নয়াদিল্লি, 3 মার্চ: 2022 সালে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল ৷ তারপর জাতীয় রাজনীতি থেকে খানিকটা দূরেই সরে গিয়েছিলেন হর্ষ বর্ধন ৷ আজ পুরোপুরিভাবে রাজনীতি থেকেই নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা জানালেন রাষ্ট্রী স্বয়ং সেবক সংঘের এই সদস্য ৷ জানালেন, তিনি নিজের মূলে ফিরছেন ৷ অর্থাৎ, 55 বছর আগে মানুষের সেবার উদ্দেশ্যে চিকিৎসা শাস্ত্রকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন ৷ 55 বছর পর রাজনীতি থেকে অবসর নিয়ে ফের চিকিৎসক হিসেবে জীবন শুরু করতে চলেছেন বলে জানান হর্ষ বর্ধন ৷
আজ সোশাল মিডিয়া সাইটে একটি দীর্ঘ বিবৃতি দিয়েছেন এনিয়ে ৷ উল্লেখ্য, দিল্লির চাঁদনি চক লোকসভা থেকে জিতে সাংসদ হয়ে সংসদে গিয়েছিলেন হর্ষ বর্ধন ৷ এরপর মোদির মন্ত্রিসভায় দু’বারের স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন ৷ কিন্তু, এবার তাঁকে চাঁদনি চক থেকে বিজেপি প্রার্থী করেনি ৷ এরপরেই আজ এই সিদ্ধান্তের কথা জানালেন চাঁদনি চক লোকসভার বিদায়ী সাংসদ ৷
তিনি লেখেন, "তিরিশ বছরের গৌরবময় রাজনৈতিক কেরিয়ারকে আমি বিদায় জানাচ্ছি ৷ এই দীর্ঘ সময়ে আমি পাঁচবার বিধানসভা ও দু’বার লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করেছি এবং প্রত্যেকবার বিশাল ব্যবধানে জয়ী হয়েছি ৷ এমনকি দলের সংগঠনে ও সরকারে একাধিক সম্মানীয় পদ সামলেছি ৷ অবশেষে আমার শিকড়ে ফিরে যাচ্ছি ৷" এই শিকড় আর কিছু না, ডক্টর হর্ষ বর্ধনের আসল পরিচয়, চিকিৎসক ৷ সেই চিকিৎসার জগতে ফিরে যাওয়ার কথাই জানালেন তিনি ৷ কৃষ্ণ নগরে তাঁর চেম্বারে ফিরে গিয়ে মানুষের সেবা করবেন বলে জানিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৷
এখানেই শেষ নয়, হর্ষ বর্ধন জানিয়েছেন, কানপুরের জিএসভিএম মেডিক্যাল কলেজে যখন ভরতি হয়েছিলেন, তখন মানুষের সেবার কাজে নিজেকে নিযুক্ত করার শপথ নিয়েছিলেন ৷ 50 বছর আগে গরিব ও দুঃস্থ মানুষের সেবার জন্য সেই শপথ নিয়েছিলেন তিনি ৷ পরবর্তী সময়ে স্বয়ং সেবক সংঘের সদস্য হিসেবে সেই কাজে আরও বেশি করে নিজেকে নিয়োজিত করেছিলেন তিনি ৷ জানিয়েছেন, সবসময় দীনদয়াল উপাধ্যায়ের চিন্তাধারাকে নিজের আদর্শ হিসেবে মেনে চলেছেন ৷ তাই সর্বদা গরিব ও দুঃস্থদের অন্নের সংস্থান করেছেন ৷
আরএসএস নেতৃত্বের কথাতেই প্রথমবার রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ৷ তাই নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, যাতে ক্ষমতার অলিন্দে থেকে মানুষের জন্য কাজ করতে পারেন ৷ এমনকি তিনি বিশ্বাস করতেন রাজনীতিতে থেকে দেশের সবচেয়ে বড় তিন শত্রু- দারিদ্রতা, রোগ ও অবহেলার বিরুদ্ধে লড়াই করে কাজ করতে পারবেন ৷
হর্ষ বর্ধনের লম্বা পোস্টে তিনি করোনা অতিমারির সময়ের কথাও উল্লেখ করেছেন ৷ যে সময় তিনিই ছিলেন দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৷ করোনার প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হিসেবে সবরকম চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেছিলেন ৷ তিনি লেখেন, "পোলিও মুক্ত ভারত গড়ার লক্ষ্যে প্রথম সাফল্য লাভ করার বিরল সুযোগ আমার কাছে এসেছিল ৷ এমনকি স্বাস্থ্যমন্ত্রী হিসেবে করোনার সময় আমার দেশের সমস্ত মানুষের দেখভাল করেছি প্রথম ও দ্বিতীয় ঢেউয়ে ৷ মনুষ্য় সেবার দীর্ঘ ইতিহাসে খুব কমজনের কাছেই সেই কঠিন সময়ে সকল দেশবাসীর পাশে থাকার সুযোগ এসেছিল ৷ আর আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি, সেই দায়িত্বটা আমার কাঁধে এসেছিল ৷ সেই কঠিন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুটিয়ে না নিয়ে, চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে কাজ করেছি ৷"
সবশেষে বিজেপির প্রথমসারির একজন নেতা হিসেবে দলের সকল সহকর্মী এবং কার্যকর্তাদের ধন্যবাদ জানান হর্ষ বর্ধন ৷ সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির মতো একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছে বলে জানান তিনি ৷ তবে, চিকিৎসা জগতের সঙ্গে জড়িত থাকার সুবাদে তামাক বিরোধী অভিযান, পরিবেশ ও আবহাওয়া পরিবর্তন-সহ নানান বিষয়ে তিনি আগের মতোই কাজ করে যাবেন ৷ সঙ্গে কৃষ্ণনগরে নিজের ইএনটি ক্লিনিকে চিকিৎসক হিসেবে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত মানুষের সেবা করবেন বলে উল্লেখ করেছেন ডক্টর হর্ষ বর্ধন ৷
আরও পড়ুন: