ঢাকা, 16 জুলাই: সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণ পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে উত্তাল বাংলাদেশ ৷ মঙ্গলবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন তিন শিক্ষার্থী-সহ অন্তত ছ’জন ৷ আহতের সংখ্যা 100 ছাড়িয়েছে । অভিযোগ, আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের উপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠনের সদস্যরাও হামলা চালিয়েছে ৷
ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভে পরবর্তী আদেশ না-আসা পর্যন্ত স্কুল ও কলেজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার । শিক্ষা মন্ত্রকের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, ‘‘মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদফতরের অধীনস্থ উচ্চ বিদ্যালয়, কলেজ, মাদ্রাসা (ইসলামিক সেমিনারি) এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে পরবর্তী নির্দেশ না-দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে ।’’
মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকা এবং চট্টগ্রামে আরও দু’জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ এর আগে ঢাকা, চট্টগ্রাম এবং উত্তর-পশ্চিম রংপুরে চারজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল । সেদেশের একাধিক সংবাদমাধ্যমের দাবি, মঙ্গলবারের সংঘর্ষে প্রায় 400 জন আহত হয়েছেন ৷ কোটা পদ্ধতির সংস্কারের দাবিতে বিক্ষোভ এক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর ইতিমধ্যে বাংলাদেশের প্রধান শহরগুলিতে ছড়িয়ে পড়েছে । সারাদেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্যাম্পাসে পুলিশ বিক্ষোভ সামাল দিতে না-পারায় চারটি প্রধান শহরে আধা-সামরিক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সৈন্যদের নামানো হয়েছে ।
সে দেশের বর্তমান কোটা পদ্ধতি সংস্কার এবং মেধার ভিত্তিতে আসন পূরণের দাবি, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য বিক্ষোভে নেতৃত্ব দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা । বিক্ষোভকারীরা জানান, ঢাকা ও আরও দু’টি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন ৷ তারমধ্যেই আওয়ামী লিগের ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা লাঠি, ঢিল, ছুরি নিয়ে হামলা চালান ।
বর্তমানে বাংলাদেশে 1971 সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রবীণদের বংশধরদের জন্য 30 শতাংশ, প্রশাসনিক জেলাগুলির জন্য 10 শতাংশ, মহিলাদের জন্য 10 শতাংশ, জাতিগত সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলির জন্য পাঁচ শতাংশ এবং শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধীদের জন্য এক শতাংশ চাকরি সংরক্ষিত রয়েছে । প্রতি বছর প্রায় চার লক্ষ স্নাতকদের জন্য প্রায় তিন হাজার সরকারি চাকরি খোলা হয় । 2018 সালে ব্যাপক ছাত্র বিক্ষোভের পরে একটি সরকারী বিজ্ঞপ্তি জারি করে কোটাগুলি বন্ধ করা হয়েছিল ৷ গত মাসে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার আদালতে ফের তা চালুর আর্জি জানান ৷ তাতে সায় দিয়ে প্রবীণদের পরিবারের জন্য কোটাগুলি পুনঃস্থাপনের আদেশ দেয় হাই কোর্ট ৷ এর পরেই ফের বিক্ষোভ শুরু হয় ৷
ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছে হাসিনার সরকার ৷ চার সপ্তাহ পর শুনানির দিন ধার্য করেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বেঞ্চ ৷ ততদিন পর্যন্ত হাইকোর্টের নির্দেশ স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত ৷ আন্দোলনকারী ছাত্র-ছাত্রীদের ফের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে যাওয়ার আর্জিও জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা ৷
জানুয়ারিতে টানা চতুর্থ মেয়াদে জয়ী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের এই বিক্ষোভ অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ৷ শেখ হাসিনা মঙ্গলবার বলেন, ‘‘একাত্তরে আত্মত্যাগের জন্য বীর সেনাদের সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়া উচিত ৷ তাঁরা নিজেদের জীবনের স্বপ্ন বিসর্জন দিয়ে, তাঁদের পরিবার, পিতামাতা এবং সবকিছু রেখে যুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন । যাঁরা 1971 সালে পাকিস্তানি সৈন্যদের পাশে থেকে বাংলাদেশ সৃষ্টির বিরোধিতা করেছিল, যাঁরা রাজাকার নামে পরিচিত, তাঁদের পরিবর্তে যুদ্ধের প্রবীণদের সুবিধা পেতে হবে ।’’