দার্জিলিং, 8 জুন: লোকসভা নির্বাচনে দার্জিলিংয়ে বিজেপি প্রার্থী রাজু বিস্তার বিরুদ্ধে নির্দল হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কার্শিয়াংয়ের বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা । পাহাড়ের দীর্ঘদিনের দাবি পৃথক রাজ্য, গোর্খাল্যান্ড কিংবা স্থায়ী রাজনৈতিক সমাধান ইস্যুকে সামনে রেখে লড়াইয়ে নেমেছিলেন তিনি । বহিরাগত তকমা দিয়েছিলেন রাজু বিস্তাকে । কিন্তু শেষরক্ষা করতে পারেননি ৷ নির্বাচনী ফলাফলে দেখা যায় 'বহিরাগত' সেই রাজু বিস্তার কাছে পরাজিত হন বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ৷
ভোটে বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মার প্রাপ্ত ভোট মাত্র 7 হাজার 447টি ৷ ঘটনাচক্রে নোটার থেকেও কম ভোট পেয়েছেন তিনি ৷ নোটায় ভোট পড়েছে 18 হাজার 21টি ভোট ৷ স্বাভাবিকভাবেই জমানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে বিধায়কের । আর তারপরই বিজেপির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে একাধিক বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা । তাঁর আক্রমণ থেকে বাদ পড়েননি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুংও । ইটিভি ভারতকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে সেই বিষয়ে মুখ খুললেন কার্শিয়াংয়ের 'বিক্ষুব্ধ' বিজেপি বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ।
লোকসভা নির্বাচনে দেড় লক্ষেরও বেশি ভোটে তৃণমূল প্রার্থী গোপাল লামাকে হারিয়ে ফের দার্জিলিংয়ের ক্ষমতায় এসেছেন রাজু বিস্তা ৷ তাঁর প্রাপ্ত ভোট 6 লক্ষ 79 হাজার 331টি ৷ অন্যদিকে, তৃণমূল প্রার্থীর প্রাপ্ত ভোট 5 লক্ষ 806টি ৷ এই প্রসঙ্গে নাম না করেই বিজেপি জয়ী প্রার্থীর বিরুদ্ধে সুর চড়ান বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা ৷ তিনি বলেন, "একদম টায়ে টায়ে নম্বরে পাস করেছেন । নির্বাচনের আগে আমাকে আটকাতে কোনও রকম ষড়যন্ত্র করতে বাদ রাখেননি তিনি । প্রচারে যাতে আমাকে কেউ কোনও রকম সাহায্য না করতে পারে, সে জন্য আমার নিকটআত্মীয়, বন্ধুবান্ধবদের ভয় দেখানো হয় ।" সেইসঙ্গে তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দলই এই ফলাফলের অন্যতম কারণ । বিধায়করা কিছু বলতে গেলে দমিয়ে দেওয়া হতো । বিজেপি ও বিজেপি জোট শরিকদের লক্ষ লক্ষ টাকা নির্বাচনের আগে বাজেয়াপ্ত করেছিল নির্বাচন কমিশন বলেও অভিযোগ করেন বিষ্ণুপ্রসাদ । কিন্তু, তার পরেও কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি ।
পাহাড়ের রাজনৈতিক দলগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, "পাহাড়ের সমস্ত রাজনৈতিক দল গোর্খাল্যান্ডের নামে ব্যবসা করছে । তবে আমি আর গোর্খাল্যান্ডকে সামনে রেখে রাজনীতি করবো না । পাহাড়বাসী গোর্খাল্যান্ডকে ভুলে গিয়েছে ।" এরপর নাম না করে জিটিএ নেতা বিমল গুরুংয়ের বিরুদ্ধে সুর চড়ান তিনি ।
তবে এতকিছুর পরও দলের বিরুদ্ধে গিয়ে প্রার্থী হওয়ার পরেও একটুও ভীত নন বলে জানান বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা । বরং, তিনি আরও জানান, উত্তরে অমিত শাহের 'ডেপুটি'কে পরাজিত করতে গ্রেটার নেতা অনন্ত মহারাজ তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেন এবং পথ বাতলে দেন । আর এটাই রাজু বিস্তার সাংসদ হিসেবে শেষ কার্যকাল হবে বলে জানান আত্মবিশ্বাসী বিষ্ণুপ্রসাদ । এরপর পাহাড় থেকে আর তিনি জয়ী হতে পারবেন না বলেও 'ভবিষ্যদ্বাণী' করেছেন তিনি ।