দত্তপুকুর, 6 ফেব্রুয়ারি: এক ফুল দো মালি ! ত্রিকোণ প্রেমের জেরেই কি খুন হতে হল হজরত লস্করকে ? দত্তপুকুর-কাণ্ডে পুলিশের তদন্ত যত এগোচ্ছে ততই জোরালো হচ্ছে পরকীয়ার তত্ত্ব ! এই ঘটনায় ধৃত ওবায়দুল গাজি এবং তাঁর স্ত্রী পুজা দাসকে 10 দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠিয়েছে আদালত ।
এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে পরকীয়া ছাড়াও আরও দুটি কারণ থাকতে পারে বলে মনে করছে বারাসত জেলা পুলিশ । প্রথমত, চুরি-ছিনতাই থেকে উপার্জিত টাকা-পয়সার ভাগ বাঁটোয়ারা নিয়ে সমস্যা । দ্বিতীয়ত, অপরাধ জগত ছেড়ে সম্প্রতি পুলিশের টিপারের (চর) কাজ করছিলেন হজরত । তার ফলে দলের বেশ কয়েকজন দুষ্কৃতী গ্রেফতার হয়েছিলেন । সে কারণে দলেরই একাংশ মামাতো ভাই ওবায়দুল গাজিকে কাজে লাগিয়ে খুন করাতে পারে হজরতকে ।
দত্তপুকুর-কাণ্ডে তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, বিয়ের আগে হজরতের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক ছিল ওবায়দুলের স্ত্রী পূজা দাসের । বিয়ের পরেও পরকীয়া সম্পর্ক চলছিল তাঁদের মধ্যে । এনিয়ে পূজার স্বামী ওবায়দুলের মনে আক্রোশ তৈরি হয়েছিল । পথের কাঁটা সরাতেই কি তাঁর আত্মীয় হজরতকে খুনের ছক কষেছিলেন তিনি ? প্রাথমিক তদন্তে এমনটাই সন্দেহ বারাসত জেলা পুলিশের ।
তদন্তকারীরা আরও জানতে পেরেছেন যে, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই-সহ একাধিক অপরাধমূলক কাজকর্মের অভিযোগ রয়েছে নিহত যুবক হজরত লস্করের বিরুদ্ধে । এনিয়ে বিভিন্ন থানায় মামলাও রয়েছে । এই অপরাধ সংগঠিত করার জন্য হজরত ও তাঁর মামাতো ভাই ওবায়দুল একটি দল গঠন করেছিলেন । সম্প্রতি, অপরাধ জগত ছেড়ে ভালো হওয়ার চেষ্টা করছিলেন হজরত । সূত্রের খবর, তাঁকে এই কাজে সহযোগিতা করছিলেন উত্তরপাড়া থানার এক পুলিশ অফিসার । পুলিশের টিপার (চর) হয়ে তিনি দলেরই কয়েকজন দুষ্কৃতীকে ধরিয়ে দিয়েছিলেন । তা নিয়ে দুষ্কৃতী দলের মধ্যে আক্রোশ থেকে এই খুনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে বলেও অনুমান তদন্তকারীদের । তবে, সম্ভাব্য সমস্ত কারণই খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে পুলিশ সূত্রে ।
এদিকে, ধৃত ওবায়দুল এবং তাঁর স্ত্রী পূজাকে বৃহস্পতিবার বারাসত থানায় নিয়ে এসে দফায় দফায় জেরা করা হয় । স্বয়ং পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া নিজে উপস্থিত হয়েছিলেন বারাসত থানায় । সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার প্রতীক্ষা ঝাড়খাড়িয়া বলেন, "যুবকের দেহের কিছু মার্ক দেখে বাড়ির লোকজন দেহটি শনাক্ত করেছেন । ডিএনএ পরীক্ষা হলে মৃতদেহটি হজরতের কি না, তা আরও নিশ্চিত হওয়া যাবে । কী কারণে খুন, খুনিদের কী ভূমিকা ছিল তা এখনই বলা সম্ভব নয় । আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে ।"
প্রসঙ্গত, দত্তপুকুরে যুবকের মুণ্ডহীন দেহ উদ্ধারের 72 ঘণ্টার মধ্যেই খুনের কিনারা করে পুলিশ । সেই সঙ্গে মেলে যুবকের পরিচয়ও । জানা যায়, নিহত যুবকের নাম হজরত লস্কর (30)। বাড়ি গাইঘাটার আঙুলকাটা গ্রামে । হজরতের আদি বাড়ি দক্ষিণ 24 পরগনার লক্ষ্মীকান্তপুরে হলেও কয়েক মাস আগে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে গাইঘাটায় চলে আসেন তিনি । সেখানেই ভাড়া বাড়িতে থাকছিলেন । মামাতো ভাই ওবায়দুলও সেখানকার বাসিন্দা ।
বুধবার হজরতের স্ত্রী বারাসত মেডিক্যাল কলেজের মর্গে এসে মৃতদেহের বাঁ হাতে ট্যাটু দেখে সেই দেহটি শনাক্ত করেন । তিনি দাবি করেন, দেহটি তাঁর স্বামী হজরতের । গত 2 ফেব্রুয়ারি তিনি নিখোঁজ হয়ে যান গাইঘাটা থেকে । মিসিং ডায়রিও করা হয় থানায় ।