কলকাতা, 31 ডিসেম্বর: দেশের সবচেয়ে গরিব মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সোমবার অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্র্যাটিক রিফর্ম (এডিআর)-এর তরফে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে এই তথ্য উঠে এসেছে ৷ ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সম্পত্তির পরিমাণ 15 লক্ষ 38 হাজার 29 টাকা ৷ এই সম্পত্তির সবটাই অস্থাবর ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কোনও স্থাবর সম্পত্তি নেই ৷
তবে ওই রিপোর্টে শুধু বাংলার মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে তথ্য নেই, বরং দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যমন্ত্রী সম্পর্কে তথ্য দেওয়া হয়েছে ৷ এডিআর-এর ওই 57 পাতার রিপোর্টের চতুর্থ পাতায় একনজরে দেশের সবচেয়ে ধনী ও সবচেয়ে গরিব তিনজন মুখ্যমন্ত্রীর সম্পত্তির খতিয়ান দেওয়া হয়েছে ৷ সেখানে দরিদ্রতমদের তালিকায় প্রথম নামটি মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ৷
দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা ৷ ন্যাশনাল কনফারেন্সের এই নেতার মোট সম্পত্তির পরিমাণ 55 লক্ষ 24 হাজার 430 টাকা ৷ মমতার মতো ওমরেরও কোনও স্থাবর সম্পত্তি নেই ৷ তৃতীয় স্থানে রয়েছেন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী সিপিএমের পিনারাই বিজয়ন ৷ তাঁর কাছে স্থাবর ও অস্থাবর মিলিয়ে 1 কোটি 18 লক্ষ 75 হাজার 766 টাকার সম্পত্তি রয়েছে ৷
অন্যদিকে ধনী মুখ্যমন্ত্রীদের তালিকার শীর্ষে রয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু ৷ টিডিপি সুপ্রিমোর কাছে 931 কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি রয়েছে ৷ দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন অরুণাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বিজেপির পেমা খান্ডু ৷ তিনি প্রায় 332 কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক ৷ তৃতীয় স্থানে থাকা কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের সিদ্দারামাইয়ার সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় 51 কোটি টাকা ৷
এডিআর-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের 28টি রাজ্য ও তিনটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে 31 জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে 29 জন মুখ্যমন্ত্রীই কোটিপতি ৷ দু’জন লাখপতি ৷ আর সেই দু’জনের একজন মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় ও দ্বিতীয়জন ওমর আবদুল্লা ৷ যদিও মমতার সম্পত্তির খতিয়ানের সঙ্গে রাজ্যের মানুষের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই মনে করে কংগ্রেস ও বিজেপি ৷
এই নিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘‘15 বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আছেন, এই রাজ্যের মাথাপিছু রোজগার তলানিতে এসে ঠেকেছে । একটা নতুন কলকারখানা হয়নি। নতুন বেকার ছেলেদের চাকরি হয় না । পুঁজি এবং মেধা, দুই চলে যাচ্ছে রাজ্য থেকে । এই রাজ্যে পরিযায়ী শ্রমিকের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি । সরকারের স্বনির্ভরতা শেষ । এই অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ওঁর কাছে কত টাকা থাকল না-থাকল, সেটা বিষয় নয় । সবচেয়ে বড় বিষয় হল মধ্যবিত্তের কোমর ভেঙে দিয়েছে এই সরকার ।’’
অন্যদিকে বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলছেন, ‘‘এই সার্ভেতে মুখ্যমন্ত্রীদের ব্যক্তিগত সম্পত্তির খতিয়ান দেওয়া হয়েছে । তবে যদি পারিবারিক খতিয়ান দেওয়া হয়, তাহলে অনেক নাইডুই পেছনে চলে যাবে ।’’
যদিও বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে এই পরিসংখ্যানে হেরফের ঘটতেই পারে ৷ কারণ, এডিআর-এর এই রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামার ভিত্তিতে তৈরি হয়েছে ৷ যিনি শেষবার যখন নির্বাচন লড়েছেন, তাঁর সেই সময়ের তথ্য এই রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে ৷ যেমন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় শেষবার ভোটে লড়েছেন 2021 সালের সেপ্টেম্বরে ৷ সেই সময় নির্বাচন কমিশনের কাছে তিনি যে হলফনামা পেশ করেন, তার ভিত্তিতেই তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে ৷ তবে ওমর আবদুল্লা, দেবেন্দ্র ফড়নবীশ, শিবু সোরেনের মতো অনেকেই মাস কয়েকের মধ্যে ভোটে জিতেছেন ৷ তাই তাঁদের সম্পত্তির খতিয়ান প্রায় সাম্প্রতিক হিসেবে ধরা যেতে পারে ৷
এডিআর-এর ওই রিপোর্টে মুখ্যমন্ত্রীদের বিরুদ্ধে থাকা ফৌজদারী মামলার পরিসংখ্যানও উল্লেখ করা হয়েছে ৷ রিপোর্টে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কংগ্রেসের রেভন্ত রেড্ডির বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ফৌজদারী মামলা (89টি) রয়েছে । এই তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে রয়েছেন ডিএমকে নেতা তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন । তাঁর বিরুদ্ধে 47টি ফৌজদারি মামলা রয়েছে। তৃতীয় স্থানে রয়েছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা টিডিপি সুপ্রিমো এন চন্দ্রবাবু নাইডু । তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে 19টি ফৌজদারী মামলা । মোট 31 জন মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে 13 জন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই মুহূর্তে ফৌজদারী মামলা রয়েছে । বাকিদের নামে কোনও ফৌজদারী মামলা নেই৷ বাকিদের দলেই রয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
মুখ্যমন্ত্রীদের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়টিও তুলে ধরা হয়েছে এডিআর-এর ওই রিপোর্টে ৷ সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে, দেশের একজন মুখ্যমন্ত্রী দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছেন ৷ তিনজন পড়েছেন দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত ৷ দশজন স্নাতক, নয়জন স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়েছেন ৷ পাঁচজনের কাছে গ্র্যাজুয়েট প্রফেশনাল, দু’জনের কাছে ডক্টরেট ও একজনের কাছে ডিপ্লোমা ডিগ্রি রয়েছে ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্নাতকোত্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন বলে এডিআর-এর রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে ৷