দার্জিলিং, 6 ফেব্রুয়ারি: পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য জানুয়ারি মাসে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দার্জিলিংয়ের সাংসদ বিজেপির রাজু বিস্তা ৷ জানুয়ারি পেরিয়ে ফেব্রুয়ারি মাস শুরু হয়ে গেল ৷ এখনও সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি ৷ তাই এই নিয়ে ক্ষুব্ধ দার্জিলিংয়ের বিধায়ক বিজেপির নীরজ তামাং জিম্বা ৷
সেই ক্ষোভের কথা জানিয়ে এবার কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দ্বারস্থ হলেন দার্জিলিংয়ের বিধায়ক ৷ তিনি এই বিষয়ে পদক্ষেপের আর্জি জানিয়ে চিঠি লিখেছেন ৷
নীরজ জিম্বা বলেন, "2009 সাল থেকে বিজেপি পাহাড়ের আসনে জয় পেয়ে আসছে । কিন্তু এখনও পর্যন্ত পাহাড়ের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ হয়নি । এবারও ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের কথা জানানো হলেও কোনও পদক্ষেপ করেনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ।’’ এর সঙ্গে তাঁর সংযোজন, দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা গত বছর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করে নতুন বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুতেই ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দাবি করেছিলেন । যদিও সেই বৈঠক এখনও ডাকা হয়নি ।
জিম্বা আরও বলেন, ‘‘জানুয়ারি পার করে ফেব্রুয়ারি মাস চলছে । আমরা চাই দ্রুত রাজ্যের সঙ্গে আলোচনা করে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক ডাকা হোক । তা না হলে পাহাড়বাসী আর আমাদের উপর ভরসা রাখতে পারবে না । মানুষের আস্থা নিয়ে খেলা করা ঠিক নয় ।"
প্রসঙ্গত, একই দাবিতে 2024 সালের মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি দিয়েছিলেন নীরজ জিম্বা ৷ সেই চিঠিতেও পাহাড়ের স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধানের জন্য পদক্ষেপের আবেদন জানিয়েছিলেন তিনি ।
এর পেছনে অবশ্য ভোটের রাজনীতি দেখছে পাহাড়ের অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো । ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার মুখপাত্র এসপি শর্মা বলেন, "এসব হচ্ছে ভোটের রাজনীতি । পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেও একইভাবে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের জিগির তোলা হয়েছিল । কিন্তু বৈঠক হয়নি । এবার সামনে পাহাড়ে পুরসভা নির্বাচন রয়েছে । তাই আবার এই জিগির তোলা হচ্ছে । পাহাড়ের মানুষ বারবার ধাক্কা খেয়ে বুঝে গিয়েছে যে বিজেপি কিছু করবে না ।"
দার্জিলিং হিল তৃণমূল কংগ্রেসের সভানেত্রী শান্তা ছেত্রী বলেন, "বিজেপি প্রথম থেকে পাহাড় ও পাহাড়বাসীর আস্থা নিয়ে খেলছে । ভোট এলেই এই ধরনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে পাহাড়বাসীকে বিভ্রান্ত করে ।"
তবে নীরজ জিম্বা শুধু ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের দাবি তুলেই থেমে যাননি ৷ বরং পাহাড়বাসীর দীর্ঘদিনের দাবি উসকে দিয়ে আরও একটি চিঠি লিখেছেন তিনি ৷ সেই চিঠি তিনি পাঠিয়েছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুকে ৷ সেখানে তিনি পাহাড়ের 11টি গোর্খা জনজাতিকে তিনি তফলিসি উপজাতি তালিকা ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন ৷
যে 11টি জনজাতির কথা তিনি বলেছেন, সেগুলি হল - গুরুং, ভুজেল, মঙ্গর, নেওয়ার, যোগী, খাস, রাই, সুনুওয়ার, থামি, ইয়ক্কা ও ধিমাল ৷ জিম্বার অভিযোগ, এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার উদাসীন ৷ রাজ্যের তরফে এই 11টি জনজাতিকে তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে ৷ তার পরও কেন্দ্রীয় সরকার কোনও পদক্ষেপ করছে না ৷
রাষ্ট্রপতিকে দেওয়া চিঠিতে জিম্বা উল্লেখ করেছেন, এই সমস্যা শুধু পশ্চিমবঙ্গের নয় ৷ এর সঙ্গে সিকিমও জড়িয়ে ৷ সিকিম 12টি গোর্খা জনজাতিকে তফসিলি জনজাতির স্বীকৃতির দাবিতে সরব হয়েছে ৷ সেখানে তাঁর দেওয়া 11টি জনজাতির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে মাঝি সম্প্রদায়কে ৷ রাষ্ট্রপতির কাছে তিনি এই নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছেন ৷