কলকাতা, 22 ফেব্রুয়ারি: সন্দেশখালির খবর করতে গিয়ে ধৃত সাংবাদিক সন্তু পানের জামিন মঞ্জুর করল কলকাতা হাইকোর্ট । তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তের উপরও স্থগিতাদেশ জারি করেছেন বিচারপতি কৌশিক চন্দ । তিনি বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ধর্ষণের অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে খোঁজখবর করতে গেলেন সাংবাদিক এবং শেষে নিজেই শ্লীলতাহানিতে অভিযুক্ত হলেন !
এ দিনের শুনানিতে আইনজীবী মহেশ জেটমালানি বলেন, "পুলিশি ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয়েছে । মিথ্যে মামলায় ফাঁসানোর চেষ্টা হচ্ছে সৎ সাংবাদিকদের । যে সাংবাদিকদের প্রশ্ন পছন্দ হচ্ছে না, তাঁদের বিরুদ্ধেই মামলা করছে পুলিশ ।"
ধৃত সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মহিলাদের সম্ভ্রমহানির যে অভিযোগ আনা হয়েছে সে প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এ দিন তাঁর আইনজীবী মহেশ জেটমালানি বলেন, "এক মহিলাকে ইন্টারভিউ করেন সাংবাদিক । ইন্টারভিউ পুরোটা রেকর্ড করা আছে ।" এরপরই সেই ভিডিয়ো রেকর্ডিং দেখতে চান বিচারপতি ৷ ল্যাপটপে তাঁকে মহিলাদের ইন্টারভিউয়ের ভিডিয়ো দেখানো হয় ৷ পরে সেই ভিডিয়ো রাজ্যকেও দেখানো হয় । এরপর রাজ্যকে বিচারপতি জিজ্ঞেস করেন, "এই ভিডিয়ো কি ঠিক ?" তখন রাজ্যের তরফে বলা হয়, "আমি এই ভিডিয়ো স্বীকার বা অস্বীকার কিছুই করছি না ।"
এরপর বিচারপতি পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, "যদি এই ভিডিয়ো সত্যি হয়, তাহলে এফআইআর মিথ্যে । আইও কোথায় ? ভিডিয়ো যদি ঠিক হয়, তাহলে এফআইআর অযৌক্তিক । কেন এই এফআইআর তার কোনও ব্যাখ্যা পাচ্ছি না ৷" রাজ্যের তরফে মোবাইলে এ দিন একটি ভিডিয়ো দেখানো হল বিচারপতিকে । সেখানে অভিযোগকারিণী প্রতিবেশীদের কাছে অভিযোগ করেছেন, তাঁর বাড়ির দরজায় ধাক্কা মেরে ঢুকেছেন সন্তু পান ।
এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকের আইনজীবী বলেন, "মহিলার যে ভিডিয়ো রাজ্য দেখিয়েছে, তার জন্য তাঁর সাজা হওয়া উচিত । কারণ প্রথমে ওই ভিডিয়োতে কোনও অভিযোগ ছিল না শ্লীলতাহানির । কিন্তু গ্রেফতারির এত তাড়া ছিল যে, পরে গিয়ে তড়িঘড়ি একটা অভিযোগ দাঁড় করানোর চেষ্টা হয়েছে । সব জামিনযোগ্য ধারার মধ্যে ওই ধারা যুক্ত করা হয়েছে জামিন অযোগ্য করার জন্য । সাজার মেয়াদ যেখানে সাত বছর বা তার কম, সেখানে আগে নোটিশ পাঠানোর কথাও ভাবেনি পুলিশ । সাংবাদিকের কাজ, যা চলছে তা তুলে ধরা । তাই তিনি সেই সঠিক কাজ করেছিলেন । কেন পুলিশ ওই ক্যামেরা বাজেয়াপ্ত করেনি, যখন এমন একটা মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে । মহিলার মিথ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে একজনকে গ্রেফতার করা হল ! একেবারে ব্যক্তিগত গ্রাজ মেটাতে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।"
দু পক্ষের সওয়াল জবাব শোনার পর বিচারপতি বলেন, "সরি টু সে...পুলিশ অফিসার সিস্টেমের সঙ্গে ছেলেখেলা করছেন । কোনও আইডিয়া আছে ভোট পরবর্তী হিংসায় কী কী হয়েছে ? আপনার আইও যা খুশি লিখে মামলা দায়ের করাচ্ছেন । আমি আবার বলছি, আপনার পুলিশ অফিসারদের কাজকর্ম দেখে আমি দুঃখিত ।"
প্রসঙ্গত, সন্তু পানের জামিন মামলাতেই এ দিন উঠে আসে অপর সাংবাদিক সুমন দে-র বিরুদ্ধে মামলার প্রসঙ্গ । মহেশ জেঠমলানি বিচারপতিকে সেই প্রসঙ্গ তুলে ধরে বলেন, "শুধু এই সাংবাদিক নন, একটু পরে আপনার কাছে আরও একটা মামলা উঠবে, যেখানে সুমন দে-র বিরুদ্ধেও এফআইআর দায়ের করা হয়েছে সন্দেশখালি ইস্যুতেই ৷"
আরও পড়ুন: