয় দলের একজন বলেছেন । বিধানসভা নির্বাচনের পর পঞ্চায়েত নির্বাচন হয়েছে । সেখানেও রাজ্য স্তরে জোট তৈরি করেনি । পৌরসভা নির্বাচনে তো কিছুই হয়নি । বিভিন্ন সময় মাদ্রাসা, সমিতি নির্বাচনেও জোট নিয়ে প্রতি উত্তর পাওয়া যায়নি । তারপরেও আমরা চেষ্টা করেছিলাম বিজেপি ও তৃণমূলকে পরাস্ত করার জন্য জোট করব । প্রধান দুই দলকে হারাব । ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করতে আমরা একা লড়াই করব না বলেই এতদিন ধৈর্য ধরেছিলাম । আমাদের ডাকে যদি কেউ না এগিয়ে আসে তাহলে তো আমাদের একলা চলো নীতি নিতে হয়েছে ।
ইটিভি ভারত : আইএসএফের শেষ শর্ত ছিল শ্রীরামপুরের বামপ্রার্থী তুলে নেওয়ার জন্য কিন্তু সেটাও মানা হয়নি । এতে আখেরে সুবিধা হবে তৃণমূল ও বিজেপির ।
নওশাদ সিদ্দিকী : কার সুবিধে হবে, কার অসুবিধা হবে, তার জন্য রাজনৈতিক ময়দানে আসিনি । 2019 সাল থেকে আমরা বিজেপিকে আটকানোর চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু দেখলাম 2021 সালে বিজেপিকে বাড়ির বাইরে আনা হল। এখন বেডরুমে আনার জন্য চেষ্টা চলছে । 2021 সালের নির্বাচনের আগে যখন আমরা দল তৈরি করলাম তখন এটা হাওয়া তুলে দিয়েছিল যে বিজেপি এবার এসে যাবে ।কেউ কেউ বলেছিল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী করা দরকার নেই । লড়াইটা না করলে তাহলে বিজেপি-তৃণমূল যে বাইনারি তৈরি করে দিয়েছিল তার জেরে পশ্চিমবাংলায় প্রকৃত বিরোধী কণ্ঠ থাকত না ।
ইটিভি ভারত : জোট না হয়ে কার সুবিধা হয়েছে ?
নওশাদ সিদ্দিকী : আমরা এসেছি মানুষকে পরিত্রাণ দিতে । যখন ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে ছিল তখনও আমরা আবেদন করেছিলাম । গতকাল পর্যন্ত আমরা বিজেপি তৃণমূলের বিরুদ্ধে একসঙ্গে লড়ব তারও আবেদন জানিয়েছি । দুই দলকে হারাতে আরও শক্তিশালী করার জন্যই একসঙ্গে লড়ার আবেদন ছিল । সহজে যাতে হারানো যায়, সেই জন্য ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেছিলাম । এখন এদের হারানোর জন্য কষ্ট হবে । কিন্তু লড়াই করব ।
ইটিভি ভারত : জোট না হয়ে বিজেপি ও তৃণমূলের সুবিধা করে দিয়েছে
নওশাদ সিদ্দিকী : 18তম লোকসভা নির্বাচন চলছে । কেউ মুসলিমকে উদ্ধার করতে নেমেছিল । কেউ হিন্দুকে উদ্ধার করতে নেমেছিল । আখেরে সাধারণ মানুষের কোনও লাভ হয়নি । শেষমেশ দেখা গিয়েছে অভিষেকবাবু আদানি আম্বানিদের রকেট গতিতে সম্পত্তি বেড়ে গিয়েছে । লাভ লোকসানের অঙ্ক তাঁরাই বোঝে যাঁরা ভোট নেওয়ার সময় ভোটারের সঙ্গে রাজার মতো আচরণ করে। ভোট মিটে গেলেই ভোটারদের সঙ্গে প্রজার মতো আচরণ করে । আমরা চাই সবসময়ই নাগরিকের সম্মান দেব ৷ ভোটারদের সম্মান দেব ।
ইটিভি ভারত : আগের নির্বাচনগুলি থেকে দেখা গিয়েছে হিন্দু মুসলিম আলাদা আলাদা ভাগ হয়ে গিয়েছে । কী বলবেন ?
নওশাদ সিদ্দিকী : এবারে আর হবে না । ভুল বার্তা দিয়ে আগে বিভাজনের রাজনীতি হয়েছিল । আর কিছু মানুষ তৃণমূলের অত্যাচারে বিজেপিতে চলে গিয়েছিল । আজকে আবার তারা ফিরে আসছে । সকলেই বুঝতে পারছে তৃণমূল যেমন হিংস্র বিজেপিও কম নয় । এরা দুজনেই সামনে থেকে বিরোধিতা করছে । আর পিছনে ফুল মিষ্টি পাঠাচ্ছে । সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বাড়িতে জয় শাহর মেনু ঠিক করে দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই বিজেমূলের ব্যাপারটা সকলেই বুঝে গিয়েছে । কৃষকের বিরুদ্ধে বিল পাস হয়ে যাচ্ছে । তাহলে তৃণমূলকে সংসদে পাঠিয়ে লাভটা কী হচ্ছে ?
ইটিভি ভারত : বিজেপি ও তৃণমূলের সঙ্গে লড়াটা কি কঠিন হবে ?
নওশাদ সিদ্দিকী : এই দুই দলের বিরুদ্ধে লড়ে জয়লাভ করাটা সহজ হওয়ার জন্য জোটের চেষ্টা করেছিলাম । এখন জোট নেই । একটু কষ্টকর হবে। কিন্তু পারব । আগামিদিনে জোটের নিয়ে কী হবে তা সময় কথা বলবে । তবে পরবর্তীকালে জোটের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী ।
আরও পড়ুন :