অষ্টাদশ লোকসভার মেয়াদের তিন মাস পেরিয়েছে ৷ সংসদের বিভাগ সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলি (ডিআরএসসি) এখনও গঠন করা হয়নি । কেন্দ্রীয় সরকার এবং বিরোধীদের মধ্যে কয়েক দফা আলোচনা হয়েছে ৷ কিন্তু আলোচনায় এখনও কোনও অগ্রগতি হয়নি ।
এই বিতর্কের মধ্যে সাংসদ তথা বর্ষীয়ান কংগ্রেস নেতা শশী থারুর অর্থ, বিদেশ বিষয়ক এবং প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত মূল কমিটির সভাপতির পদ ছেড়ে দেওয়া নিয়ে অনিচ্ছার জন্য সরকারের নিন্দা করেছেন । থারুর উল্লেখ করেছেন যে 2014 সালে যখন কংগ্রেসের সংখ্যা ছিল মাত্র 44, তখন তিনি বিদেশ বিষয়ক সংসদীয় প্যানেলের সভাপতিত্ব করেছিলেন ৷ সেই সময় কংগ্রেসের আরেক সদস্য বীরাপ্পা মইলি অর্থ সংক্রান্ত প্যানেলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন । কিন্তু এখন কংগ্রেসের 101 জন সাংসদ থাকা সত্ত্বেও বৃহত্তম বিরোধী দলের চাওয়া তিনটি প্যানেলের নিয়ন্ত্রণ ছাড়তে রাজি নয় সরকার ৷
সংসদের অন্যতম প্রধান কাজ হল নির্বাহী বিভাগের তত্ত্বাবধান করা । অন্যান্য বিষয়ের সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রক ও দফতরের অনুদানের (বাজেট) দাবির বিশদ পরীক্ষা প্রয়োজন । সময়ের সীমাবদ্ধতার পরিপ্রেক্ষিতে সংসদের পূর্ণ বা উন্মুক্ত কক্ষে এই অনুষ্ঠানের সম্পূর্ণ ন্যায়বিচার করা প্রায় অসম্ভব ।
এই উদ্বেগ মেটানোর জন্য 1989 সালে তিনটি বিষয় ভিত্তিক স্থায়ী কমিটি গঠন করা হয় ৷ সেগুলি হল - কৃষি কমিটি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমিটি এবং পরিবেশ ও বন কমিটি ৷ এই কমিটিগুলি তৈরি হয়েছিল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকের কাজ খতিয়ে দেখার জন্য৷ সংসদে সরকারের বৃহত্তর দায়িত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্য়েই প্রাথমিকভাবে এই কমিটিগুলি গঠিত হয় ৷
এই কমিটির সাফল্যের ফলে এই ব্যবস্থার প্রসার ঘটে । কেন্দ্রীয় মন্ত্রক ও বিভাগগুলির অধীনে এইভাবে 1993 সালের এপ্রিলে 17টি ডিআরএসসি গঠিত হয়েছিল । 2004 সালের জুলাই এই ব্যবস্থাকে পরিমার্জন করা হয় ৷ তখন ডিআরএসসি কমিটির সংখ্যা 17 থেকে বেড়ে 24 হয় ৷
এই স্থায়ী কমিটিগুলিতে যাতে মন্ত্রীরা ছাড়া লোকসভা ও রাজ্যসভার সদস্যরা থাকেন, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে ৷ এভাবে প্রাথমিকভাবে যখন কমিটির সংখ্যা ছিল 17 ৷ প্রতিটি কমিটিতে 45 জন সদস্য ছিল । কমিটির সংখ্যা 24 হওয়ার পর প্রতিটি কমিটির সদস্য সংখ্যা 31-এ নামিয়ে আনা হয় ।
আরও বিশদে বললে, কমিটিতে লোকসভা ও রাজ্যসভার মোট সদস্য সংখ্যার অনুপাত প্রায় 2:1 ৷ প্রতিটি কমিটিতে লোকসভা থেকে 21 জন এবং রাজ্যসভা থেকে 10 জন সদস্য রয়েছেন ৷ মন্ত্রীরা এই কমিটিগুলিতে নিয়োগের অযোগ্য ৷ তাছাড়া মাঝে মাঝে কিছু রাজনৈতিক দলের সিনিয়র সদস্যরা তাঁদের ব্যস্ততার কারণে বা স্বাস্থ্যের কারণে এই কমিটিগুলি থেকে বেরিয়ে যান । অনেক আবার দলের পক্ষ থেকে দ্বিগুণ দায়িত্ব পালন করেন এবং এই জাতীয় একাধিক কমিটিতে থাকেন ৷
24টি কমিটির মধ্যে 8টি কমিটি রাজ্যসভার সচিবালয় ও 16টি লোকসভা সচিবালয় দ্বারা পরিচালিত হয় । তাই 8টি কমিটির সভাপতিত্ব করেন রাজ্যসভার সদস্যরা এবং 16টি কমিটির সভাপতিত্ব করেন লোকসভার সদস্যরা । এই কমিটির চেয়ারপার্সনদের নিয়োগ করেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান ও লোকসভার অধ্যক্ষ ৷
বিপুল সংখ্যক দলের কারণে সদস্য মনোনীত করা এবং কমিটির সভাপতি পদ বরাদ্দ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া জটিল হয়ে পড়ে । এই লক্ষ্যে সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে ঘরোয়া আলোচনা করেন । সমস্ত রাজনৈতিক দল, বিশেষ করে প্রধানগুলি সংসদে তাদের শক্তির অনুপাতে এই কমিটিগুলিতে প্রতিনিধিত্ব করে ।
কমিটিতে কোন রাজনৈতিক দলের কতজন সদস্য় থাকবেন, এটা ঠিক হয়ে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলের নেতাদের অনুরোধ করা হয় তাঁদের সদস্যদের নাম প্রস্তাব করার জন্য, যাতে সেই অনুযায়ী প্রতিটি কমিটিতে সদস্য়দের অন্তর্ভুক্ত করা যায় । লোকসভা নির্বাচনের পরে পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে তিন মাস বা তারও বেশি সময় নেয় ।
আগেই বলা হয়েছে যে এই কমিটিগুলির প্রধান কাজ হল সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক বা দফতরের অনুদানের দাবিগুলি বিবেচনা করা এবং লোকসভায় আলোচনার জন্য সেটা নিয়ে রিপোর্ট পেশ করা । তারা সেই বিলগুলি পরীক্ষা করে রিপোর্ট তৈরি করে, যেগুলি সংসদের উভয় কক্ষে উপস্থাপনের পর সংশ্লিষ্ট প্রিসাইডিং অফিসার তাদের কাছে রেফার করেন ।
কমিটিগুলিকে মন্ত্রক বা দফতরের বার্ষিক রিপোর্ট বিবেচনা করার এবং তার উপর প্রতিবেদন তৈরি করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ৷ আর সংসদে উপস্থাপিত জাতীয় দীর্ঘমেয়াদী নীতি সংক্রান্ত নথি যদি কমিটির কাছে পাঠানো হয়, তাহলে তা খতিয়ে দেখে তার উপর রিপোর্ট তৈরি করার এক্তিয়ারও রয়েছে ৷
নিয়ম অনুযায়ী কমিটির কার্যাবলীর উপর নিম্নলিখিত দু’টি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে, যেমন কমিটি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক বা দফতরের দৈনন্দিন কাজের বিষয় বিবেচনা করবে না ৷ এবং কমিটি সাধারণত অন্য কোনও সংসদীয় কমিটির আওতার মধ্যে বিষয়গুলো বিবেচনা করবে না ।
যদিও ডিআরএসসি-র রিপোর্টগুলির শুধুমাত্র "প্রেরণামূলক মূল্য আছে এবং কমিটি কর্তৃক প্রদত্ত পরামর্শ হিসাবে বিবেচিত হবে" । অনুদান, বিল ও অন্যান্য বিষয়ের দাবি সংক্রান্ত রিপোর্টের ক্ষেত্রে, মন্ত্রক বা সংশ্লিষ্ট দফতরকে এতে থাকা সুপারিশ ও উপসংহারের উপর পদক্ষেপ করতে হবে এবং তার উপর গৃহীত পদক্ষেপের জবাব দিতে হবে ।
এইভাবে মন্ত্রক বা দফতর থেকে প্রাপ্ত অ্যাকশন টেকেন নোটগুলি কমিটিগুলি পরীক্ষা করে এবং তার উপর গৃহীত পদক্ষেপগুলি সংসদে উপস্থাপন করা হয় । যে বিলগুলি নিয়ে কমিটি রিপোর্ট দেয়, সেগুলি নিয়ে ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে সংসদে আলোচনা হয় ৷
(এই নিবন্ধে প্রকাশিত মতামতগুলি লেখকের । এখানে প্রকাশিত তথ্য এবং মতামত ইটিভি ভারত-এর মতামতকে প্রতিফলিত করে না ৷)