সন্দেশখালি, 19 ফেব্রুয়ারি: রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যা তাতে রাষ্ট্রপতি শাসন ছাড়া উপায় নেই। এমনটাই মনে করেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা। সন্দেশখালি গিয়ে সোমবার নির্যাতিতা মহিলাদের সঙ্গে কথা বলার পর তিনি আরও বলেন, "মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাদ করা উচিত। পদত্যাদ করে একজন সাধারণ মহিলার মতো এই সন্দেশখালিতে এলে উনি নির্যাতিতিার যন্ত্রণা বুঝতে পারবেন।" পাশাপাশি তিনি জানান, সন্দেশখালি নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে রিপোর্ট জমা দেওয়া হবে। রিপোর্ট দেখে তিনি ঠিক করবেন কী করা উচিত ৷
সূত্রের খবর, শাহজাহান-শিবু-উত্তম-সন্দেশখালির এই 'ত্রিমূর্তি'-র বিরুদ্ধে নারী নির্যাতন সংক্রান্ত বেশ কিছু অভিযোগ এদিন তুলে ধরা হয়েছে কমিশনের চেয়ারপার্সনের কাছে ৷ সেই সমস্ত অভিযোগ নথিভুক্ত করেছেন কমিশনের সদস্যরা ৷ গ্রামের বেশ কয়েকজন মহিলার সঙ্গে এদিন একান্তে কথা বলে তাঁদের আতঙ্ক কাটানোর চেষ্টা করেছেন রেখা শর্মা নিজে ৷ যদিও তাতে আতঙ্ক আদৌও দূর হবে কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে ৷ কারণ, এর আগেও জাতীয় মহিলা কমিশনের দুই সদস্যের প্রতিনিধি দল সন্দেশখালিতে গিয়ে গ্রামের নিপীড়িত মহিলাদের আতঙ্ক কাটানোর চেষ্টা করেছিলেন ৷
শুধু তাঁরাই নন, জাতীয় এসসি-এসটি কমিশনের চেয়ারম্যান অরুণ হালদারের নেতৃত্বে কমিশনের বাকি সদস্যরাও সন্দেশখালিতে গিয়ে গ্রামের মহিলাদের সাহস জোগানোর চেষ্টা করেন ৷ কিন্তু, তারপরেও তটস্থ গ্রামবাসীরা ৷ অভিযোগ সন্দেশখালিতে শাহজাহান এবং তাঁর দুই শাগরেদ শিবপ্রসাদ হাজরা ও উত্তম সর্দারদের অন্যায়-অত্যাচার এতদিন তাঁরা চাক্ষুষ করে এসেছেন ৷ তা কিছুতেই মন থেকে মুছতে পারছেন না গ্রামের মহিলারা ৷ যার জেরে এখনও সন্ত্রস্ত হয়ে রয়েছে সন্দেশখালির একাধিক গ্রাম ৷
ইতিমধ্যে যাঁরা সাহস করে এগিয়ে এসে শিবু-উত্তমদের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন, কিংবা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন তাঁদের নানাভাবে হুমকি এবং অপদস্থ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ আর সেটা বিলক্ষণ বুঝতে পেরেছেন জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন রেখা শর্মা ৷ সেই কারণেই তিনি সন্দেশখালি পৌঁছে সবার প্রথমে গ্রামের মহিলাদের আতঙ্ক কাটানোর চেষ্টা করেন ৷ সেই সঙ্গে জাতীয় মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন এই ঘটনার মূল পাণ্ডা শেখ শাহজাহানের গ্রেফতারির দাবিতেও সরব হয়েছেন ৷
এই বিষয়ে রেখা শর্মা বলেন, "এখানকার পুলিশ কোনও কাজ করে না ৷ হাত গুটিয়ে বসে থাকে ৷ অপরাধীদের না ধরে যাঁরা অভিযোগ করছে, তাঁদের পরিবারকেই উলটে গ্রেফতার করা হচ্ছে ৷ এটা সন্দেশখালি-কাণ্ডে প্রথম নয় ৷ এর আগেও ভোট পরবর্তী হিংসা ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছিল ৷ প্রতিবারই এরাজ্যে এসে তা প্রত্যক্ষ করেছি আমরা ৷"
সন্দেশখালির নিরীহ গ্রামবাসী এবং নিপীড়িত মহিলাদের আশ্বস্ত করে রেখা শর্মা বলেন, "আতঙ্ক কাটিয়ে গ্রামের মহিলারা এগিয়ে এসে নির্ভয়ে অভিযোগ জানাতে পারেন ৷ তাঁরা যে ধরনের অভিযোগ করুক না কেন, আমরা সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখে পদক্ষেপ নেব ৷ মহিলাদের উদ্দেশ্যে একটা কথাই বলব, ডর-কে আগে জিত হ্যায় ৷ মহিলারা আতঙ্ক কাটিয়ে এগিয়ে এসে অভিযোগ করলে, তবেই তো কোনও ব্যবস্থা নিতে পারব আমরা ৷"
এদিকে, সন্দেশখালি কাণ্ডের 'মাস্টারমাইন্ড' শেখ শাহজাহান অধরা থাকায় গ্রামের মহিলাদের মধ্যে আতঙ্ক যে এখনও রয়েছে তা মেনে নিয়ে রেখা শর্মা বলেন, "ও গ্রেফতার হয়ে গেলে গ্রামের মহিলারা আরও বেশি নিশ্চিন্তে অভিযোগ জানাতে পারবে ৷ তাই, 'শেখ'-এর গ্রেফতারির নিয়ে উদ্যোগী হওয়া উচিত প্রশাসনের ৷"
আরও পড়ুন: