হায়দরাবাদ: প্রতি বছর বিশ্বব্যাপী প্রায় 3-6% শিশু গুরুতর জন্মগত ত্রুটি বা অসঙ্গতি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে । এই জন্মগত ত্রুটিগুলি তাদের শরীরের গঠনের পরিবর্তনের কারণে হতে পারে যেমন অঙ্গগুলির আকৃতি, অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক অঙ্গগুলির কম বা বেশি বিকাশ, রোগ এবং আরও অনেক কারণে। যা কখনও কখনও শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়াতে পারে ৷ তাদের রোগের ঝুঁকিতে পরিণত করতে পারে এবং কখনও কখনও দীর্ঘমেয়াদী অক্ষমতার কারণ হতে পারে ।
চিকিৎসকরা বলছেন, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত চেক-আপের পাশাপাশি অভিভাবকদের কিছু বিষয় মাথায় রাখলে এবং আরও সতর্কতা অবলম্বন করলে অনেক ধরনের জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ করা সম্ভব । এই সতর্কতা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার এবং শিশুদের জন্মগত ত্রুটি ও তাদের কারণগুলির প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার লক্ষ্যে প্রতি বছর 3 মার্চ বিশ্ব জন্ম ত্রুটি দিবস পালিত হয় (World Birth Defects Day)।
কারণ ও প্রভাব:
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর জন্মগত ত্রুটির কারণে বিশ্বব্যাপী 3 লক্ষেরও বেশি নবজাতকের মৃত্যু হয় । যার মধ্যে আনুমানিক 90,000 মৃত্যু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ঘটে । এর জন্য দায়ী এক বা একাধিক জেনেটিক রোগ বা সমস্যা, গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ বা মায়ের মধ্যে সংক্রমণ অথবা রোগ, পুষ্টির অভাব এবং অনেক সময় পরিবেশগত কারণ বা দুর্ঘটনাও জন্মগত ত্রুটির কারণ হতে পারে । নবজাতকের মৃত্যু ছাড়াও এই ধরনের শিশুদের প্রায়ই আজীবন বা দীর্ঘমেয়াদী অসুস্থতা ও অক্ষমতার পাশাপাশি দুর্বল স্বাস্থ্যও দেখা যায় । জন্মগত ত্রুটি নবজাতকদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় এমন সমস্যাগুলির মধ্যে রয়েছে হৃৎপিণ্ডের ত্রুটি, নিউরাল টিউব ত্রুটি, ডাউন সিনড্রোম, হাড়, জয়েন্ট এবং পেশী সম্পর্কিত সমস্যা, মস্তিষ্ক বা এর বিকাশ সম্পর্কিত সমস্যা, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, মূত্রাশয় বা যৌনাঙ্গ অন্তর্ভুক্ত । এছাড়া ফাটা ঠোঁট ও তালু, ক্লাবফুট এবং হার্নিয়াও জন্মগত ত্রুটি । তবে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাদের চিকিৎসা সম্ভব ।
ইতিহাস এবং উদ্দেশ্য:
নবজাতকের জন্মগত ত্রুটি এবং এসব সমস্যা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলির প্রতি জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ এবং এ লক্ষ্যে প্রয়াস চালানোর জন্য 2010 সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য পরিষদে জন্মগত ত্রুটি সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবনা পেশ করা হয় । এরপর 2011-2012 সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক অফিসে CDC-USA-এর সহযোগিতায় জন্মগত ত্রুটি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে জাতীয় পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য একটি মহড়া শুরু হয় । যা প্রাথমিকভাবে নয়টি দেশ সমর্থন করেছিল । পরে 2015 সালে, 3 মার্চ 12টি সংস্থার সহযোগিতায় প্রথম বিশ্ব জন্ম ত্রুটি দিবস পালিত হয় ।
বিশ্ব জন্মগত ত্রুটি দিবসের আয়োজনের উদ্দেশ্য শুধুমাত্র জন্মগত ত্রুটি এবং অসঙ্গতি সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির অন্তর্ভুক্ত নয় । এর অন্যান্য বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য নিম্নরূপ ।
মায়ের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সম্পর্কিত তথ্যের সহজলভ্যতা ও প্রাপ্যতার জন্য প্রচেষ্টা করা ।
গর্ভাবস্থায় মায়ের জন্য কোন বিষয়গুলি মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ, যেমন গর্ভাবস্থায় কোন অভ্যাস, কাজ বা খাদ্যাভ্যাস শিশুর ক্ষতি করতে পারে এবং কোন খাদ্যাভ্যাস এবং অভ্যাসগুলি শিশুর জন্য উপকারী হতে পারে সে সম্পর্কে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া ।
জন্মের পর শিশুর প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা, রক্ত পরীক্ষা এবং প্রয়োজনীয় টিকা দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জনগণের মধ্যে তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি লক্ষ রাখা প্রজোজন ৷
আরও পড়ুন: