কাশ্মীরের রাজনীতি ক্রমশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে নির্বাচন এবং তার পরে ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর । নির্বাচনে জম্মু শহরের কাছাকাছির জেলাগুলি বিজেপির প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করেছে ৷ এই অঞ্চলের প্রতি বিজেপির অ্যাজেন্ডার প্রতি সমর্থন জানিয়েছে ৷ যদিও মাঝে মাঝে এড়িয়েও যাচ্ছে ।
জম্মু ও কাশ্মীরের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের পঞ্চম প্রতিষ্ঠা দিবসে লেফটেন্যান্ট গভর্নর যখন বিজেপি বিধায়কদের উপস্থিতি চেয়েছিলেন, তখন তাঁদের অনুপস্থিতিতে বিভ্রান্তি, বিব্রতকর পরিস্থিতি ও দ্বন্দ্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয় । জম্মুর জনগণ অপ্রতিরোধ্যভাবে বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন ৷ তাঁরা 370 ধারা বাতিলকে সমর্থন করেছেন এবং বিজেপির অ্যাজেন্ডার জন্য স্লোগান দিয়েছেন ।
অন্যদিকে, কাশ্মীরের জনগণ পুরনো দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের বিতর্কিত অতীতকে উপেক্ষা করে দ্ব্যর্থহীনভাবে ওই দলকে তাঁদের সেরা পছন্দ হিসাবে বেছে নিয়েছেন । একই সঙ্গে, পিডিপি (পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি)-এর প্রতি ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়েছেন সেখানকার মানুষ ৷ বিধানসভায় ওই দলের প্রতিনিধিত্ব নগন্য করে দিয়েছে ৷ কারণ, পিডিপি বিজেপিকে পূর্ববর্তী রাজ্য বিধানসভায় ট্রেজারি বেঞ্চে বসার সুযোগ করে দিয়েছিল ৷ জম্মু অঞ্চলের চেনাব উপত্যকা ও পীর পঞ্জাল বিভিন্ন দলের মধ্যে পছন্দ করার জন্য ভাগ করে নিয়েছে ।
আগে যাঁরা রাজ্য শাসন করেছেন, সেই রাজনীতিবিদরা আবার ক্ষমতায় ফিরেছেন ৷ তাঁদের দায়িত্ব ও পদ একই আছে ৷ তবে তাঁদের ম্যান্ডেট ও ক্ষমতা আগের তুলনায় সীমিত । যেহেতু বিধানসভা সমানভাবে দুর্বল, আগের রাজ্য বিধানসভার মতো সবচেয়ে শক্তিশালী নয়, সেহেতু সদস্যদের কম ক্ষমতা থাকবে । বেশিরভাগ জিনিসই কেন্দ্রের দ্বারা সরাসরি নিয়ন্ত্রিত হবে ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মন্ত্রিসভার একটি সীমিত ক্ষমতা থাকবে ।
মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভা বেশিরভাগ জিনিসের জন্য কেন্দ্রের দয়ার উপর নির্ভরশীল থাকবে এবং কংগ্রেস শরিক হওয়ার কারণে তাদের পক্ষে সমঝোতা করা সবসময় কঠিন হবে । ন্যাশনাল কনফারেন্স একসময় এনডিএ-র অংশ ছিল ৷ তারা বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে ৷ বিজেপিও প্রতিদানে ওমর আবদুল্লার প্রতি নরম মনোভাব প্রদর্শন করেছে ৷
অনুদানের বিষয়টি নিয়ে জটিলতা তৈরি হতে পারে, এটা আন্দাজ করেই কংগ্রেস একইভাবে ওমর আবদুল্লার নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার অংশ না-হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহের সঙ্গে ওমরের বৈঠক ইতিবাচক হওয়ায়, তা কংগ্রেস-এনসি জোটের জন্য কোনও বড় লক্ষণ দেখাচ্ছে না৷ সেই কারণেই কংগ্রেস যেকোনও ঘটনার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত বলেই মনে হচ্ছে ৷
অন্যথায়, ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং কংগ্রেসের নিজস্ব কোনও দুর্দান্ত স্মৃতি নেই । জওহরলাল নেহেরু যখন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন এনসি-র প্রতিষ্ঠাতা শেখ আবদুল্লা জেলে বন্দি ছিলেন । ইন্দিরা গান্ধি ক্ষমতায় থাকাকালীন ফারুক আবদুল্লাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয় । একে অপরকে বড় হতে দেখা ছাড়া ওমর আবদুল্লা এবং গান্ধি ভাইবোনদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার মতো কোনও দুর্দান্ত স্মৃতি নেই ।
উলটোদিকে, মুফতিরা আপাতত জনসাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে রাডারের বাইরে চলে গিয়েছেন ৷ ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁরা এই অবস্থায় থাকবেন, যতক্ষণ না মানুষ তাঁরা যা করেছেন, তা ভুলে যায় । পিডিপি শাসনকালে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মেহবুবা মুফতি বিক্ষোভের সময় অল্প বয়স্ক ছেলেদের হত্যার পক্ষে ছিলেন ৷ কিন্তু এখন তিনি চোখের জল ফেলেন এবং স্লোগান দেন, যা তাঁর পক্ষে কাজ করে বলে মনে হয় না । তাঁর মেয়ে, ইলতিজা মুফতি নির্বাচনী রাজনীতিতে এবার আত্মপ্রকাশ করেছিলেন ৷ কিন্তু তিনি তাঁর দাদুর দুর্গ বিজবেরা থেকে অপমানজনকভাবে পরাজিত হয়েছেন ।
পিডিপির প্রতি ক্ষোভ উপত্যকায় এনসি-র জন্য ভালো বিষয় হয়ে উঠেছে । কোনও বাস্তবসম্মত বিকল্প ছাড়াই, কাশ্মীরি ভোটাররা ভালো কিছুর আশায় তাদের প্রথম পছন্দ হিসেবে ন্যাশনাল কনফারেন্সকে বেছে নিয়েছে ৷ স্বস্তির বাইরে, অনেক প্রত্যাশা থাকা উচিত নয় ৷ কারণ, অতীতে যা ঘটেছে, তার জন্য এই একই দলকে দায়ী করা হয় ।
জামাত-ই-ইসলামি তাদের বিরুদ্ধে 1987 সালের নির্বাচনী কারচুপির অভিযোগ এনেছিল, যা কাশ্মীরের সংঘর্ষের উৎস বলে মনে করা হয় । জামাত এবার এনসি-র বিরুদ্ধে বিজেপির পাশে দাঁড়াচ্ছে । ইঞ্জিনিয়ার রশিদের নেতৃত্বে এআইপি-র সদস্যরা বিজেপির পাশে থাকার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়েছেন, তাতে কোনও ফল হয়নি । ওমর আবদুল্লা ও সাজাদ লোনের মতো হেভিওয়েটদের পরাজিত করে বারামুল্লা আসন থেকে বিজয়ী হওয়ার সময় রশিদ জেলে ছিলেন ।
যেহেতু রাজনীতিতে কোনও কিছুই স্থায়ী নয় ৷ তাই কংগ্রেস শেখ আবদুল্লাকে কারারুদ্ধ করলেও পরে তাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে এবং বিজেপি অন্যান্য কাশ্মীরি নেতাদের কারারুদ্ধ করলেও, ভবিষ্যতে তাঁদের সঙ্গে কাজ করতে পারে । ন্যাশনাল কনফারেন্স ইতিমধ্যেই গুজব ছড়িয়েছে যে দিল্লি খুশি এবং রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দ্রুত দিল্লি থেকে শ্রীনগরে পথ ধরবে বলে বার্তাও দিয়েছে ৷
এনসি অনুচ্ছেদ 370 পুনরুদ্ধারের বিষয়ে আলোচনা করতে পারে ৷ তবে তারা বিজেপিকে বিরক্ত করতে চায় না ৷ যেমন এটি পূর্ববর্তী জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যে তাদের মূল অ্যাজেন্ডা 'স্বায়ত্তশাসন'-এর দাবির বিষয়টি সামলেছিল, এবারও একই কৌশল নেওয়া হতে পারে ৷ কাশ্মীরের রাজনীতিতে আধিপত্য বজায় রাখতে চোখে ধুলো দেওয়ার প্রক্রিয়া জারি থাকবে এবং আসল সমস্যাগুলি পিছিয়ে যাবে ।