নয়াদিল্লি ও ইসলামাবাদ, 2 এপ্রিল: এবার দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কটা আগের থেকে ভালো হবে, আশা করছে পাকিস্তান ৷ ভারতে প্রায় দেড় মাস ধরে নির্বাচন পর্ব ৷ তা মিটলে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সুসম্পর্ক গড়ে উঠবে ৷ এমনটাই জানিয়েছেন পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খোয়াজা আসিফ ৷
হঠাৎ তাঁর এহেন মন্তব্যের কারণ অবশ্য বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্করের হুঁশিয়ারি ৷ মার্চের শেষে সিঙ্গাপুর সফরে গিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, "একজন যেভাবে শিল্প স্থাপন করে, পাকিস্তান জঙ্গিবাদী কার্যকলাপকে সেই পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছে ৷ তবে ভারত এখন আর এইসব সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ সহ্য করবে না ৷" এর ক'দিন পরই পাকিস্তানের মন্ত্রী ভারতের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক গড়ার কথা বললেন ৷
সোমবার ইসলামাবাদের পার্লামেন্ট হাউজের বাইরে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী আসিফ সাংবাদিকদের বলেন, "ভারতে নির্বাচন শেষ হবে ৷ তার পরই ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক আরও ভালো হবে ৷ দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নেপথ্যে তাদের নিজের নিজের ইতিহাস আছে ৷"
এদিকে স্বাধীনতার পর থেকে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্ক ক্রমশ খারাপের দিকেই গিয়েছে ৷ সে কাশ্মীর হোক বা জঙ্গি সমস্যা ৷ সাম্প্রতিক অতীতে 2019 সালের 5 অগস্ট সংবিধানের 370 ধারার অবলুপ্তি ঘটিয়ে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করেছে দ্বিতীয় মোদি সরকার ৷ জম্মু-কাশ্মীর ভেঙে দু'টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল তৈরি হয়- জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ ৷ ভারতের এই পদক্ষেপে তৎকালীন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন ৷ পাকিস্তান জানিয়েছিল, ভারতের এই সিদ্ধান্তের ফলে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কথা বলার জায়গাটুকুও রইল না ৷ আর দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সম্পর্কের উন্নতির দায় ভারতের ৷ তাই আলোচনায় বসতে গেলে আগে ভারতকে 370 ধারা বাতিলের সিদ্ধান্ত খারিজ করে পুরনো অবস্থায় ফিরতে হবে ৷
নয়াদিল্লি এই প্রস্তাব খারিজ করে দেয় ৷ ভারত সরকার সাফ জানিয়ে দিয়েছিল, কেন্দ্রশাসিত জম্মু ও কাশ্মীরে সামাজিক-অর্থনৈতিক উন্নতি এবং সুপ্রশাসনের জন্যে ভারত এই সাংবিধানিক পদক্ষেপ করেছে ৷ আর যাইহোক না কেন, জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ অখণ্ড ভারতের অংশ ৷ এটা ভারতের সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যাপার ৷ ভারতও প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক হোক, তা চায় ৷ সেটা যাতে হয়, তার দায়িত্ব পাকিস্তানের ৷ তবে তার আগে জঙ্গিবাদী, প্রতিহিংসামূলক কার্যকলাপ থেকে বিরত হতে হবে পাকিস্তানকে ৷
ভারত ছাড়া পাকিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সীমান্ত রয়েছে চিন, ইরান, আফগানিস্তান ৷ চিনের সঙ্গে কোনও গণ্ডগোলের কথা অবশ্য প্রকাশ্যে আসেনি ৷ তবে ইরান এবং আফগানিস্তানও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সীমান্ত এলাকায় জঙ্গিবাদী কার্যকলাপের অভিযোগ তুলেছে ৷
পাকিস্তানে জিও নিউজে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আফগানিস্তানের বিষয়ে মন্ত্রী খোয়াজা আসিফ সাংবাদিকদের বলেন, উচ্চস্তরীয় প্রতিনিধিদের নিয়ে তিনি নিজে আফগানিস্তানে গিয়েছিলেন ৷ দেশের তালিবান প্রশাসনকে জঙ্গি হামলা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপ করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন ৷ তবে এর সমাধানে কাবুল যে রাস্তা বাতলেছে, তা বাস্তবে সম্ভব নয় ৷
সীমান্তে নাশকতামূলক কাজকর্মের জন্য পাকিস্তানের মন্ত্রী আফগানিস্তানকেই দায়ী করেছেন ৷ তিনি বলেন, "দিনে দিনে প্রতিবেশী দেশটির সঙ্গে আমাদের সমঝোতার উপায়গুলি আরও কমে আসছে ৷ তার কারণ পাকিস্তানের প্রতি আফগানিস্তানের অন্তর্বর্তী সরকারের আচরণ ৷" মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, পাকিস্তান সব সময় আফগানিস্তানের পাশে থেকেছে ৷ তাদের জন্য স্বার্থত্যাগ করেছে ৷ এমনকী তাদের সঙ্গে যুদ্ধ লড়েছে ৷ তিনি জোর দিয়ে জানান, অন্য সীমান্তগুলির মতো পাক-আফগান সীমান্তেও আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয় ৷
আরও পড়ুন: