নয়াদিল্লি, 17 মে: 2024 সালে অর্থ তছরুপের মামলায় দু’জন মুখ্যমন্ত্রী গ্রেফতার হয়েছেন ৷ একজন বর্তমান ৷ আর একজন প্রাক্তন ৷ রাঁচিতে ভারতীয় সেনার জমি বেআইনিভাবে বিক্রি ও কেনার জন্য গ্রেফতার হন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন ৷ গত 31 জানুয়ারি গ্রেফতার হওয়ার কিছুক্ষণ আগে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন হেমন্ত ৷ দিল্লির আবগারি নীতি, যা এখন বাতিল হয়ে গিয়েছে, তা তৈরির সময় দুর্নীতি করার অভিযোগে গত 21 মার্চ গ্রেফতার হন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷ তবে তিনি মুখ্যমন্ত্রীর পদে ইস্তফা দেননি ৷ ওই মামলায় অর্থ তছরুপ ও বৈদেশিক বিনিময় সংক্রান্ত আইন ভাঙার তদন্ত করছে কেন্দ্রীয় সংস্থা ৷
চলতি লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে অংশ নেওয়ার জন্য সোরেন ও কেজরিওয়াল, দু’জনেই সুপ্রিম কোর্টে জামিনের আবেদন করেছিলেন ৷ জামিন বা অন্তর্বর্তী রক্ষাকবচ দেওয়ার জন্য ঝাড়খণ্ড ও দিল্লির হাইকোর্টে আবেদন করা হয় দু’জনের তরফে ৷ দু’টি আবেদনই খারিজ হয়ে যায় ৷ এই দুই মামলায় অনেক মিল থাকলেও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য হল কেজরিওয়াল জামিন পেলেও সোরেনের কারাবাস অব্যাহত রয়েছে ৷
কেজরিওয়ালের মুক্তি কিভাবে হল ?
গত 10 মে সুপ্রিম কোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ অন্তর্বর্তী জামিনে কেজরিওয়ালের মুক্তির নির্দেশ দেয় । রাউজ অ্যাভিনিউ কোর্ট ও দিল্লি হাইকোর্টের দেওয়া নির্দেশের বিরুদ্ধে যে আবেদন সুপ্রিম কোর্টে হয়েছিল, তার প্রেক্ষিতেই এই রায় দেওয়া হয়৷ কেজরিওয়ালকে জামিন দেওয়ার ক্ষেত্রে চলতি লোকসভা নির্বাচন আদালতের মনে খুব বেশি প্রভাব ফেলেছিল । সেটা আদালতের পর্যবেক্ষণে স্পষ্ট ৷ আদালত লোকসভার নির্বাচনকে এই বছরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বলে জানায় ৷ সুপ্রিম কোর্ট আরও উল্লেখ করেছিল যে জামিন দেওয়ার সময় একজন ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত বিশেষত্বগুলি বিবেচনা করেছে আদালত ৷ তাই জামিন না দেওয়া অন্যায় হবে ৷ কারণ, ফসল কাটা বা ব্যবসায়িক বিষয়গুলি দেখাশোনা করতে হবে এমন আবেদনের সঙ্গে বিষয়টি তুলনীয় নয় ৷
যেহেতু কেজরিওয়াল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা (যা ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স বা ইন্ডিয়ারও অংশ), তাই লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের জন্য তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল ৷ তাছাড়া সুপ্রিম কোর্ট উল্লেখ করে যে কেজরিওয়ালের কোনও অপরাধমূলক অতীত রেকর্ড নেই ৷ তাছাড়া তাঁর গ্রেফতারি বৈধতা নিয়ে চ্যালেঞ্জ হয়েছে ৷ কেজরিওয়াল 1 জুন পর্যন্ত জামিনে মুক্তি পেয়েছেন এবং 2 জুন আত্মসমর্পণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে । জামিনে তাঁকে শর্তও দেওয়া হয়েছে ৷ তিনি মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয় ও দিল্লি সচিবালয়ে যেতে পারবেন না বা অফিসিয়াল ফাইলগুলিতে স্বাক্ষর করতে পারবেন না । তিনি এই মামলায় তাঁর ভূমিকা সম্পর্কে কোনও মন্তব্য করবেন না, কোনও সাক্ষীর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন না বা মামলার সঙ্গে যুক্ত কোনও অফিসিয়াল ফাইল দেখবেন না বলেও আশা করা হচ্ছে ।
সোরেনের মুক্তিতে কোন বিষয়টি বাধা হল ?
সোজা কথায়, কোনও সোজা উত্তর নেই ! আগামী 20 মে লোকসভা নির্বাচনের পঞ্চম দফায় ঝাড়খণ্ডের তিনটি কেন্দ্রে ভোট হবে । এই পটভূমিতে সোরেনের আইনজীবীদের তরফে আদালতে যুক্তি দেওয়ার সময় কেজরিওয়ালের মামলার কথা তোলা হয় ৷ দু’টো পরিস্থিতিই এক বলে দাবি করা হয় ৷ কেজরিওয়ালের জামিন আদেশে সুপ্রিম কোর্টের যুক্তিও সোরেনের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে ৷ কারণ, ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা এবং ঝাড়খণ্ডে তাঁর গুরুত্ব একই ৷
যাই হোক, বিচারপতি সঞ্জীব খান্না এবং দীপঙ্কর দত্ত, যাঁরা মাত্র কয়েক দিন আগে কেজরিওয়ালকে জামিন দিয়েছিলেন, সোরেনের ক্ষেত্রে জামিনের আরজি প্রত্যাখ্যান করেন । ইডি-কে নোটিশ জারি করলেও পরবর্তী শুনানি আগামী 20 মে হবে বলে জানিয়েছে আদালত ৷ সোরেনের আইনজীবীদের তরফে মামলার শুনানি 17 মে করার আবেদন করা হয় ৷ ঝাড়খণ্ড হাইকোর্টে সোরেনের জামিন মামলার শুনানির বিলম্বের কথাও বলা হয় ৷
মূলত, একজন রাজনীতিকের নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ করার ক্ষমতা কেজরিওয়ালের মুক্তি নিশ্চিত করেছিল, কিন্তু সোরেনের ক্ষেত্রে তা হল না ৷ এই দুই ব্যক্তির মধ্যে মূল পার্থক্য হল যে কেজরিওয়াল একজন নির্বাচিত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে রয়েছেন, সোরেন তা করেননি । সুনির্দিষ্টভাবে কেন সুপ্রিম কোর্ট সোরেনকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেয়নি, তা ব্যাখ্যা করা বা যুক্তিযুক্ত করা কঠিন । কেন সুপ্রিম কোর্ট একজন নির্বাচিত রাজনীতিবিদকে একটি মামলায় জামিন দিল, আরেকজনকে দিল না, তার উত্তর নিশ্চয় জানা যাবে ৷
ইতিমধ্যে...
বরং মজার বিষয় হল, পঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট পঞ্জাবের প্রাক্তন বনমন্ত্রী সাধু সিং ধর্মসোটকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে, যাতে তিনি লোকসভা নির্বাচনে প্রচার করতে পারেন । পাঞ্জাবের বন বিভাগে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে 2024 সালের জানুয়ারিতে ধর্মসোটকে গ্রেফতার করা হয়েছিল । বলাই বাহুল্য, ধর্মসোটের মামলায় কেজরিওয়ালকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দেওয়ার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের ওপর ভরসা করেছে হাইকোর্ট !
আরও পড়ুন: