ETV Bharat / opinion

ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে চরাইদেও মইডাম, কী পরিবর্তন আনবে ভারতে ? - Charaideo Moidams

author img

By Aroonim Bhuyan

Published : Jul 28, 2024, 10:16 PM IST

Charaideo Moidams: অসমের চরাইদেও মইডাম'কে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো ৷ বিশ্ব পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে নয়াদিল্লির 'অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি'র অনুঘটক হবে এই স্থান ৷ পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে এখানে ৷ আশেপাশের এলাকাগুলি আরও উন্নত হবে । এই নিয়ে বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বললেন ইটিভি ভারতের অরুণিম ভুঁইয়া ৷

Charaideo Moidams
(বাঁদিকে) অসমের চরাইদেও মইডাম, (ডানদিকে) শিক্ষাবিদ দয়ানন্দ বোরগোহাইন ((ইটিভি ভারত))

নয়াদিল্লি, 28 জুলাই: নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির 46তম সম্মেলন ৷ এই সম্মেলনে সাংস্কৃতিক বিভাগের অধীনে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে অসমের চরাইদেও মইডাম'কে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো ৷ চরাইদেও'কে ইউনেসকোর এই স্বীকৃতি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জনগণের মধ্যে সম্পর্ককে আরও উন্নত করার বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা নয়াদিল্লির 'অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি'র মূল কেন্দ্রবিন্দু ।

অনুমান করা হচ্ছে, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃতি লাভের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ বিন্দু হয়ে উঠবে চরাইদেও মইডাম ৷ এদের অহোম রাজবংশের সঙ্গে ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সংযোগ রয়েছে ৷ যারা 1228 থেকে 1826 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছয় দশক ধরে অসম শাসন করেছিল ।

চরাইদেও মইডাম কী ?

চরাইদেও মইডাম হল বিস্তৃত এলাকা যেখানে বিপুল সংখ্যক মইডামের উপস্থিতি রয়েছে ৷ এটি সমাধির স্থানীয় শব্দ, যা অহোম রাজ্যের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল । চরাইদেওর মইডাম হল এমন জায়গা যেখানে অহোম রাজপরিবারের সদস্যদের সমাধিস্থ করা হয়েছিল । অহোম জনগণ 'তাই' জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত । 'তাই' জনগণের একটি ভাগ করা সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ঐতিহ্য রয়েছে এবং তাদের উপস্থিতি আধুনিক দিনের থাইল্যান্ড, লাওস, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং দক্ষিণ চিনের কিছু অংশে পাওয়া যায় ।

অহোমের উৎস সন্ধানে

এই নিয়ে ইটিভি ভারত-এর সঙ্গে কথা বলেছেন অসমের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ দয়ানন্দ বোরগোহাইন ৷ তিনি বলেন," অহোম জনগণ মূলত বর্তমান চিনের ইউনান প্রদেশের মুয়াং মাও নামে একটি তাই রাজ্যের বাসিন্দা । মুয়াং মাও ছাড়াও ইউনানে আরও 11টি তাই রাজ্য ছিল । এই লোকেরা খুব বিদগ্ধ এবং সভ্য ছিল । তবে এই কারণে চিনের হান সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের 'তাই'দের ঈর্ষা করত ।"

তিনি জানান, হান শাসকরা প্রায়শই এই 'তাই' রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছিল । এরকম একজন হান সম্রাট চি ওয়াং টি ৷ তিনি একটি বিশেষ সহিংস আক্রমণ করেছিলেন, যা 'তাই' জনগণকে ইউনান থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছিল । এক দিনে 470 জন পণ্ডিতকে হত্যা করা হয়েছিল ৷ কৃষি বিষয়ক বই ছাড়া বাকি সব বই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ।

এরপরেই ইউনানের 'তাই' রাজ্যের লোকেরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য স্থানে যেমন থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, এমনকী চিনের আরও কিছু জায়গায় এবং তাইওয়ানের অল্প সংখ্যক স্থানে চলে যায় । সুকাফার অধীনে এমনই একটি দল ইউনান থেকে পশ্চিমে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ।

দয়ানন্দ বোরগোহাইনের কথায়, "1214 সালে সুকাফা তাঁর 9,000 জন লোক নিয়ে পশ্চিম দিকে যেতে শুরু করে ৷ 14 বছরে তারা 1,112 কিমি পথ অতিক্রম করেছে এবং তারপর পাটকাই পাহাড়ি রেঞ্জ পেরিয়ে অসমে প্রবেশ করে । তিনি যে এলাকায় প্রবেশ করেছিলেন তা তখন সৌমরপীঠ নামে পরিচিত ছিল ।"

শিক্ষাবিদ জানান, সুকাফা রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে চরাইদেও এসেছিলেন ৷ তবে চরাইদেও প্রথম স্থান নয়, যাকে তিনি তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্থান হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন । তিনি উপনদী ডিখৌ নদীর মুখ খুঁজে পাওয়ার আগে ব্রহ্মপুত্রের উপরে এবং নীচে ভ্রমণ করেছিলেন । এরপর তিনি নদীতে যাত্রা করেন এবং বর্তমান অসম-নাগাল্যান্ড সীমান্তের কাছে একটি জায়গায় অবতরণ করেন ।

বোরগোহাইন বলেন, "সুকাফা তখন এলাকার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপচারিতা করেন এবং কখনও কোনও সংঘর্ষে লিপ্ত হননি । যেহেতু তিনি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিলেন তাই স্থানীয় জনগণ তাঁকে চরাইদেওকে বেছে নিতে বলেন এবং এখান থেকে তাঁকে শাসন ক্ষমতা চালানোর পরামর্শ দিয়েছিল ৷ চরাইদেও একটি পাহাড়ি এলাকা এবং যেহেতু সুকাফা ইউনানের একটি পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এসেছিল, তাই তিনি সেখানে তাঁর রাজধানী স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখান থেকে 1228 সালে অহোম রাজ্যের সূচনা করেন । চরাইদেও মানে, পাহাড়ের চূড়ায় একটি বিশিষ্ট স্থান ।"

চরাইদেও ছিল অহোম রাজ্যের প্রথম রাজধানী । রাজধানী অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার পরেও এটি অহোম শাসকদের জন্য একটি প্রতীকী ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্র ছিল । চরাইদেও'র আশেপাশের এলাকাটি রাজকীয় সমাধিক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল, যেখানে অনেক অহোম রাজা, রানি এবং অভিজাতদের সমাধিস্থ করা হয়েছিল ৷

চরাইদেও মইডাম বড় মাটির ঢিবি, যা অন্যান্য প্রাচীন সংস্কৃতিতে পাওয়া পিরামিডাল কাঠামোর অনুরূপ । এই ঢিবিগুলি সাধারণত একটি ভূগর্ভস্থ চেম্বারের উপর নির্মিত হয় যেখানে মৃত ব্যক্তিদের বিভিন্ন জিনিস-সহ কবর দেওয়া হয় ৷ কাঠামোগুলিতে প্রায়শই ইট বা পাথরের মতো দেখতে দেওয়াল থাকে এবং মূলত আলংকারিক উপাদান ও পাথরের ভাস্কর্য দিয়ে সজ্জিত থাকে ।

অহোমরা বিস্তৃত কবরের আচার-অনুষ্ঠান পালন করত, যা মৃত্যুর পরের জীবনে তাদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে । মৃতদের পরকালে তাদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র, অলঙ্কার এবং গৃহস্থালী সামগ্রী-সহ বিভিন্ন ধরনের কবর সামগ্রী দিয়ে দফন করা হয়েছিল । একটি মইডাম নির্মাণ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যাতে জটিল আচার-অনুষ্ঠান এবং অনেক কারিগর ও শ্রমিকের অংশগ্রহণ জড়িত ছিল ৷ চরাইদেও মইডাম সাইটে অহোম রাজাদের 29টি মইডাম রয়েছে ।

বোরগোহাইন বলেছেন, "মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার তাই-বংশোদ্ভূতদের অসমের 'তাই'-অহোম জনগণের সঙ্গে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে । তাই ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে চরাইদেও মইডামের ঘোষণা উত্তর-পূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির অ্যাক্ট ইস্ট নীতির লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে ৷ এমনকী জাপান এবং চিনের লোকেরা, যারা বৌদ্ধ বংশোদ্ভূত তারা সাইটটি দেখতে আগ্রহী হবে ।"

অহোমরা বৌদ্ধ বংশোদ্ভূত নয়, তবে তাদের নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে । তারা মূলত প্রকৃতি পূজারি ছিল । উত্তর-পূর্বে আরও পাঁচটি 'তাই' গোষ্ঠী রয়েছে, যারা বৌদ্ধ । শিক্ষাবিদ দয়ানন্দ বোরগোহাইনের মতে, "ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির এই স্বীকৃতিতে শুধুমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়া থেকে নয়, চরাইদেও মইডামে বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকেও পর্যটকদের আনাগোনা বাড়াবে ৷ এটি পর্যটন কেন্দ্রের লোকের আনাগোনা আশেপাশের অঞ্চলগুলির শক্তিশালী উন্নয়নেও সহায়তা করবে ।"

নয়াদিল্লি, 28 জুলাই: নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ইউনেসকোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির 46তম সম্মেলন ৷ এই সম্মেলনে সাংস্কৃতিক বিভাগের অধীনে বিশ্বের ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে অসমের চরাইদেও মইডাম'কে স্বীকৃতি দিয়েছে ইউনেসকো ৷ চরাইদেও'কে ইউনেসকোর এই স্বীকৃতি ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চল এবং দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার জনগণের মধ্যে সম্পর্ককে আরও উন্নত করার বিশাল সম্ভাবনা তৈরি করেছে, যা নয়াদিল্লির 'অ্যাক্ট ইস্ট পলিসি'র মূল কেন্দ্রবিন্দু ।

অনুমান করা হচ্ছে, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ হিসাবে স্বীকৃতি লাভের পর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পর্যটকদের জন্য একটি প্রধান আকর্ষণ বিন্দু হয়ে উঠবে চরাইদেও মইডাম ৷ এদের অহোম রাজবংশের সঙ্গে ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক সংযোগ রয়েছে ৷ যারা 1228 থেকে 1826 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ছয় দশক ধরে অসম শাসন করেছিল ।

চরাইদেও মইডাম কী ?

চরাইদেও মইডাম হল বিস্তৃত এলাকা যেখানে বিপুল সংখ্যক মইডামের উপস্থিতি রয়েছে ৷ এটি সমাধির স্থানীয় শব্দ, যা অহোম রাজ্যের শাসনামলে নির্মিত হয়েছিল । চরাইদেওর মইডাম হল এমন জায়গা যেখানে অহোম রাজপরিবারের সদস্যদের সমাধিস্থ করা হয়েছিল । অহোম জনগণ 'তাই' জাতিগোষ্ঠীর অন্তর্গত, যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া জুড়ে বিস্তৃত । 'তাই' জনগণের একটি ভাগ করা সাংস্কৃতিক ও ভাষাগত ঐতিহ্য রয়েছে এবং তাদের উপস্থিতি আধুনিক দিনের থাইল্যান্ড, লাওস, মায়ানমার, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া এবং দক্ষিণ চিনের কিছু অংশে পাওয়া যায় ।

অহোমের উৎস সন্ধানে

এই নিয়ে ইটিভি ভারত-এর সঙ্গে কথা বলেছেন অসমের প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ দয়ানন্দ বোরগোহাইন ৷ তিনি বলেন," অহোম জনগণ মূলত বর্তমান চিনের ইউনান প্রদেশের মুয়াং মাও নামে একটি তাই রাজ্যের বাসিন্দা । মুয়াং মাও ছাড়াও ইউনানে আরও 11টি তাই রাজ্য ছিল । এই লোকেরা খুব বিদগ্ধ এবং সভ্য ছিল । তবে এই কারণে চিনের হান সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের 'তাই'দের ঈর্ষা করত ।"

তিনি জানান, হান শাসকরা প্রায়শই এই 'তাই' রাজ্যগুলির বিরুদ্ধে আক্রমণ চালিয়েছিল । এরকম একজন হান সম্রাট চি ওয়াং টি ৷ তিনি একটি বিশেষ সহিংস আক্রমণ করেছিলেন, যা 'তাই' জনগণকে ইউনান থেকে সরে যেতে বাধ্য করেছিল । এক দিনে 470 জন পণ্ডিতকে হত্যা করা হয়েছিল ৷ কৃষি বিষয়ক বই ছাড়া বাকি সব বই পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল ।

এরপরেই ইউনানের 'তাই' রাজ্যের লোকেরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য স্থানে যেমন থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া, এমনকী চিনের আরও কিছু জায়গায় এবং তাইওয়ানের অল্প সংখ্যক স্থানে চলে যায় । সুকাফার অধীনে এমনই একটি দল ইউনান থেকে পশ্চিমে ভারতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ।

দয়ানন্দ বোরগোহাইনের কথায়, "1214 সালে সুকাফা তাঁর 9,000 জন লোক নিয়ে পশ্চিম দিকে যেতে শুরু করে ৷ 14 বছরে তারা 1,112 কিমি পথ অতিক্রম করেছে এবং তারপর পাটকাই পাহাড়ি রেঞ্জ পেরিয়ে অসমে প্রবেশ করে । তিনি যে এলাকায় প্রবেশ করেছিলেন তা তখন সৌমরপীঠ নামে পরিচিত ছিল ।"

শিক্ষাবিদ জানান, সুকাফা রাজ্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে চরাইদেও এসেছিলেন ৷ তবে চরাইদেও প্রথম স্থান নয়, যাকে তিনি তাঁর রাজ্য প্রতিষ্ঠার স্থান হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন । তিনি উপনদী ডিখৌ নদীর মুখ খুঁজে পাওয়ার আগে ব্রহ্মপুত্রের উপরে এবং নীচে ভ্রমণ করেছিলেন । এরপর তিনি নদীতে যাত্রা করেন এবং বর্তমান অসম-নাগাল্যান্ড সীমান্তের কাছে একটি জায়গায় অবতরণ করেন ।

বোরগোহাইন বলেন, "সুকাফা তখন এলাকার স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে আলাপচারিতা করেন এবং কখনও কোনও সংঘর্ষে লিপ্ত হননি । যেহেতু তিনি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিলেন তাই স্থানীয় জনগণ তাঁকে চরাইদেওকে বেছে নিতে বলেন এবং এখান থেকে তাঁকে শাসন ক্ষমতা চালানোর পরামর্শ দিয়েছিল ৷ চরাইদেও একটি পাহাড়ি এলাকা এবং যেহেতু সুকাফা ইউনানের একটি পাহাড়ি অঞ্চল থেকে এসেছিল, তাই তিনি সেখানে তাঁর রাজধানী স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেন এবং সেখান থেকে 1228 সালে অহোম রাজ্যের সূচনা করেন । চরাইদেও মানে, পাহাড়ের চূড়ায় একটি বিশিষ্ট স্থান ।"

চরাইদেও ছিল অহোম রাজ্যের প্রথম রাজধানী । রাজধানী অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হওয়ার পরেও এটি অহোম শাসকদের জন্য একটি প্রতীকী ও আধ্যাত্মিক কেন্দ্র ছিল । চরাইদেও'র আশেপাশের এলাকাটি রাজকীয় সমাধিক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল, যেখানে অনেক অহোম রাজা, রানি এবং অভিজাতদের সমাধিস্থ করা হয়েছিল ৷

চরাইদেও মইডাম বড় মাটির ঢিবি, যা অন্যান্য প্রাচীন সংস্কৃতিতে পাওয়া পিরামিডাল কাঠামোর অনুরূপ । এই ঢিবিগুলি সাধারণত একটি ভূগর্ভস্থ চেম্বারের উপর নির্মিত হয় যেখানে মৃত ব্যক্তিদের বিভিন্ন জিনিস-সহ কবর দেওয়া হয় ৷ কাঠামোগুলিতে প্রায়শই ইট বা পাথরের মতো দেখতে দেওয়াল থাকে এবং মূলত আলংকারিক উপাদান ও পাথরের ভাস্কর্য দিয়ে সজ্জিত থাকে ।

অহোমরা বিস্তৃত কবরের আচার-অনুষ্ঠান পালন করত, যা মৃত্যুর পরের জীবনে তাদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে । মৃতদের পরকালে তাদের সাহায্য করার উদ্দেশ্যে অস্ত্র, অলঙ্কার এবং গৃহস্থালী সামগ্রী-সহ বিভিন্ন ধরনের কবর সামগ্রী দিয়ে দফন করা হয়েছিল । একটি মইডাম নির্মাণ ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যাতে জটিল আচার-অনুষ্ঠান এবং অনেক কারিগর ও শ্রমিকের অংশগ্রহণ জড়িত ছিল ৷ চরাইদেও মইডাম সাইটে অহোম রাজাদের 29টি মইডাম রয়েছে ।

বোরগোহাইন বলেছেন, "মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাওস, ভিয়েতনাম এবং কম্বোডিয়ার তাই-বংশোদ্ভূতদের অসমের 'তাই'-অহোম জনগণের সঙ্গে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে । তাই ইউনেসকোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে চরাইদেও মইডামের ঘোষণা উত্তর-পূর্ব ভারত এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে জনগণের মধ্যে সম্পর্ক বৃদ্ধির অ্যাক্ট ইস্ট নীতির লক্ষ্য পূরণে সাহায্য করবে ৷ এমনকী জাপান এবং চিনের লোকেরা, যারা বৌদ্ধ বংশোদ্ভূত তারা সাইটটি দেখতে আগ্রহী হবে ।"

অহোমরা বৌদ্ধ বংশোদ্ভূত নয়, তবে তাদের নিজস্ব আচার-অনুষ্ঠান রয়েছে । তারা মূলত প্রকৃতি পূজারি ছিল । উত্তর-পূর্বে আরও পাঁচটি 'তাই' গোষ্ঠী রয়েছে, যারা বৌদ্ধ । শিক্ষাবিদ দয়ানন্দ বোরগোহাইনের মতে, "ইউনেসকো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ কমিটির এই স্বীকৃতিতে শুধুমাত্র দক্ষিণ-পূর্ব এবং পূর্ব এশিয়া থেকে নয়, চরাইদেও মইডামে বিশ্বের অন্যান্য অংশ থেকেও পর্যটকদের আনাগোনা বাড়াবে ৷ এটি পর্যটন কেন্দ্রের লোকের আনাগোনা আশেপাশের অঞ্চলগুলির শক্তিশালী উন্নয়নেও সহায়তা করবে ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.