কলকাতা: গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড সমস্যা মা এবং সন্তান উভয়ের জন্যই মারাত্মক সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে ৷ এমনকী এই সমস্যার কারণে গর্ভপাতের ঝুঁকিও থােকে যায়। তবে চিকিৎসকরা পরামর্শ দেন, সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারা অবলম্বন করে এর প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন ৷ ফলে নিজের ও শিশুর যত্ন নিতে পারেন ৷
বেঙ্গালুরুর স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ জয়ন্তী কে ওয়াদেকর বলেন, "থাইরয়েড সমস্যা গর্ভবতী মহিলাদের জন্য বিশেষ উদ্বেগের বিষয় হতে পারে । থাইরয়েড গ্রন্থি দ্বারা নিঃসৃত হরমোনগুলি পুরো শরীরের কার্যকারিতা নিয়ন্ত্রণ করে। এটা না হলে শুধু মায়ের স্বাস্থ্যই নয়, গর্ভে থাকা ভ্রূণের সার্বিক বিকাশও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ও প্রসবের সময় জটিলতার আশঙ্কাও বেড়ে যায় ।"
থাইরয়েড সমস্যা এবং গর্ভাবস্থা: তিনি ব্যাখ্যা করেন, গর্ভাবস্থায় মহিলারা হাইপারথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের অতিরিক্ত উৎপাদন) এবং হাইপোথাইরয়েডিজম (থাইরয়েড হরমোনের কম উৎপাদন) উভয়ের ঝুঁকিতে থাকতে পারে । এই উভয় অবস্থার জন্য সময়মত নির্ণয় এবং চিকিৎসা প্রয়োজন কারণ উভয়ই গুরুতর পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে । যার কয়েকটি নিম্নরূপ ।
হাইপারথাইরয়েডিজমের সম্ভাব্য ঝুঁকি (Possible risk of hyperthyroidism):
গর্ভপাতের ঝুঁকি: গর্ভাবস্থার প্রথম তিনমাসে হাইপারথাইরয়েডিজম ধরা না পড়লে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়তে পারে ।
প্রি-এক্লাম্পসিয়া: এটি প্রধানত উচ্চ রক্তচাপ এবং প্রস্রাবে প্রোটিনের পরিমাণ বৃদ্ধি ও অন্যান্য কিছু কারণে হতে পারে । যা মা ও শিশু উভয়ের জন্যই বিপজ্জনক ।
অনুন্নত ভ্রূণ: হাইপারথাইরয়েডিজম ভ্রূণের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে, যার ফলে শিশুর জন্মের ওজন কম হতে পারে ।
গর্ভধারণে অসুবিধা: থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা কম হলে গর্ভধারণে সমস্যা হতে পারে । যেসব শিশুর পুষ্টির অভাব থাকে তাদের হাইপোথাইরয়েডিজম শিশুর মস্তিষ্ক এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে ।
সময়ের আগে জন্ম: অকাল প্রসবের ঝুঁকি বাড়তে পারে ৷ যা নবজাতক শিশুর স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব ফেলতে পারে ।
সমস্যা ব্যবস্থাপনা এবং প্রতিরোধ: ডাঃ জয়ন্তী কে ওয়াদেকর বলেন, "কিছু জিনিসের যত্ন নেওয়া এবং সতর্কতা থাইরয়েড পরিচালনায় সাহায্য করতে পারে ৷ এছাড়াও এর গুরুতর প্রভাব থেকে মুক্তি দিতে পারে । যার কয়েকটি নিম্নরূপ ।"
সঠিক সময়ে পরীক্ষা করা প্রয়োজন: নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং TSH রক্ত পরীক্ষার (থাইরয়েড উদ্দীপক হরমোন) মাধ্যমে গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করা গুরুত্বপূর্ণ । যেসব মহিলার এই সমস্যাটি ইতিমধ্যেই রয়েছে তাদের গর্ভধারণের চেষ্টা করার আগে এবং গর্ভধারণের পরে তাদের ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিত । যাতে এই সময়ে সঠিক ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা যায় ।
প্রাথমিক লক্ষণ সনাক্তকরণ: থাইরয়েডের সমস্যায় সাধারণত ওজন বৃদ্ধি বা হ্রাস, ক্রমাগত ক্লান্তি, হৃদস্পন্দনে অস্বাভাবিকতা, খুব ঠান্ডা লাগা, অতিরিক্ত ঘাম, নার্ভাসনেস ও দুশ্চিন্তা, ঘুমের অভাব, ত্বক ও চুলের শুষ্কতা এবং মাসিক অনিয়মিত হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয় ৷ মেয়েদের মধ্যে এই লক্ষণগুলির উপস্থিতি, শুধুমাত্র গর্ভাবস্থায় নয় কিন্তু যে কোনও বয়সেই উপেক্ষা করা উচিত নয় ৷ অবিলম্বে একজন ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত ৷
চিকিৎসা এবং ওষুধ: থাইরয়েড রোগের সঠিক নির্ণয়ের জন্য সতর্কতা অবলম্বন করার পাশাপাশি, ডাক্তার দ্বারা নির্ধারিত ওষুধগুলি গ্রহণ করা এবং সেগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত সতর্কতাগুলি যত্ন নেওয়াও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । উদাহরণস্বরূপ যদি একজন মহিলার ইতিমধ্যেই থাইরয়েডের সমস্যা থাকে, তবে তার নিজের স্বাভাবিক ওষুধগুলি চালিয়ে যাওয়া বা বন্ধ করা উচিত নয় । এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যে ওষুধ খাওয়ার আগে ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে ওষুধ খাওয়া প্রয়োজন ৷
গর্ভাবস্থায় খাদ্যাভ্যাসের প্রতি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন ৷ কারণ এটি শিশুর সঠিক বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ । এছাড়া স্বাস্থ্যকর ও পুষ্টিকর খাবারও শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে । এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে এই সময়কালে মা আয়োডিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন দুগ্ধজাত খাবার, ডিম, মাছ ইত্যাদি খান। উপরন্তু, পর্যাপ্ত পরিমাণে ফলমূল, শাকসবজি এবং প্রোটিন গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ ।
শুধু তাই নয়, কখনও কখনও মানসিক চাপের কারণে হরমোন বৃদ্ধি বা হ্রাসও হতে পারে । তাই স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টও খুব গুরুত্বপূর্ণ । মানসিক চাপ এড়াতে এবং শরীরকে সক্রিয় রাখতে গর্ভবতী মায়ের উচিত যোগব্যায়াম, ধ্যান ও নিয়মিত ব্যায়াম করা ।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: এই প্রতিবেদনে উল্লেখিত তথ্য নির্দিষ্ট গবেষণা থেকে প্রাপ্ত এবং এর মতামতও ওই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত গবেষক-বিশেষজ্ঞের ব্যক্তিগত ৷ শুধুমাত্র ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই এই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে ৷ এখানে উল্লেখিত কোনও পরামর্শ অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন ৷ যদি আগে থেকেই কোনও স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে ৷