দুর্গাপুর, 23 এপ্রিল: আগামী 13 মে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রে নির্বাচন । সোমবার মনোনয়নপত্র দাখিল করেন এই কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের হেভিওয়েট তারকা প্রার্থী তথা তিনবারের সাংসদ কীর্তি আজাদ ৷ যাঁর আসল পরিচয় খেলার মাঠে ৷ 1983 সালের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের নির্ভরযোগ্য অলরাউন্ডার এই কীর্তি আজাদ । আর তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিজেপির দিলীপ ঘোষ সোমবার দুর্গাপুরের বি-জোন বয়েজ হাইস্কুলের ময়দানে প্রাতঃভ্রমণে গিয়ে চষে বেড়ালেন খেলার মাঠ ৷ ফুটবল খেলার পর বেশ কিছুক্ষণ ব্যাটিং প্র্যাকটিসও সেরে নেন দিলীপ ঘোষ । তবে খেলা ভাঙল দিলীপ ঘোষ ক্লিন বোল্ড হওয়ার পরেই ।
বেশ কিছুক্ষণ ব্যাট হাতে ডিফেন্সিভ মুডে এদিক ওদিক দু'চারটে বল খেলার পরে হঠাৎই ছন্দপতন ঘটে । ওভারপিচ বলের লাইন মিস করাতেই ক্লিন বোল্ড দিলীপ ঘোষ । সঙ্গে সঙ্গেই তিনি ব্যাটিং ছেড়ে দিলেন । খেলার মাঠের এই প্রসঙ্গ টেনেই পশ্চিম বর্ধমান জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী এ দিন বলেন, "এই কেন্দ্রে কীর্তি আজাদের নাম ঘোষণা হওয়ার পরই দিলীপ ঘোষ বোল্ড আউট হয়ে গিয়েছেন । এই রাজ্য থেকেও বিজেপি বোল্ড আউট হয়ে যাবে । কীর্তি আজাদ দক্ষ অলরাউন্ডার । তাঁর বোলিংয়ের মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হবেন দিলীপ ঘোষ ।"
খেলার মাঠে ক্লিন বোল্ড হলেও বিজেপির দাবি, ভোটের ময়দানে 'খেলা হবে' ৷ কী হবে কীর্তি আজাদের বিষাক্ত স্পিন বোলিংয়ের বিরুদ্ধে দিলীপ ঘোষের ব্যাটিং স্ট্র্যাটেজি ? দুর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্রের বিজেপি বিধায়ক লক্ষণ ঘড়ুইয়ের কথায়, "দিলীপ ঘোষের নামে ভয় পেয়ে গিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস । তাই চা-চক্রে যাওয়ার আগে আমাদের কর্মীদের মারধর করে ভয় দেখাতে চেয়েছিল। চার তারিখ পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। কারা কী আউট হয়ে যায়, সব জানতে পারবেন ।"
হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি । 39 নম্বর বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রটি পূর্ব বর্ধমান ও পশ্চিম বর্ধমান জেলার মোট সাতটি বিধানসভাকে নিয়ে গঠিত । পশ্চিম বর্ধমান জেলার অন্তর্ভুক্ত দুর্গাপুর পূর্ব ও দূর্গাপুর পশ্চিম কেন্দ্র ছাড়াও পূর্ব বর্ধমান জেলার অন্তর্ভুক্ত গলসি, ভাতার, বর্ধমান উত্তর, বর্ধমান দক্ষিণ, মন্তেশ্বর - এই সাতটি বিধানসভা কেন্দ্রকে নিয়েই এই লোকসভা কেন্দ্রটি গঠিত । প্রায় 18 লক্ষ ভোটার রয়েছে এই কেন্দ্রটিতে ৷
2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল অনুযায়ী এই কেন্দ্র থেকে জয়লাভ করেছিলেন ভারতীয় জনতা পার্টির এসএস আলুওয়ালিয়া । হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয়েছিল এই কেন্দ্রে । 2019 সালের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিদায়ী সাংসদ ডা. মমতাজ সংঘমিতা পেয়েছিলেন প্রদত্ত ভোটের 41.59 শতাংশ । অন্যদিকে, বিজেপি প্রার্থী এসএস আলুওয়ালিয়া পেয়েছিলেন প্রদত্ত ভোটের 41.76 শতাংশ । মাত্র 2469টি বেশি ভোট পেয়ে জয়লাভ করেছিলেন এসএস আলুওয়ালিয়া । সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল, দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম এই দুই বিধানসভা কেন্দ্র থেকে এসএস আলুওয়ালিয়া 76 হাজার ভোটের লিড পেয়েছিলেন । আর এটাই ছিল তাঁর জয়ের কারণ ।
2014 সালের নির্বাচনের ফলাফলের নিরিখে দেখা গিয়েছিল 2019 সালের নির্বাচনে 12 শতাংশের বেশি ভোট তৃণমূলের থেকে সুইং করে বিজেপির দিকে গিয়েছিল । কিন্তু এবার কী হতে চলেছে ? দুর্গাপুর পূর্ব ও পশ্চিম কেন্দ্র থেকে কী এত ভোটে লিড নিতে পারবেন দিলীপ ঘোষ ? কীর্তি আজাদের বিষাক্ত স্পিন বল কতটা কার্যকরী হবে বর্ধমান-দুর্গাপুর লোকসভা কেন্দ্রের 22 গজের পিচে ? তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে খেলা হবে স্লোগান দেওয়ার পাশাপাশি আজ দিলীপ ঘোষের খেলা ভাঙল ক্লিন বোল্ড হয়ে । আন্তর্জাতিক টেস্ট ক্রিকেটে হাত ঘুরিয়ে তিনটি উইকেট এবং আন্তর্জাতিক এক দিনের ক্রিকেটে ভারতের হয়ে হাত ঘুড়িয়ে সাতটি উইকেট রয়েছে কীর্তি আজাদের ঝুলিতে । দিলীপ ঘোষকে বোল্ড করে আদৌ কি উইকেট সংখ্যা বাড়াতে পারবেন ? সবকিছুই জানা যাবে চার জুন ফলপ্রকাশের পর ।
আরও পড়ুন: