হায়দরাবাদ, 16 মার্চ: বিশ্বজুড়ে সাইবার প্রতারণার ঘটনা ঘটে চলেছে ৷ আর ভারতে এর প্রভাব দিনে দিনে ব্যাপক হয়ে উঠছে ৷ আর পিছনে জড়িত সাইবার অপরাধীরা ক্রমাগত প্রযুক্তির অপব্যবহার করে সরকারি সংস্থা, পৌরনিগম ও ব্যক্তিগত ক্ষেত্র থেকে তথ্য চুরি করছে ৷ যা ব্যাপকতর ক্ষতির দিকে দেশবাসীকে ঠেলে দিচ্ছে প্রতিনিয়ত ৷
2021 সালে ভারত 14 লক্ষ 20 হাজার সাইবার আক্রমণের শিকার হয়েছে ৷ আর 2022 সালে সংখ্যাটা 13 লক্ষ 90 হাজারের বেশি ছিল ৷ যা 2021 সালের তুলনায় 38 শতাংশ বেশি ৷ সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা খুবই জটিল ও সময় সাপেক্ষ, যার ফলে প্রায়শই যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে যায় ৷ প্রযুক্তি শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ব্যাংকিং ও বাণিজ্য ক্ষেত্রে সুবিধা নিয়ে আসা সত্ত্বেও, সাইবার অপরাধীদের দ্বারা এর শোষণের বিরুদ্ধে ডিজিটাল পরিকাঠামো ও ব্যক্তিগত তথ্য ভাণ্ডার সুরক্ষিত করার জন্য বহুমুখী কৌশল প্রয়োজন ৷
অর্থই আসল উদ্দেশ্য সাইবার অপরাধীদের
সাইবার নিরাপত্তা বিষয়ে ভারতের সক্রিয় অবস্থান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিমের সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে ৷ এটি একটি নোডাল এজেন্সি ৷ এরা সাইবার সুরক্ষা সংক্রান্ত বিষয়গুলি নিয়ে কাজ করে ৷ তথ্য নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একটি কনসোর্টিয়াম সবসময় সাইবার সংক্রান্ত বিপদ শনাক্ত ও প্রশমিত করতে নিজেদের উৎসর্গ করছে ৷ শুধুমাত্র 2020 সালে, কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম সাইবার অভিযোগ সম্পর্কিত প্রায় 11.58 লক্ষ অভিযোগের সমাধান করেছে ৷ সাইবার অপরাধীদের কৌশল বিভিন্ন পরিষেবা সংক্রান্ত তথ্য চুরি করে গ্রাহকদের টার্গেট করা ৷ সেই মতো ঘাতক সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে প্রতারণা করা ৷ যা ইমার্জেন্সি রেসপন্স ফোর্স দ্বারা যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করা খুবই সাপেক্ষ ৷
একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল, হ্যাকাররা 2022 সালের নভেম্বরে দিল্লির অল-ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সেস বা এইমসের সব সার্ভারে ব়্যানসামওয়্যার দিয়ে হামলা চালিয়েছিল ৷ অবৈধভাবে চার কোটিরও বেশি সংবেদনশীল রেকর্ড কয়েক মুহূর্তের মধ্যে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছিল হ্যাকাররা ৷ যেখানে দেশের বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্যও ছিল ৷ যা সেই সব প্রভাবশালী ব্যক্তিত্বের নিরাপত্তা নিয়ে বড়সড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল ৷ এমনকি দিল্লি এইমসের প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য মোটা অংকের মুক্তিপণ দাবি করেছিল হ্যাকাররা ৷ একইভাবে 2023 সালের জুনে পরবর্তী সাইবার হামলার সময় অপরাধীরা এইমসের কম্পিউটার সিস্টেমে ম্যালওয়্যার ইনজেক্ট করার চেষ্টা করেছিল ৷ তবে, এবার আর সফল হতে পারেনি সাইবার অপরাধীরা ৷ সৌভাগ্যবশত, প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী সাইবার প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিরবচ্ছিন্ন পরিষেবার দিকটিকে নিশ্চিত করেছিল এবং হ্যাকারদের অসৎ উদ্দেশ্যকে বানচাল করেছিল ৷
হ্যাকাররা ব্যবসা এবং ব্যক্তিগত কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করার জন্য বিভিন্ন উপায় বের করে ৷ যেখানে ফিশিং ইমেল সাইবার অপরাধীদের একটি প্রচলিত হাতিয়ার ৷ এই প্রতারণামূলক ইমেলগুলি নামী বা বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের জনসংযোগ ব্যবস্থাকে নকল করে ও গ্রাহকদের বিভিন্নরকম লিংক পাঠিয়ে প্রলুব্ধ করে ৷ যার মাধ্যমে ক্ষতিকারক ম্যালওয়্যার ওই ব্যক্তি বা সংস্থার সিস্টেমে ঢুকে যায় ৷ এই লিঙ্কগুলিতে ক্লিক করার অর্থ, হ্যাকারদের ইলেকট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেম ও গোপনীয় ব্যক্তিগত তথ্যের অ্যাক্সেস দেওয়া ৷ দেশে রোজ এমন হাজার হাজার ফিশিং-মেল প্রতারণার ঘটনা ঘটে চলেছে ৷
এই বিপদ থেকে বাঁচতে, সমস্ত ইলেকট্রনিক মাধ্যমের প্রতি অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে সকলের সতর্কতা অবলম্বন করা আবশ্যক, প্রাপ্ত প্রতিটি ইমেলের সত্যতা বিস্তারিতভাবে যাচাই করতে হবে ৷ সাইবার অপরাধীরা ব়্যানসমওয়্যার মাধ্যমে একটি ক্ষতিকারক সফ্টওয়্যার, ব্যক্তি ও সংস্থার সিস্টেমে প্রবেশ করিয়ে লুঠ চালায় ৷ যা ডিজিটাল প্রতারকদের একটি সহজতম পদ্ধতির একটি ৷
সর্বাগ্রে সতর্কতা প্রয়োজন
আজকের ডিজিটাল যুগে, ইন্টারনেটের সর্বব্যাপিতা আপাতদৃষ্টিতে অসহনীয় এবং সর্বব্যাপী ৷ কিন্তু, ওয়েবসাইটগুলি ব্যক্তিগত এবং পেশাদার উভয় ক্ষেত্রে কাজের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ৷ ফলস্বরূপ, সাইবার অপরাধীরা এই নির্ভরতাকে কাজে লাগায়, অনলাইন নিরাপত্তাকে টার্গেট ও তার সঙ্গে আপস করে ৷ এই ধরনের ঝুঁকি প্রশমিত করার জন্য, প্রযুক্তির ব্যবহারকারীদের শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হবে ৷ সেই সঙ্গে সন্দেহজনক লিঙ্ক এবং ওয়েবসাইটগুলি এড়িয়ে চলা ও সতর্কতা অবলম্বন করে ইমেল খোলার আবেদন জানানো হয় সাইবার সেলের তরফে ৷
আরও পড়ুন: