শ্রীনগর, 26 ফেব্রুয়ারি: ভালো চাকরির প্রলোভনে পা দিয়ে বিদেশ গিয়েছিলেন আজাদ ইউসুফ কুমার ৷ ভালো চাকরি পাওয়া তো দূর, এখন বছর 31 এর ওই যুবককে লড়তে হচ্ছে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই ৷ পরিবারের দাবি, তাঁকে ভুল বুঝিয়ে রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয় ৷ তার পর থেকে সেখানে তাঁকে রাশিয়ার ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হচ্ছে ৷ এই পরিস্থিতিতে জম্মু ও কাশ্মীরের পুলওয়ামা জেলার ত্রালের পোশওয়ান গ্রামে আজাদের পরিবার উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে ৷ তারা ভারত সরকারের কাছে আবেদন করেছে আজাদকে ফিরিয়ে আনার জন্য ৷
আজাদের পরিবারের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, বাবা ভ্লগ্স নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে ৷ এই চ্যানেলের কাজ বিদেশে ভারতীয়দের চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়া ৷ চ্যানেলটি পরিচালনা করেন জনৈক ফয়সল খান ৷ তিনি মুম্বইয়ের বাসিন্দা ৷ তাঁর চ্যানেলের মাধ্যমেই দুবাইয়ে ভালো চাকরির খোঁজ পান আজাদ ৷ তাঁর ভাই সাজাদ আহমেদ কুমার ইটিভি ভারত-কে জানান, তাঁর দাদা গত ডিসেম্বরে বিদেশে চাকরির জন্য যান ৷ 14 ডিসেম্বর দুবাই থেকে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন ৷ তিনি যে এর পর রাশিয়া যাচ্ছেন, সেই কথা তখনও পরিবারকে তিনি জানাননি ৷ সাজাদের দাবি, তখন বিষয়টি জানলে তাঁরা কখনোই আজাদকে সেখানে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে কাজ করতে যেতে দিতেন না ৷
সাজাদ জানান, সোশাল মিডিয়া ও কলিং অ্যাপের মাধ্যমে তাঁরা আজাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন । কিন্তু রাশিয়ায় যাওয়ার পরও আজাদ তাঁদের কিছু জানাননি ৷ সম্প্রতি বিষয়টি পরিবারের কাছে জানিয়েছেন ৷ এই নিয়ে সাজাদ বলেন, "কয়েকদিন আগে তিনি আমাদের জানান যে ইউক্রেনের সেনাবাহিনী তাঁর পায়ে গুলি করেছে ৷ তিনি আহত হয়েছেন ।’’ তখনই সাজাদরা জানতে পারেন যে আজাদ ও অন্যান্য ভারতীয়রা রাশিয়া এবং ইউক্রেন সীমান্তে রয়েছেন ৷ সেখানে প্রাণ বাঁচানোর লড়াই করেছেন ৷ তাঁদের দিয়ে কনসাল্টেন্সি এজেন্ট রাশিয়ান ভাষায় তৈরি চুক্তিপত্রও সাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন সাজাদ ৷
আজাদ কর্মসূত্রে এর আগেও দুবাইতে ছিলেন ৷ বছর দুয়েক আগে তিনি ফিরে আসেন ৷ তার পর গ্রামেই শ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন ৷ বাড়িতে তাঁর চারমাসের সন্তানও রয়েছে ৷ তাই কাজের জন্য তাঁর বিদেশযাত্রায় প্রাথমিকভাবে কেউই দুঃশ্চিন্তায় ছিলেন না ৷ কিন্তু এখন তাঁর প্রাণ সংশয়ের কথা জানতে পারে আত্মীয় থেকে প্রতিবেশীরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন৷ প্রত্যেকেই ভারত সরকারের কাছে সাহায্যের জন্য আরজি জানিয়েছেন ৷
আজাদের মা রাজা সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে সাহায্যের জন্য় আবেদন জানিয়েছেন ৷ তিনি ইটিভি ভারত-কে বলেন, "আমি জানি না রাশিয়া কোথায় যে দেশের নাম আমি কখনও শুনিনি, তাঁর সঙ্গে আমার ছেলের কী সম্পর্ক ? আমি আমার ছেলেকে দেশে ফেরাতে সাহায্য করার জন্য প্রধানমন্ত্রী মোদির কাছে আবেদন করছি ।"
পুলওয়ামা জেলার পুলিশের তরফে ইটিভি ভারত-কে জানানো হয়েছে যে আজাদের রাশিয়া যাওয়ার বিষয়টি নিয়ে তারা অবগত ছিল না ৷ সংবাদমাধ্যম থেকে তারা বিষয়টি জানতে পারে ৷ তার পর আজাদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ৷ পুলিশের সঙ্গে দেখা করে বিষয়টি জানাতে বলা হয়েছে, যাতে বিষয়টি সরকারের কাছে তুলে ধরা যায় ৷ অন্যদিকে জম্মু ও কাশ্মীর প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি ৷
এদিকে আজাদের মতো বাবা ভ্লগ্সের মাধ্য়মে আরও একজন বিদেশে চাকরির জন্য গিয়ে রাশিয়ায় আটকে পড়েছেন ৷ তাঁর নাম জাহোর আহমেদ ৷ তিনি জম্মু ও কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার কারনাহর হাঞ্জিনার গ্রামের বাসিন্দা ৷ এছাড়া গুজরাত, কর্ণাটকের অনেকে একইভাবে রাশিয়ায় গিয়ে ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে কাজ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ৷ রাশিয়া সরকার তাঁদের পাসপোর্ট ও ভিসা কেড়ে নিয়েছে, ফলে তারা চাইলেও আর দেশে ফিরতে পারছে না ৷ এই নিয়ে এআইএমআইএম-র সাংসদ আসাদুদ্দিন ওয়াইসি বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকরকে গত 25 জানুয়ারি চিঠি লেখেন ৷ এই ভারতীয়দের দেশে ফেরানোর ব্যবস্থার কথা বলেন ৷
এই নিয়ে বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র রণধীর জয়শওয়াল গত 23 ফেব্রুয়ারি একটি বিবৃতিতে বলেছিলেন, "আমরা অবগত যে কয়েকজন ভারতীয় নাগরিক রাশিয়ান সেনাবাহিনীতে সহায়তার চাকরির জন্য যোগ দিয়েছেন । ভারতীয় দূতাবাস নিয়মিতভাবে এই বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট রাশিয়ান কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলছে । তাদের তাড়াতাড়ি ছেড়ে দেওয়ার কথা বলেছি । আমরা সমস্ত ভারতীয় নাগরিকদের যথাযথ সতর্কতা অবলম্বন করতে এবং এই লড়াই থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছি ।"
আরও পড়ুন: