ETV Bharat / opinion

শুধু বেঁচে থাকা নয়, মজুরির মাধ্যমে শ্রমিকদের উন্নতির জন্য ক্ষমতায়ন জরুরি - Living Wage - LIVING WAGE

From Minimum Wage to Living Wage: ন্যূনতম মজুরি থেকে জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি খুব গুরুত্বপূর্ণ ৷ শুধু বেঁচে থাকার জন্য নয়, মজুরির মাধ্যমে শ্রমিকদের উন্নতির জন্য ক্ষমতায়ন জরুরি ৷ এই নিয়ে লিখছেন আইআইএম মুম্বইয়ের অর্থ বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ এম ভেঙ্কটেশ্বরলু ৷

Wage
Wage
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Apr 16, 2024, 6:01 AM IST

হায়দরাবাদ, 15 এপ্রিল: 2025 সালের মধ্যে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি থেকে ভালোভালে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন মজুরিতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এই লক্ষ্য শ্রমশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং দুর্দান্ত খবর । কেন্দ্রীয় সরকার আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য, শিক্ষা এবং পোশাকের মধ্যে জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরির মান প্রতিষ্ঠা করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে কাজ করছে । সুতরাং জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি প্রতিস্থাপনের পদক্ষেপ একটি শালীন জীবনযাত্রা নিশ্চিত করবে, ব্যক্তিদের মঙ্গলকে উৎসাহিত করবে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই সমাজ গড়ে তুলবে ।

ন্যূনতম মজুরি

1948 সালের আইনে ভারত ন্যূনতম মজুরি নীতির প্রবর্তন করে । ন্যূনতম মজুরি হল, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পাদিত কাজের জন্য নিয়োগকর্তাদের তরফে কর্মচারীদের দেওয়া প্রয়োজনীয় সামান্য পারিশ্রমিক, যা আইন দ্বারা সুরক্ষিত । অন্যদিকে জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করে যে শ্রমিকরা তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য যথেষ্ট উপার্জন করে ৷ জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি আরও ন্যায়সঙ্গত এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য অবদান রাখে ।

ভারতে ন্যূনতম মজুরি প্রতিটি রাজ্যে আলাদা । অঞ্চল, শিল্প, দক্ষতার স্তর এবং কাজের প্রকৃতির মতো একাধিক মানদণ্ডের অধীনে এই মজুরিকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে । 2023 সালে ভারতে জাতীয়স্তরে ন্যূনতম মজুরি ছিল প্রতিদিন 178 টাকা, যা গত কয়েক বছর ধরে একই রয়েছে । ন্যূনতম মজুরি আইনের অধীনে অদক্ষ শ্রমিকদের গড় বেতন প্রতি মাসে 2 হাজার 250 টাকা থেকে 70 হাজারের মধ্যে । তবে গড় মাসিক বেতন প্রতি মাসে মাত্র 29 হাজার 400 টাকা । মজুরির বিস্তৃত পরিসর ভারতে আয় বৈষম্যের অন্যতম কারণ ।

মজুরি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধি ভারতীয় প্রেক্ষাপটে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত । মজুরি গতিশীলতা উৎপাদন খরচ এবং ভোক্তা ক্রয় ক্ষমতার উপর প্রভাবের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে । অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক কারণগুলির একটি জটিল ইন্টারপ্লে, সরকারি নীতি এবং রিজার্ভ ব্যাংকের পদক্ষেপগুলি আমাদের দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে ।

জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি

বেঁচে থাকার মতো সম্পদ গড়তে ও ভালো জীবনযাত্রার জন্য আয় বৈষম্য মোকাবিলা করা প্রয়োজন । আয়ের বৈষম্য 'গিনি কোফিসিয়েন্ট' ব্যবহার করে পরিমাপ করা হয় ৷ এঠি আয় বৈষম্যের একটি বহুল ব্যবহৃত পরিমাপ এবং স্কোরটি 0 এবং 1 এর মধ্যে থাকে । যেখানে সম্পূর্ণ সমতার ফলে 'গিনি কোফিসিয়েন্ট' শূন্য হবে এবং সম্পূর্ণ অসমতার ফলাফল হবে 1 । তথ্যে দেখা গিয়েছে, 'গিনি কোফিসিয়েন্ট' 2014-15 সালে 0.472 ছিল ৷ সেখানে থেকে 2022-23 বছরে 0.402-তে কমে গিয়েছে ৷ আয় বৈষম্যের হ্রাসকে উপার্জন পিরামিডের নীচে মাইগ্রেশনের একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয় । তবে প্রস্তাবিত জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি আয় বৈষম্যকে আরও কমিয়ে দেবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে ।

দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ ৷ মজুরি মূল্যবৃদ্ধি ধরে রাখতে অক্ষম । যদি মূল্যবৃদ্ধি হয় এবং মজুরি স্থির থাকে, তাহলে এটি ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, জীবনযাত্রার মান হ্রাস এবং সম্ভাব্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে । অন্যান্য উদীয়মান দেশের তুলনায় মূল্যবৃদ্ধির ভারতে অনেক কম ৷ 2013 সালে গড় মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 10.02 শতাংশ, যা একটি উদ্বেগের বিষয় ছিল । তবে ভারতের রাজস্ব ও আর্থিক নীতিগুলি একটি ক্যালিব্রেটেড পদ্ধতিতে ফেব্রুয়ারি 2024 সালের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধিকে 5.09 শতাংশে নামিয়ে আনতে সাহায্য করেছে ।

মাথাপিছু আয়-ব্যয়

মাথাপিছু আয় এবং ভোগ্যপণ্যে ব্যয় ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক মঙ্গল ও আচরণকে প্রভাবিত করে । 2022-23 সালের জন্য ভারতের মাথাপিছু আয় (বর্তমান মূল্যে) দাঁড়িয়েছে 1 লক্ষ 72 হাজার টাকা, যা 2014-15 সালে 86 হাজার 647 টাকা থেকে প্রায় 100 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন মোদি সরকার প্রথম ক্ষমতায় আসে । এদিকে 2022-23-এর জন্য মাসিক মাথাপিছু খরচ ছিল গ্রামীণ ভারতে 3 হাজার 773 টাকা এবং শহরে 6 হাজার 459 টাকা গড়ে, খাদ্য এবং অন্যান্য ব্যয়ের অংশ যথাক্রমে 40 এবং 60 শতাংশ । মাসিক মাথাপিছু খরচের উপর ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে গ্রামে গড় মাসিক মাথাপিছু খরচ 2011-12 সালে 1 হাজার 430 টাকা ছিল এবং 2022-23 সালে তা বেড়ে 3 হাজার 773 টাকা হয়েছে, যা 2.60 গুণ বেশি । তাই গত দশ বছরে মাথাপিছু খরচের তুলনায় ভোগ্যপণ্যে ব্যয়ের বৃদ্ধি অনেক বেশি ।

বেকারত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যা ভারতের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে চ্যালেঞ্জ করে চলেছে । 15 বছর বা তার বেশি বয়সি ব্যক্তিদের জন্য ভারতের বেকারত্বের হার 2023 সালের জানুয়ারি-মার্চের মধ্যে 6.8 শতাংশে নেমে এসেছে, যা এক বছর আগে 8.2 শতাংশ ছিল । জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের প্রস্তাবের প্রাথমিক কারণ হল, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি প্রায়শই জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরির তুলনায় অনেক কম । ভারতে কিছু সেক্টরে একজন শ্রমিক যা উপার্জন করে এবং পরিবারের ভরণপোষণের জন্য জীবিকা নির্বাহের মজুরির মধ্যে একটি বড় ব্যবধান রয়েছে । উপরে উল্লিখিত হিসাবে বিভিন্ন ধরণের কাজ বিভিন্ন ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে যুক্ত, যা দেশের মধ্যে রাজ্য থেকে রাজ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে ।

মজুরির প্রভাব শ্রমিকদের জীবনে

শ্রমিক ও তাদের পরিবারের উপর নিম্ন মজুরির প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী । যদি শ্রমিকদের কম বেতন দেওয়া হয়, তাহলে তা নেতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং একটি সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে । যেসব শ্রমিক কম মজুরি পান তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য আরও আর্থিক সংস্থানের প্রয়োজন হতে পারে । এছাড়াও কম মজুরি দারিদ্র্য এবং অসমতার বাড়িয়ে তোলে, সমাজের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলকে বিরূপদ দিকে প্রভাবিত করে ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সমীক্ষাটিও নিশ্চিত করে যে একজন শ্রমিক ভারতে বর্তমান ন্যূনতম মজুরি থেকে জীবিকা নির্বাহ মতো আয় করে না ৷ যেখানে একটি গোটা পরিবার তার উপর নির্ভর করে । শুধুমাত্র উচ্চ দক্ষ কর্মীরা ভালো মজুরি পান, যা তাদের পরিবারকে ভালোভাবে বাঁচতে সাহায্য করে । ধরুন শ্রমিকরা জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি পায় না, সেক্ষেত্রে তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, যেমন একাধিক চাকরি করতে হয় ৷ তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দিতে হয় ৷ হঠাৎ শরীর খারাপ হলে চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারে না ৷

নতুন প্রস্তাবিত জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি ব্যবস্থার মাধ্যমে শ্রমিকরা উচ্চ মজুরি পায়, যা নিয়োগকর্তাদের উপকার করে এবং তাদের সন্তুষ্ট থাকতে সহায়তা করে । উপরন্তু, কর্মীরাও সন্তুষ্ট থাকে ৷ এর ফলে তারা ভালোভাবে কাজ করে । কিছু লোক বিশ্বাস করে যে জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি একটি ন্যূনতম মজুরি স্তরকে উত্থাপন করে, যা যারা বর্ধিত মজুরি পরিশোধ করতে পারে না তাদের অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে । প্রকৃতপক্ষে জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি, ন্যূনতম মজুরির চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং বর্ধিত খরচের ভয়ের কারণে নিয়োগকর্তারা নিয়োগ কমাতে পারে, যার ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে ।

দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণ

অর্থনীতিবিদ এবং নীতিনির্ধারকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে শালীন মজুরি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের অগ্রগতির কেন্দ্রবিন্দু । তারা দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে এবং একটি সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । জীবিকা নির্বাহের মতো মজুরি ভারতকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাহায্য করবে, শালীন কাজ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রচার করবে, ভারত 2030 সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।

তবে এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে মজুরি নিশ্চিত করার জন্য ও নীতিগুলি বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার, ব্যবসা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সহযোগিতায় বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন । এর মধ্যে থাকতে পারে ন্যূনতম মজুরি আইনের সংশোধনী, জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি প্রদানের জন্য প্রণোদনার প্রস্তাব এবং কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের উন্নতির ব্যবস্থা । শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, ন্যায্য মজুরি এবং একটি টেকসই সমাজ হল উন্নয়নের জন্য একটি সামগ্রিক পদ্ধতির আন্তঃসংযুক্ত উপাদান, যা ভারত 2030 সালের মধ্যে অর্জন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।

(উপরের মতামত লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত)

আরও পড়ুন:

  1. স্বাস্থ্যই সম্পদ ! স্কুলই তার পাঠ দেয়, তৈরি হয় ভবিষ্যতের ভিত্তি
  2. ভারতে আয় ও সম্পদের বৈষম্য বাড়ছে, কারণ কি কোটিপতি রাজ ?
  3. বিকশিত ভারতের পথ সুগম করে উদ্ভাবন, পড়ুন বিশ্লেষণ

হায়দরাবাদ, 15 এপ্রিল: 2025 সালের মধ্যে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি থেকে ভালোভালে বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজন মজুরিতে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এই লক্ষ্য শ্রমশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং দুর্দান্ত খবর । কেন্দ্রীয় সরকার আবাসন, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্য, শিক্ষা এবং পোশাকের মধ্যে জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরির মান প্রতিষ্ঠা করতে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) সঙ্গে কাজ করছে । সুতরাং জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে ন্যূনতম মজুরি প্রতিস্থাপনের পদক্ষেপ একটি শালীন জীবনযাত্রা নিশ্চিত করবে, ব্যক্তিদের মঙ্গলকে উৎসাহিত করবে এবং আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই সমাজ গড়ে তুলবে ।

ন্যূনতম মজুরি

1948 সালের আইনে ভারত ন্যূনতম মজুরি নীতির প্রবর্তন করে । ন্যূনতম মজুরি হল, একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সম্পাদিত কাজের জন্য নিয়োগকর্তাদের তরফে কর্মচারীদের দেওয়া প্রয়োজনীয় সামান্য পারিশ্রমিক, যা আইন দ্বারা সুরক্ষিত । অন্যদিকে জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি নিশ্চিত করে যে শ্রমিকরা তাদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক জীবনে সম্পূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করার জন্য যথেষ্ট উপার্জন করে ৷ জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি আরও ন্যায়সঙ্গত এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য অবদান রাখে ।

ভারতে ন্যূনতম মজুরি প্রতিটি রাজ্যে আলাদা । অঞ্চল, শিল্প, দক্ষতার স্তর এবং কাজের প্রকৃতির মতো একাধিক মানদণ্ডের অধীনে এই মজুরিকে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে । 2023 সালে ভারতে জাতীয়স্তরে ন্যূনতম মজুরি ছিল প্রতিদিন 178 টাকা, যা গত কয়েক বছর ধরে একই রয়েছে । ন্যূনতম মজুরি আইনের অধীনে অদক্ষ শ্রমিকদের গড় বেতন প্রতি মাসে 2 হাজার 250 টাকা থেকে 70 হাজারের মধ্যে । তবে গড় মাসিক বেতন প্রতি মাসে মাত্র 29 হাজার 400 টাকা । মজুরির বিস্তৃত পরিসর ভারতে আয় বৈষম্যের অন্যতম কারণ ।

মজুরি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধি ভারতীয় প্রেক্ষাপটে পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত । মজুরি গতিশীলতা উৎপাদন খরচ এবং ভোক্তা ক্রয় ক্ষমতার উপর প্রভাবের মাধ্যমে মূল্যবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করতে পারে । অভ্যন্তরীণ এবং বৈশ্বিক কারণগুলির একটি জটিল ইন্টারপ্লে, সরকারি নীতি এবং রিজার্ভ ব্যাংকের পদক্ষেপগুলি আমাদের দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করে ।

জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি

বেঁচে থাকার মতো সম্পদ গড়তে ও ভালো জীবনযাত্রার জন্য আয় বৈষম্য মোকাবিলা করা প্রয়োজন । আয়ের বৈষম্য 'গিনি কোফিসিয়েন্ট' ব্যবহার করে পরিমাপ করা হয় ৷ এঠি আয় বৈষম্যের একটি বহুল ব্যবহৃত পরিমাপ এবং স্কোরটি 0 এবং 1 এর মধ্যে থাকে । যেখানে সম্পূর্ণ সমতার ফলে 'গিনি কোফিসিয়েন্ট' শূন্য হবে এবং সম্পূর্ণ অসমতার ফলাফল হবে 1 । তথ্যে দেখা গিয়েছে, 'গিনি কোফিসিয়েন্ট' 2014-15 সালে 0.472 ছিল ৷ সেখানে থেকে 2022-23 বছরে 0.402-তে কমে গিয়েছে ৷ আয় বৈষম্যের হ্রাসকে উপার্জন পিরামিডের নীচে মাইগ্রেশনের একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয় । তবে প্রস্তাবিত জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি আয় বৈষম্যকে আরও কমিয়ে দেবে এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়াবে বলে আশা করা হচ্ছে ।

দ্রব্যমূল্যের ক্রমবর্ধমান বৃদ্ধি বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ ৷ মজুরি মূল্যবৃদ্ধি ধরে রাখতে অক্ষম । যদি মূল্যবৃদ্ধি হয় এবং মজুরি স্থির থাকে, তাহলে এটি ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, জীবনযাত্রার মান হ্রাস এবং সম্ভাব্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার দিকে পরিচালিত করে অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করে । অন্যান্য উদীয়মান দেশের তুলনায় মূল্যবৃদ্ধির ভারতে অনেক কম ৷ 2013 সালে গড় মূল্যবৃদ্ধির হার ছিল 10.02 শতাংশ, যা একটি উদ্বেগের বিষয় ছিল । তবে ভারতের রাজস্ব ও আর্থিক নীতিগুলি একটি ক্যালিব্রেটেড পদ্ধতিতে ফেব্রুয়ারি 2024 সালের মধ্যে মূল্যবৃদ্ধিকে 5.09 শতাংশে নামিয়ে আনতে সাহায্য করেছে ।

মাথাপিছু আয়-ব্যয়

মাথাপিছু আয় এবং ভোগ্যপণ্যে ব্যয় ব্যক্তিদের অর্থনৈতিক মঙ্গল ও আচরণকে প্রভাবিত করে । 2022-23 সালের জন্য ভারতের মাথাপিছু আয় (বর্তমান মূল্যে) দাঁড়িয়েছে 1 লক্ষ 72 হাজার টাকা, যা 2014-15 সালে 86 হাজার 647 টাকা থেকে প্রায় 100 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, যখন মোদি সরকার প্রথম ক্ষমতায় আসে । এদিকে 2022-23-এর জন্য মাসিক মাথাপিছু খরচ ছিল গ্রামীণ ভারতে 3 হাজার 773 টাকা এবং শহরে 6 হাজার 459 টাকা গড়ে, খাদ্য এবং অন্যান্য ব্যয়ের অংশ যথাক্রমে 40 এবং 60 শতাংশ । মাসিক মাথাপিছু খরচের উপর ন্যাশনাল স্যাম্পল সার্ভে রিপোর্ট অনুযায়ী, ভারতে গ্রামে গড় মাসিক মাথাপিছু খরচ 2011-12 সালে 1 হাজার 430 টাকা ছিল এবং 2022-23 সালে তা বেড়ে 3 হাজার 773 টাকা হয়েছে, যা 2.60 গুণ বেশি । তাই গত দশ বছরে মাথাপিছু খরচের তুলনায় ভোগ্যপণ্যে ব্যয়ের বৃদ্ধি অনেক বেশি ।

বেকারত্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ, যা ভারতের অর্থনৈতিক ল্যান্ডস্কেপকে চ্যালেঞ্জ করে চলেছে । 15 বছর বা তার বেশি বয়সি ব্যক্তিদের জন্য ভারতের বেকারত্বের হার 2023 সালের জানুয়ারি-মার্চের মধ্যে 6.8 শতাংশে নেমে এসেছে, যা এক বছর আগে 8.2 শতাংশ ছিল । জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়নের প্রস্তাবের প্রাথমিক কারণ হল, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ন্যূনতম মজুরি প্রায়শই জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরির তুলনায় অনেক কম । ভারতে কিছু সেক্টরে একজন শ্রমিক যা উপার্জন করে এবং পরিবারের ভরণপোষণের জন্য জীবিকা নির্বাহের মজুরির মধ্যে একটি বড় ব্যবধান রয়েছে । উপরে উল্লিখিত হিসাবে বিভিন্ন ধরণের কাজ বিভিন্ন ন্যূনতম মজুরির সঙ্গে যুক্ত, যা দেশের মধ্যে রাজ্য থেকে রাজ্যে উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হতে পারে ।

মজুরির প্রভাব শ্রমিকদের জীবনে

শ্রমিক ও তাদের পরিবারের উপর নিম্ন মজুরির প্রভাব তাৎপর্যপূর্ণ এবং সুদূরপ্রসারী । যদি শ্রমিকদের কম বেতন দেওয়া হয়, তাহলে তা নেতিবাচক দিকে নিয়ে যেতে পারে এবং একটি সম্প্রদায়ের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলতে পারে । যেসব শ্রমিক কম মজুরি পান তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য আরও আর্থিক সংস্থানের প্রয়োজন হতে পারে । এছাড়াও কম মজুরি দারিদ্র্য এবং অসমতার বাড়িয়ে তোলে, সমাজের সামগ্রিক স্বাস্থ্য এবং মঙ্গলকে বিরূপদ দিকে প্রভাবিত করে ।

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সমীক্ষাটিও নিশ্চিত করে যে একজন শ্রমিক ভারতে বর্তমান ন্যূনতম মজুরি থেকে জীবিকা নির্বাহ মতো আয় করে না ৷ যেখানে একটি গোটা পরিবার তার উপর নির্ভর করে । শুধুমাত্র উচ্চ দক্ষ কর্মীরা ভালো মজুরি পান, যা তাদের পরিবারকে ভালোভাবে বাঁচতে সাহায্য করে । ধরুন শ্রমিকরা জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি পায় না, সেক্ষেত্রে তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়, যেমন একাধিক চাকরি করতে হয় ৷ তাদের সন্তানদের স্কুল থেকে ছাড়িয়ে দিতে হয় ৷ হঠাৎ শরীর খারাপ হলে চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারে না ৷

নতুন প্রস্তাবিত জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি ব্যবস্থার মাধ্যমে শ্রমিকরা উচ্চ মজুরি পায়, যা নিয়োগকর্তাদের উপকার করে এবং তাদের সন্তুষ্ট থাকতে সহায়তা করে । উপরন্তু, কর্মীরাও সন্তুষ্ট থাকে ৷ এর ফলে তারা ভালোভাবে কাজ করে । কিছু লোক বিশ্বাস করে যে জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি একটি ন্যূনতম মজুরি স্তরকে উত্থাপন করে, যা যারা বর্ধিত মজুরি পরিশোধ করতে পারে না তাদের অর্থনীতি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগগুলিকে ক্ষতিগ্রস্থ করে । প্রকৃতপক্ষে জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি, ন্যূনতম মজুরির চেয়ে বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং বর্ধিত খরচের ভয়ের কারণে নিয়োগকর্তারা নিয়োগ কমাতে পারে, যার ফলে বেকারত্ব বৃদ্ধি পেতে পারে ।

দারিদ্র্য ও বৈষম্য দূরীকরণ

অর্থনীতিবিদ এবং নীতিনির্ধারকরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন যে শালীন মজুরি অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের অগ্রগতির কেন্দ্রবিন্দু । তারা দারিদ্র্য ও বৈষম্য কমাতে এবং একটি সম্মানজনক ও মর্যাদাপূর্ণ জীবন নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । জীবিকা নির্বাহের মতো মজুরি ভারতকে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সাহায্য করবে, শালীন কাজ এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রচার করবে, ভারত 2030 সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।

তবে এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে মজুরি নিশ্চিত করার জন্য ও নীতিগুলি বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার, ব্যবসা এবং অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মধ্যে সহযোগিতায় বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন । এর মধ্যে থাকতে পারে ন্যূনতম মজুরি আইনের সংশোধনী, জীবনধারণের পক্ষে ন্যূনতম মজুরি প্রদানের জন্য প্রণোদনার প্রস্তাব এবং কর্মসংস্থান ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য শিক্ষা ও দক্ষতা প্রশিক্ষণের উন্নতির ব্যবস্থা । শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, ন্যায্য মজুরি এবং একটি টেকসই সমাজ হল উন্নয়নের জন্য একটি সামগ্রিক পদ্ধতির আন্তঃসংযুক্ত উপাদান, যা ভারত 2030 সালের মধ্যে অর্জন করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ ।

(উপরের মতামত লেখকের একান্ত ব্যক্তিগত)

আরও পড়ুন:

  1. স্বাস্থ্যই সম্পদ ! স্কুলই তার পাঠ দেয়, তৈরি হয় ভবিষ্যতের ভিত্তি
  2. ভারতে আয় ও সম্পদের বৈষম্য বাড়ছে, কারণ কি কোটিপতি রাজ ?
  3. বিকশিত ভারতের পথ সুগম করে উদ্ভাবন, পড়ুন বিশ্লেষণ
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.