ETV Bharat / opinion

ডিজিটাল প্রতারণা থেকে বাঁচার অন্যতম উপায় সতর্কতা অবলম্বন করা

Digital Deception A Cyber Menace: সাইবার অপরাধ বর্তমানে ভারত তথা বিশ্বের অন্যতম বড় দুঃশ্চিন্তার কারণ ৷ আর এর থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় বাড়তি সতর্কতা ৷ এ নিয়ে বিশেষ মতামত লিখলেন, ভিভি হরিপ্রসাদ ৷

ETV BHARAT
ETV BHARAT
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Mar 16, 2024, 8:09 PM IST

হায়দরাবাদ, 16 মার্চ: বিশ্বজুড়ে সাইবার প্রতারণার ঘটনা ঘটে চলেছে ৷ আর ভারতে এর প্রভাব দিনে দিনে ব্যাপক হয়ে উঠছে ৷ আর পিছনে জড়িত সাইবার অপরাধীরা ক্রমাগত প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সরকারি সংস্থা, পৌরনিগম ও ব্যক্তিগত ক্ষেত্র থেকে তথ্য চুরি করছে ৷ যা ব্যাপকতর ক্ষতির দিকে দেশবাসীকে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত ৷

2021 সালে ভারত 14 লক্ষ 20 হাজার সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে ৷ আর 2022 সালে সংখ্যাটা 13 লক্ষ 90 হাজারের বেশি ছিল ৷ যা 2021 সালের তুলনায় 38 শতাংশ বেশি ৷ সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা খুবই জটিল ও সময় সাপেক্ষ, যার ফলে প্রায়শই যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে যায় ৷ প্রযুক্তি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সুবিধা নিয়ে আসা সত্ত্বেও, সাইবার অপরাধীদের দ্বারা এর শোষণের বিরুদ্ধে ডিজিটাল পরিকাঠামো ও ব্যক্তিগত তথ্য ভাণ্ডার সুরক্ষিত করার জন্য বহুমুখী কৌশল প্রয়োজন ৷

অর্থই আসল উদ্দেশ্য সাইবার অপরাধীদের

সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে ভারতের সক্রিয় অবস্থান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে ৷ এটি একটি নোডাল এজেন্সি ৷ এরা সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করে ৷ তথ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একটি কনসোর্টিয়াম সবসময় সাইবার সংক্রান্ত বিপদ শনাক্ত ও প্রশমিত করতে নিজেদের উৎসর্গ করছে ৷ শুধুমাত্র 2020 সালে, কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম সাইবার অভিযোগ সম্পর্কিত প্রায় 11.58 লক্ষ অভিযোগের সমাধান করেছে ৷ সাইবার অপরাধীদের কৌশল বিভিন্ন পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য চুরি করে গ্রাহকদের টার্গেট করা ৷ সেই মতো ঘাতক সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে প্রতারণা করা ৷ যা ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফোর্স দ্বারা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই সাপেক্ষ ৷

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, হ্যাকাররা 2022 সালের নভেম্বরে দিল্লির অল-ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস বা এইমসের সব সার্ভারে ব়্যানসামওয়্যার দিয়ে হামলা চালিয়েছিল ৷ অবৈধভাবে চার কোটিরও বেশি সংবেদনশীল রেকর্ড কয়েক মুহূর্তের মধ্যে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছিল হ্যাকাররা ৷ যেখানে দেশের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যও ছিল ৷ যা সেই সব প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল ৷ এমনকি দিল্লি এইমসের প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করেছিল হ্যাকাররা ৷ একইভাবে 2023 সালের জুনে পরবর্তী সাইবার হামলার সময় অপরাধীরা এইমসের কম্পিউটার সিস্টেমে ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট করার চেষ্টা করেছিল ৷ তবে, এবার আর সফল হতে পারেনি সাইবার অপরাধীরা ৷ সৌভাগ্যবশত, প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবার দিকটিকে নিশ্চিত করেছিল এবং হ্যাকারদের অসৎ উদ্দেশ্যকে বানচাল করেছিল ৷

হ্যাকাররা ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করার জন্য বিভিন্ন উপায় বের করে ৷ যেখানে ফিশিং ইমেল সাইবার অপরাধীদের একটি প্রচলিত হাতিয়ার ৷ এই প্রতারণামূলক ইমেলগুলি নামী বা বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের জনসংযোগ ব্যবস্থাকে নকল করে ও গ্রাহকদের বিভিন্নরকম লিংক পাঠিয়ে প্রলুব্ধ করে ৷ যার মাধ্যমে ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার ওই ব্যক্তি বা সংস্থার সিস্টেমে ঢুকে যায় ৷ এই লিঙ্কগুলিতে ক্লিক করার অর্থ, হ্যাকারদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেম ও গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্যের অ্যাক্সেস দেওয়া ৷ দেশে রোজ এমন হাজার হাজার ফিশিং-মেল প্রতারণার ঘটনা ঘটে চলেছে ৷

