হায়দরাবাদ: 2022 সালে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ভারতে সে সময় সাড়ে 6 কোটিরও বেশি মানুষ হয় কানে কম শুনতেন নতুবা একেবারেই শুনতে পেতেন না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 2050 সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী প্রায় 70 কোটি মানুষ বধিরতায় ভুগতে পারে ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বধিরতা বা শ্রবণশক্তি হ্রাসের অনেক ক্ষেত্রে সময়মতো চিকিৎসা নিলে সমস্যা নির্ণয় করা বা পরিচালনা করা সম্ভব । কিন্তু সমস্যাটির লক্ষণ না-বোঝা, সমস্যা উপেক্ষা করা এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু না-করার কারণে অনেকেই সম্পূর্ণ বা আংশিক শ্রবণশক্তি হ্রাসের শিকার হন । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর 3 মার্চ বিশ্ব শ্রবণ দিবসের আয়োজন করে যাতে সাধারণ জনগণ এই সমস্যাটিকে হালকাভাবে না নেয় এবং সময়মতো চিকিৎসা শুরু করেন ৷
শ্রবণশক্তি হ্রাস কী (What is hearing loss)?
শ্রবণশক্তি হারানো মানে শুধু বধিরতা নয় । শ্রবণশক্তি হারানো মানে কোনও রোগ, সমস্যা, অবস্থা বা পরিস্থিতির কারণে একজন ব্যক্তির শ্রবণ ক্ষমতা সম্পূর্ণ বা আংশিক হারানো । এটি যে কোনও বয়সে ঘটতে পারে এবং এর জন্য অনেক কারণ দায়ী হতে পারে ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী শ্রবণশক্তি হারানোর ঘটনা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ হল উচ্চস্বরে গান শোনা বা জোর কোনও শব্দের সংস্পর্শে আসা । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একবার বধিরতার সমস্যা দেখা দিলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিৎসা সম্ভব হয় না । শ্রবণশক্তি হ্রাসের ক্ষেত্রে চিকিৎসা বা থেরাপি সহায়ক হতে পারে । অনেক ক্ষেত্রে, শ্রবণযন্ত্র ও অন্যান্য কিছু কৌশলের সাহায্যে সমস্যাটি সাহায্য পরিচালনা করা যেতে পারে । কিছু সমস্যায়, অস্ত্রোপচারের সাহায্যে শ্রবণ ক্ষমতাও উন্নত করা যেতে পারে ।
উদ্দেশ্য এবং গুরুত্ব:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সারা বিশ্বে শ্রবণশক্তি হারানো মানুষের সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে । বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুসারে, বিভিন্ন কারণে কানজনিত রোগ এবং সমস্যা বিশেষ করে শ্রবণজনিত সমস্যায় আক্রান্তদের প্রায় 80% চিকিৎসা বিশ্বব্যাপী পূরণ হয় না । সাধারণত উপসর্গ উপেক্ষা করা, চিকিৎসায় বিলম্ব, কীভাবে এবং কোথায় চিকিৎসা পাওয়া যায় বা থেরাপির জন্য কেন্দ্র সম্পর্কিত তথ্যের অভাবকে প্রধানত দায়ী বলে মনে করা হয় । কিন্তু এর পাশাপাশি বধিরতা বা শ্রবণশক্তি হ্রাস নিয়ে মানুষের মধ্যে ভুল ধারণা, বিভ্রান্তি এবং ভুল মানসিকতার কারণেও প্রথমে সমস্যাটি মেনে নিয়ে তারপর চিকিৎসায় দেরি হয় । বিশ্ব শ্রবণ দিবসের আয়োজনের মূল উদ্দেশ্যগুলির মধ্যে রয়েছে সম্প্রদায় এবং স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে কান ও শ্রবণ সমস্যা সম্পর্কিত মানুষের সাধারণ ভুল ধারণা বা মানসিকতা পরিবর্তন করার চেষ্টা করা । এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচি যেমন ক্যাম্প, সেমিনার ও র্যালির মাধ্যমে বধিরতা বা শ্রবণশক্তি হ্রাস প্রতিরোধ চিকিৎসা ও পরিচর্যা সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় তথ্য সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দিতে জনগণকে উৎসাহিত করা হয় ।
ইতিহাস:
এটি লক্ষণীয় যে বিশ্বব্যাপী শ্রবণ স্বাস্থ্য সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা 2007 সালে আনুষ্ঠানিকভাবে 'আন্তর্জাতিক কানের যত্ন দিবস' উদযাপনের ঘোষণা করে । এরপর থেকে প্রতি বছর 3 মার্চ সারা বিশ্বে এই দিবসটি পালিত হতে থাকে। পরবর্তীতে 2016 সালে এই অনুষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বিশ্ব শ্রবণ দিবস। কিন্তু এর ফলে এই অনুষ্ঠান উদযাপনের ঐতিহ্যে কোনও পরিবর্তন আসেনি ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি বছর একটি নতুন প্রতিপাদ্য নিয়ে 'বিশ্ব শ্রবণ দিবস' আয়োজন করে । এ বছর অনুষ্ঠানটি 'চেঞ্জিং মাইন্ডসেট', 'আসুন কান ও শ্রবণ যত্নকে সবার জন্য বাস্তবে পরিণত করি !' প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে ।
আরও পড়ুন: