ETV Bharat / state

মিঠুন ও ফিরহাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রায় এক, শাসক-বিরোধীর জন্য একই থানার ভিন্ন রূপ !

মিঠুন চক্রবর্তী ও ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রায় এক ৷ তবে শাসক ও বিরোধীর ক্ষেত্রে অভিযোগে একই থানাকে ভিন্ন ভূমিকায় পাওয়া গেল ৷ উঠছে প্রশ্ন৷

ETV BHARAT
শাসক-বিরোধীর জন্য একই থানার ভিন্ন রূপ ! (নিজস্ব চিত্র)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Nov 8, 2024, 7:23 PM IST

কলকাতা, 8 নভেম্বর: রাজ্যে সদ্য ঘটে যাওয়া একই রকমের দুই ঘটনায়, একই থানার দুটি ভিন্ন রূপ সামনে এল ৷ বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে 'উস্কানিমূলক' মন্তব্যের জেরে বিধাননগর দক্ষিণ থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ৷ অথচ বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্রকে নিয়ে 'কুরুচিপূর্ণ' মন্তব্যের জন্য সেই বিধাননগর দক্ষিণ থানাতেই অভিযোগ জানাতে গেলেও তা নেওয়াই হল না ৷ দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অভিযোগটা ছিল রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে ৷ প্রায় একই রকমের ঘটনায় একই থানার এই ভিন্ন রূপ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷

এই বিষয়ে বিধাননগর কমিশনারেটের কোনও পুলিশ আধিকারিক কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷ তবে বিধান নগর কমিশনারেটের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই ঘটনায় বিধান নগর দক্ষিণ থানায় বা বিধান নগর কমিশনারেটের অন্য কোনও থানায় কোনও প্রকারের অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷

এ প্রসঙ্গে ইটিভি ভারত কথা বলেছে কলকাটা হাইকোর্টের আইনজীবী কৌশিক গুপ্তের সঙ্গে ৷ তিনি বলেন, "এক্ষেত্রে আইনের একাধিক নিয়ম রয়েছে । কিন্তু এখানে সমস্যাটা হচ্ছে, বেড়ালও আছে আবার ঘণ্টাও আছে । কিন্তু বাঁধবেটা কে ?"

তাঁর কথায়, "পুলিশ আকছারই এই প্রকারের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে । কিন্তু সাধারণ মানুষের জেনে রাখার জন্য বলি, স্থানীয় থানা যদি অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে, সে ক্ষেত্রে স্থানীয় আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের দ্বারস্থ হতে হবে ৷ আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর সেই অভিযোগ করে স্থানীয় থানায় নথিভুক্ত করা যাবে । এছাড়াও সংশ্লিষ্ট থানার যে পুলিশ আধিকারিক আপনার অভিযোগটি নিতে চাইছেন না, হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধেও একটি রিট পিটিশন করা যায় ৷ ওই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের আর্জি জানানো হলে, প্রয়োজনে হাইকোর্ট সেই নির্দেশ যদি দেয়, তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হবে ।"

রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা যেটা পারেন, সেটা আম আদমি পারে না ৷ সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে কৌশিক গুপ্ত বলেছেন, "বিজেপি কিংবা তৃণমূল বা অন্যান্য দল অথবা কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির পক্ষে হাইকোর্টে যাওয়া এবং সেখানে মামলা করা সম্ভবপর । কিন্তু এটা বিজেপি নেত্রী না-হয়ে যদি সাধারণ একজন রেখা পাত্র হতেন, সে ক্ষেত্রে কি তাঁরা হাইকোর্টে গিয়ে এই অভিযোগটি করতে পারতেন ? আমার মনে হয় এক্ষেত্রে হাইকোর্টকেও দৃঢ় পদক্ষেপ করতে হবে । পুলিশকে একটা বার্তা পাঠাতে হবে, যেন পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার না করে । অভিযোগ নিতে অস্বীকার করলে পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে । এই ভয়টা থাকলে এই প্রকারের অপরাধ আর হবে না বলে মনে করা যায় ।"

সম্প্রতি উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্রকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তার জেরে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে বিধাননগর দক্ষিণ থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিধাননগরের মণ্ডল সভাপতি সঞ্জয় পায়রা । কিন্তু, পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি বলে অভিযোগ তাঁর । পরবর্তীতে ইমেল মারফত অভিযোগ দায়ের করা হয় বিধাননগর কমিশনারেটে । যা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন ওই বিজেপি নেতা । তিনি বলেন, বাংলায় গণতন্ত্র নেই । আইনের শাসন নেই । শাসকের আইন রয়েছে । তাই অভিযোগ নিতে অস্বীকার করল পুলিশ ।

এই ঘটনার সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগের সঙ্গে ৷ সম্প্রতি দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার প্রাপ্ত মিঠুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে সল্টলেকে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ৷ বিধান নগরের এক বাসিন্দা মনে করেন যে, মহাগুরুর সেদিনের মন্তব্যের ফলে রাজ্যে আইনশৃংখলার অবনতি হতে পারে এবং তাঁর মন্তব্য উস্কানিমূমূলক । এই অভিযোগ তুলে বিধান নগর দক্ষিণ থানাতেই মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যক্তি এবং নির্দ্বিধায় ওই থানার পুলিশ সেই অভিযোগটি গ্রহণও করে । অথচ যখন ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে একজন মহিলা নেত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগ ওই একই থানায় জানানো হল, তখন শাসকদলের ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগটি নিতে অস্বীকার করল বিধান নগর দক্ষিণ থানার পুলিশ ।

এই বিষয়ে ইটিভি ভারতকে অভিযোগকারী সঞ্জয় পায়রা বলেন, "এটা রাজনৈতিক চক্রান্ত । আমাদের নেতা সদ্য দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার প্রাপ্ত মিঠুন চক্রবর্তী যখন কোনও কথা বললেন, তখন সেটি নাকি উস্কানিমূলক মন্তব্য । তার জেরে বিধাননগর দক্ষিণ থানা এবং বউবাজার ও জোড়াসাঁকো থানায় অভিযোগ দায়ের হয়ে গেল । কিন্তু আমাদের মহিলা নেত্রী রেখা পাত্রকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করলেন ফিরহাদ হাকিম । আর সেই ঘটনায় বিধাননগর দক্ষিণ থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ আমাদের বলল যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে গিয়ে অভিযোগ করতে ।"

একই রাজ্যের একই থানায় প্রায় একই প্রকারের অভিযোগের ক্ষেত্রে পুলিশের যে দু'রকমের গতিবিধি দেখা গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে ৷

কলকাতা, 8 নভেম্বর: রাজ্যে সদ্য ঘটে যাওয়া একই রকমের দুই ঘটনায়, একই থানার দুটি ভিন্ন রূপ সামনে এল ৷ বিজেপি নেতার বিরুদ্ধে 'উস্কানিমূলক' মন্তব্যের জেরে বিধাননগর দক্ষিণ থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল ৷ অথচ বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্রকে নিয়ে 'কুরুচিপূর্ণ' মন্তব্যের জন্য সেই বিধাননগর দক্ষিণ থানাতেই অভিযোগ জানাতে গেলেও তা নেওয়াই হল না ৷ দ্বিতীয় ক্ষেত্রে অভিযোগটা ছিল রাজ্যের মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে ৷ প্রায় একই রকমের ঘটনায় একই থানার এই ভিন্ন রূপ কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে ৷

এই বিষয়ে বিধাননগর কমিশনারেটের কোনও পুলিশ আধিকারিক কোনও মন্তব্য করতে চাননি ৷ তবে বিধান নগর কমিশনারেটের তরফ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই ঘটনায় বিধান নগর দক্ষিণ থানায় বা বিধান নগর কমিশনারেটের অন্য কোনও থানায় কোনও প্রকারের অভিযোগ দায়ের হয়নি ৷

এ প্রসঙ্গে ইটিভি ভারত কথা বলেছে কলকাটা হাইকোর্টের আইনজীবী কৌশিক গুপ্তের সঙ্গে ৷ তিনি বলেন, "এক্ষেত্রে আইনের একাধিক নিয়ম রয়েছে । কিন্তু এখানে সমস্যাটা হচ্ছে, বেড়ালও আছে আবার ঘণ্টাও আছে । কিন্তু বাঁধবেটা কে ?"

তাঁর কথায়, "পুলিশ আকছারই এই প্রকারের ঘটনা ঘটিয়ে থাকে । কিন্তু সাধারণ মানুষের জেনে রাখার জন্য বলি, স্থানীয় থানা যদি অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে, সে ক্ষেত্রে স্থানীয় আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটের দ্বারস্থ হতে হবে ৷ আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর সেই অভিযোগ করে স্থানীয় থানায় নথিভুক্ত করা যাবে । এছাড়াও সংশ্লিষ্ট থানার যে পুলিশ আধিকারিক আপনার অভিযোগটি নিতে চাইছেন না, হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধেও একটি রিট পিটিশন করা যায় ৷ ওই পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের আর্জি জানানো হলে, প্রয়োজনে হাইকোর্ট সেই নির্দেশ যদি দেয়, তবে সংশ্লিষ্ট পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হবে ।"

রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বরা যেটা পারেন, সেটা আম আদমি পারে না ৷ সেকথা মনে করিয়ে দিয়ে কৌশিক গুপ্ত বলেছেন, "বিজেপি কিংবা তৃণমূল বা অন্যান্য দল অথবা কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তির পক্ষে হাইকোর্টে যাওয়া এবং সেখানে মামলা করা সম্ভবপর । কিন্তু এটা বিজেপি নেত্রী না-হয়ে যদি সাধারণ একজন রেখা পাত্র হতেন, সে ক্ষেত্রে কি তাঁরা হাইকোর্টে গিয়ে এই অভিযোগটি করতে পারতেন ? আমার মনে হয় এক্ষেত্রে হাইকোর্টকেও দৃঢ় পদক্ষেপ করতে হবে । পুলিশকে একটা বার্তা পাঠাতে হবে, যেন পুলিশ অভিযোগ নিতে অস্বীকার না করে । অভিযোগ নিতে অস্বীকার করলে পুলিশ আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হবে । এই ভয়টা থাকলে এই প্রকারের অপরাধ আর হবে না বলে মনে করা যায় ।"

সম্প্রতি উপনির্বাচনের প্রচারে গিয়ে রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বিজেপি নেত্রী রেখা পাত্রকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তার জেরে মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জানাতে বিধাননগর দক্ষিণ থানার দ্বারস্থ হয়েছিলেন বিধাননগরের মণ্ডল সভাপতি সঞ্জয় পায়রা । কিন্তু, পুলিশ অভিযোগ নিতে চায়নি বলে অভিযোগ তাঁর । পরবর্তীতে ইমেল মারফত অভিযোগ দায়ের করা হয় বিধাননগর কমিশনারেটে । যা নিয়ে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন ওই বিজেপি নেতা । তিনি বলেন, বাংলায় গণতন্ত্র নেই । আইনের শাসন নেই । শাসকের আইন রয়েছে । তাই অভিযোগ নিতে অস্বীকার করল পুলিশ ।

এই ঘটনার সঙ্গে তুলনা টানা হচ্ছে বিজেপি নেতা মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগের সঙ্গে ৷ সম্প্রতি দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার প্রাপ্ত মিঠুন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের উপস্থিতিতে সল্টলেকে একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ৷ বিধান নগরের এক বাসিন্দা মনে করেন যে, মহাগুরুর সেদিনের মন্তব্যের ফলে রাজ্যে আইনশৃংখলার অবনতি হতে পারে এবং তাঁর মন্তব্য উস্কানিমূমূলক । এই অভিযোগ তুলে বিধান নগর দক্ষিণ থানাতেই মিঠুন চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ওই ব্যক্তি এবং নির্দ্বিধায় ওই থানার পুলিশ সেই অভিযোগটি গ্রহণও করে । অথচ যখন ফিরহাদ হাকিমের বিরুদ্ধে একজন মহিলা নেত্রীকে কটূক্তি করার অভিযোগ ওই একই থানায় জানানো হল, তখন শাসকদলের ওই নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগটি নিতে অস্বীকার করল বিধান নগর দক্ষিণ থানার পুলিশ ।

এই বিষয়ে ইটিভি ভারতকে অভিযোগকারী সঞ্জয় পায়রা বলেন, "এটা রাজনৈতিক চক্রান্ত । আমাদের নেতা সদ্য দাদা সাহেব ফালকে পুরস্কার প্রাপ্ত মিঠুন চক্রবর্তী যখন কোনও কথা বললেন, তখন সেটি নাকি উস্কানিমূলক মন্তব্য । তার জেরে বিধাননগর দক্ষিণ থানা এবং বউবাজার ও জোড়াসাঁকো থানায় অভিযোগ দায়ের হয়ে গেল । কিন্তু আমাদের মহিলা নেত্রী রেখা পাত্রকে নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করলেন ফিরহাদ হাকিম । আর সেই ঘটনায় বিধাননগর দক্ষিণ থানায় অভিযোগ করতে গেলে পুলিশ আমাদের বলল যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, সেখানে গিয়ে অভিযোগ করতে ।"

একই রাজ্যের একই থানায় প্রায় একই প্রকারের অভিযোগের ক্ষেত্রে পুলিশের যে দু'রকমের গতিবিধি দেখা গেল, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.