এই বিপদ থেকে বাঁচতে, সমস্ত ইলেকট্রনিক মাধ্যমের প্রতি অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে সকলের সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক, প্রাপ্ত প্রতিটি ইমেলের সত্যতা বিস্তারিতভাবে যাচাই করতে হবে ৷ সাইবার অপরাধীরা ব়্যানসমওয়্যার মাধ্যমে একটি ক্ষতিকারক সফ্টওয়্যার, ব্যক্তি ও সংস্থার সিস্টেমে প্রবেশ করিয়ে লুঠ চালায় ৷ যা ডিজিটাল প্রতারকদের একটি সহজতম পদ্ধতির একটি ৷

সর্বাগ্রে সতর্কতা প্রয়োজন

আজকের ডিজিটাল যুগে, ইন্টারনেটের সর্বব্যাপিতা আপাতদৃষ্টিতে অসহনীয় এবং সর্বব্যাপী ৷ কিন্তু, ওয়েবসাইটগুলি ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উভয় ক্ষেত্রে কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৷ ফলস্বরূপ, সাইবার অপরাধীরা এই নির্ভরতাকে কাজে লাগায়, অনলাইন নিরাপত্তাকে টার্গেট ও তার সঙ্গে আপস করে ৷ এই ধরনের ঝুঁকি প্রশমিত করার জন্য, প্রযুক্তির ব্যবহারকারীদের শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে ৷ সেই সঙ্গে সন্দেহজনক লিঙ্ক এবং ওয়েবসাইটগুলি এড়িয়ে চলা ও সতর্কতা অবলম্বন করে ইমেল খোলার আবেদন জানানো হয় সাইবার সেলের তরফে ৷

আরও পড়ুন:

  1. সারা বিশ্বের মন্দার প্রভাব ভারতের অর্থনীতিতে
  2. ওপেন সোর্স ইনটেলিজেন্স, শক্তিশালী হাতিয়ার হয়েও বড় ঝুঁকির কারণ ওএসআইএনটি
  3. ক্রমশ বাড়ছে চাহিদা, বৈদ্যুতিক যানবাহনের হাত ধরেই নবজাগরণের দ্বারপ্রান্তে দেশ

হায়দরাবাদ, 16 মার্চ: বিশ্বজুড়ে সাইবার প্রতারণার ঘটনা ঘটে চলেছে ৷ আর ভারতে এর প্রভাব দিনে দিনে ব্যাপক হয়ে উঠছে ৷ আর পিছনে জড়িত সাইবার অপরাধীরা ক্রমাগত প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সরকারি সংস্থা, পৌরনিগম ও ব্যক্তিগত ক্ষেত্র থেকে তথ্য চুরি করছে ৷ যা ব্যাপকতর ক্ষতির দিকে দেশবাসীকে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত ৷

2021 সালে ভারত 14 লক্ষ 20 হাজার সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে ৷ আর 2022 সালে সংখ্যাটা 13 লক্ষ 90 হাজারের বেশি ছিল ৷ যা 2021 সালের তুলনায় 38 শতাংশ বেশি ৷ সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা খুবই জটিল ও সময় সাপেক্ষ, যার ফলে প্রায়শই যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে যায় ৷ প্রযুক্তি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সুবিধা নিয়ে আসা সত্ত্বেও, সাইবার অপরাধীদের দ্বারা এর শোষণের বিরুদ্ধে ডিজিটাল পরিকাঠামো ও ব্যক্তিগত তথ্য ভাণ্ডার সুরক্ষিত করার জন্য বহুমুখী কৌশল প্রয়োজন ৷

অর্থই আসল উদ্দেশ্য সাইবার অপরাধীদের

সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে ভারতের সক্রিয় অবস্থান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে ৷ এটি একটি নোডাল এজেন্সি ৷ এরা সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করে ৷ তথ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একটি কনসোর্টিয়াম সবসময় সাইবার সংক্রান্ত বিপদ শনাক্ত ও প্রশমিত করতে নিজেদের উৎসর্গ করছে ৷ শুধুমাত্র 2020 সালে, কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম সাইবার অভিযোগ সম্পর্কিত প্রায় 11.58 লক্ষ অভিযোগের সমাধান করেছে ৷ সাইবার অপরাধীদের কৌশল বিভিন্ন পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য চুরি করে গ্রাহকদের টার্গেট করা ৷ সেই মতো ঘাতক সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে প্রতারণা করা ৷ যা ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফোর্স দ্বারা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই সাপেক্ষ ৷

একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, হ্যাকাররা 2022 সালের নভেম্বরে দিল্লির অল-ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস বা এইমসের সব সার্ভারে ব়্যানসামওয়্যার দিয়ে হামলা চালিয়েছিল ৷ অবৈধভাবে চার কোটিরও বেশি সংবেদনশীল রেকর্ড কয়েক মুহূর্তের মধ্যে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছিল হ্যাকাররা ৷ যেখানে দেশের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যও ছিল ৷ যা সেই সব প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল ৷ এমনকি দিল্লি এইমসের প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করেছিল হ্যাকাররা ৷ একইভাবে 2023 সালের জুনে পরবর্তী সাইবার হামলার সময় অপরাধীরা এইমসের কম্পিউটার সিস্টেমে ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট করার চেষ্টা করেছিল ৷ তবে, এবার আর সফল হতে পারেনি সাইবার অপরাধীরা ৷ সৌভাগ্যবশত, প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবার দিকটিকে নিশ্চিত করেছিল এবং হ্যাকারদের অসৎ উদ্দেশ্যকে বানচাল করেছিল ৷

হ্যাকাররা ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করার জন্য বিভিন্ন উপায় বের করে ৷ যেখানে ফিশিং ইমেল সাইবার অপরাধীদের একটি প্রচলিত হাতিয়ার ৷ এই প্রতারণামূলক ইমেলগুলি নামী বা বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের জনসংযোগ ব্যবস্থাকে নকল করে ও গ্রাহকদের বিভিন্নরকম লিংক পাঠিয়ে প্রলুব্ধ করে ৷ যার মাধ্যমে ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার ওই ব্যক্তি বা সংস্থার সিস্টেমে ঢুকে যায় ৷ এই লিঙ্কগুলিতে ক্লিক করার অর্থ, হ্যাকারদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেম ও গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্যের অ্যাক্সেস দেওয়া ৷ দেশে রোজ এমন হাজার হাজার ফিশিং-মেল প্রতারণার ঘটনা ঘটে চলেছে ৷

এই বিপদ থেকে বাঁচতে, সমস্ত ইলেকট্রনিক মাধ্যমের প্রতি অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে সকলের সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক, প্রাপ্ত প্রতিটি ইমেলের সত্যতা বিস্তারিতভাবে যাচাই করতে হবে ৷ সাইবার অপরাধীরা ব়্যানসমওয়্যার মাধ্যমে একটি ক্ষতিকারক সফ্টওয়্যার, ব্যক্তি ও সংস্থার সিস্টেমে প্রবেশ করিয়ে লুঠ চালায় ৷ যা ডিজিটাল প্রতারকদের একটি সহজতম পদ্ধতির একটি ৷

সর্বাগ্রে সতর্কতা প্রয়োজন

আজকের ডিজিটাল যুগে, ইন্টারনেটের সর্বব্যাপিতা আপাতদৃষ্টিতে অসহনীয় এবং সর্বব্যাপী ৷ কিন্তু, ওয়েবসাইটগুলি ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উভয় ক্ষেত্রে কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৷ ফলস্বরূপ, সাইবার অপরাধীরা এই নির্ভরতাকে কাজে লাগায়, অনলাইন নিরাপত্তাকে টার্গেট ও তার সঙ্গে আপস করে ৷ এই ধরনের ঝুঁকি প্রশমিত করার জন্য, প্রযুক্তির ব্যবহারকারীদের শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে ৷ সেই সঙ্গে সন্দেহজনক লিঙ্ক এবং ওয়েবসাইটগুলি এড়িয়ে চলা ও সতর্কতা অবলম্বন করে ইমেল খোলার আবেদন জানানো হয় সাইবার সেলের তরফে ৷

আরও পড়ুন:

  1. সারা বিশ্বের মন্দার প্রভাব ভারতের অর্থনীতিতে
  2. ওপেন সোর্স ইনটেলিজেন্স, শক্তিশালী হাতিয়ার হয়েও বড় ঝুঁকির কারণ ওএসআইএনটি
  3. ক্রমশ বাড়ছে চাহিদা, বৈদ্যুতিক যানবাহনের হাত ধরেই নবজাগরণের দ্বারপ্রান্তে দেশ
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.