ETV Bharat / health

ঘনঘন জ্বর-কাশি থেকেও হতে পারে যক্ষা রোগ, সুস্থ থাকার পথ দেখালেন বিশিষ্ট চিকিৎসক - যক্ষা রোগের লক্ষণ

World Tuberculosis (TB) Day: করোনার জ্বর-কাশি ও টিবি বা যক্ষা রোগের জ্বর-কাশির লক্ষণ প্রায় এক ৷ বাড়িতে শুধু প্রবীণ ব্যক্তির নয়, যক্ষা রোগ হতে পারে আপনার শিশুরও ৷ বিশ্ব যক্ষা দিবসে নিজে এবং নিজের পরিবারকে বাঁচাবেন কীভাবে, পরামর্শ দিলেন আর.এন টেগোর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ তথা চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস ৷ শুনলেন ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷

World Tuberculosis (TB) Day
যক্ষাকে ভয় নয়, জয় করুন
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 24, 2024, 12:58 PM IST

হায়দরাবাদ: 25-এর নরেন বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বর ও কাশিতে ভুগছেন ৷ ভাইরাল ফিভার ভেবে ওষুধ খেলেও কোনও লাভ পাননি ৷ সময়ের সঙ্গে অবস্থার অবনতি হলে নেন চিকিৎসকের পরামর্শ ৷ জানতে পারেন তিনি যক্ষা রোগে আক্রান্ত ৷ ধীরে ধীরে তাঁর শরীরে যক্ষা আঁকড়ে ধরছে, তা বুঝতেই চলে যায় অনেকটা সময় ৷ ফল মৃত্য়ু ৷ উপরের এই ঘটনা গল্প হলেও সত্যি হতে পারে ৷ তাই সচেতন হওয়া দরকার শুরু থেকেই ৷ সাধারণ জ্বর আর যক্ষার জ্বর-কাশির মধ্যে যে পার্থক্য করা দরকার তা বুঝতে হবে ৷ লক্ষণ চিনতে হবে ৷

যক্ষা ছোঁয়াচে রোগ ৷ এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ৷ কিন্তু অতীতের মতো মানুষের মনে এই রোগ নিয়ে যে বদ্ধ ধারণা ছিল, তা কি নির্মূল হয়েছে? ওয়ার্ল্ড টিউবারকুলোসিস ডে বা বিশ্ব যক্ষা দিবসে মানুষের মধ্যে সচেতনার আলো ছড়িয়ে দিতে আমরা কথা বলেছিলাম আর.এন ট্যাগোর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের সঙ্গে ৷

TB
সঠিক সময়ে নিন চিকিৎসকের পরামর্শ

তিনি বলেন, "একটা কথা শুরুতেই বলতে হয় সচেতনতার বৃদ্ধি হয়েছে ৷ মানুষ এখন চিকিৎসা করাতে যায় বাড়ির মধ্যে না থেকে ৷ এখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে চিকিৎসা কেন্দ্রে বিনামূল্যে ওষুধ পাচ্ছে ৷ এখন মানুষ ভয়টা না পেয়ে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে ৷ কিন্তু ভারতবর্ষের এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে শিক্ষার আলো মানুষকে জাগরিত করেনি ৷ তখন তাঁদের বোঝাতে হয় ৷"

তিনি বলেন, "যক্ষা রোগে আক্রান্ত হলে কিছুদিন আইসোলেশনে থাকতে হয় ৷ ওষুধ শুরু করার দু থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ছোঁয়াচে বিষয়টা আর থাকে না ৷ চিকিৎসা অনেকদিন চললেও অর্থাৎ ছয়মাস চললেও রোগটা ছড়িয়ে যাওয়ার যে ভয় থাকে, সেটা আর থাকে না ৷ তাছাড়া এখন সব জায়গায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে ওষুধের জোগানের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত করা হয়েছে ৷ তবুও তা বলে কী আমরা সফল হতে পেরেছি? তা কিন্তু নয় ৷ 2018 সালের হিসাবে প্রতি এক লাখে 133 জন টিবি রোগী রয়েছেন ৷ সেটা কমছে ধীরে ধীরে ৷ সরকারের প্রচেষ্টা ভারত তথা রাজ্যকে টিবি মুক্ত করা 2025 সালের মধ্যে ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে 2030 ৷ তবে চিকিৎসা পরিষেবা ঠিক মতো চলতে থাকলে এই রোগ নির্মূল হবে ৷ তবে এই রোগ নিয়ে যে কুসস্কার রয়েছে, মানুষকে এক ঘরে করে দেওয়ার প্রবণতা কমেছে কিন্তু পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি ৷"

এই রোগের লক্ষণ কী? কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ৷ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানান, এটা হাঁচি-কাশি থেকে ছড়ায় ৷ যে টিবি রোগ বহন করছে তাঁর কাছে যখন কেউ পৌঁছাচ্ছে টিবি রোগীর কাশির জলকণার মধ্য দিয়ে এই জীবাণু ছড়ায় ৷ মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী ৷ বারবার কাশি, বারবার জ্বর, সন্ধ্যে হলে জ্বর বেশি আসা, বুকে ব্যথা, দুবর্লতা, ওজন কমে যাওয়া প্রাথমিক লক্ষণ ৷ এই রোগের জীবাণু খারাপ দিকে গেলে বা ছড়িয়ে গেলে, কাশির সঙ্গে রক্ত আসতে পারে, শ্বাসকষ্ট প্রবল ভাবে হতে পারে, ফুসফুস-হার্ট-পেটে জল জমতে পারে ৷

চিকিৎসক আরও জানান, এই জীবাণু থেকে তাঁদেরই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল। অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে 8 বছরের শিশু থেকে 80 বছরের প্রবীণ ৷ এছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের এই জীবাণুতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। তবে যক্ষ্মার জীবাণু যে কেবল ফুসফুসকে আক্রান্ত করে তা নয়, এটি মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে, ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি, হাড়-সহ দেহের যে কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সংক্রমণ হতে পারে। তবে ফুসফুসে যক্ষ্মা সংক্রমনের হার সবচেয়ে বেশি হওয়ায় সরকারি সচেতনতামূলক প্রচারে সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় ৷

তা হল টিবি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে কী কী মেনে চলা উচিত? চিকিৎসক অরিন্দম বলেন, "ওষুধ চলার পাশাপাশি খাবারেও পরিবর্তন আনা উচিত ৷ যে সব খাবারের পুষ্টিগত মান ভালো দৈনন্দিন জীবনে তার ব্যবহার বাড়ানো উচিত ৷ হাসপাতালে চিকিৎসা চললে আলাদা বিষয় ৷ তবে যাঁদের বাড়িতে চিকিৎসা চলেছে তা যেন সম্পূর্ণ কোর্স মেনে হয় ৷ কোনও রকম সাইডএফেক্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ৷ রোগী রোগ মুক্তি হয়েছেন কি না, তা দেখার জন্য এক্স-রে করানো বা থুথু পরীক্ষা করানো উচিত ৷"

তিনি আরও বলেন, "মাথায় রাখতে হবে, ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য কোনও ওষুধ হয় না ৷ এটা ভুল ধারণা ৷ তার বদলে শাক-সবজি, ফল-মূল খাওয়া উচিত ৷ ভিটামিন মানসিকভাবে শক্তি বাড়িয়, শারীরিক ভাবে নয় ৷ আর এই রোগ একবার শরীর থেকে নির্মূল হলেও তা ক্যানসার রোগের মতো পুনরায় আসতে পারে ৷ হয়তো রোগী ঠিকমতো ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করেননি বা টিবি রোগের জীবাণু শরীরে ঘাপটি মেরে বসে ছিল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলেই সেই সংক্রমণ আবারও জেগে উঠতে পারে ৷

এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হল করোনার যে লক্ষণ ও টিবির লক্ষণ তো প্রায় এক? একজন ব্যক্তি বুঝবেন কীভাবে? চিকিৎক অরিন্দম বলেন, "সাধারণত ভাইরাল ফিভার সাতদিনের বেশি থাকে না ৷ 10 দিনের মধ্যে মোটামুটি ঠিক হয়ে যায়৷ টিবির ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে এগোবে ৷ জ্বর বারবার আসবে ৷ বুকে ব্যাথা হবে ৷ টানা কাশি ভাইরাল ফিভারে থাকলেও টিবির ক্ষেত্রে সেই কাশি যাবে না ৷ সাত দিন বা 10 দিনের বেশি জ্বর থাকলে টিবির কথা মাথায় রাখতে হবে ৷ আর চিকিৎসা শুরু হলে প্রতি মাসে লিভার ফাংশন টেস্ট করানো উচিত ৷ কারণ এই ওষুধ অনেক সময় ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় ৷ টিবির ওষুধ শুরু হলে চোখ ঠিক থাকছে কি না, লিভার ঠিক থাকছে কি না, নিউরোপ্যাথির মতো জটিলতা যাতে না হয়, তার খেয়াল রাখা উচিত ৷"

অনেক সময় টিবি বা এইচআইভির মতো রোগ একসঙ্গে হতে পারে ৷ উন্নত হয়নি এমন দেশে এটা সম্ভব, ভারতেও প্রায় সময় আমরা দেখে থাকি ৷ সেক্ষেত্রে এইচআইভির ওষুধ দিলে টিবির ওষুধ থামাতে হয় ৷ কারণ এইচআইভির ওষুধ দিলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাংঘাতিকভাবে বেড়ে যায় ৷ সেই সময় যক্ষার ওষুধ দিলে খারাপ প্রতিফলন ইমিউন রিঅ্যাক্টিভিশন সিনড্রোম বলি ৷ তাই যখন এইচআইভির ওষুধ চলে তখন দু'সপ্তাহ যক্ষার ওষুধ বন্ধ রাখতে হয় ৷ এই দু'টো রোগে একসঙ্গে আক্রান্ত হতে পারেন যে কোনও ব্যক্তি ৷ অর্থাৎ বিশ্ব যক্ষা দিবসে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সচেতন হওয়ার পাশাপাশি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি বোঝা উচিত ৷ দেরি না করে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে একযোগে বলা যেতে পারে 'হ্যাঁ, আমরা যক্ষা রোগকে নির্মূল করতে পারি' ৷

আরও পড়ুন:

1. অচেনা ডার্মাটোমায়োসাইটিস কাড়ল 'দঙ্গল গার্ল'কে, আপনি আক্রান্ত নন তো! কী বলছেন বিশেষজ্ঞ

2. বায়ু দূষণ থেকে ফুসফুস-হার্টকে নিরাপদ রাখতে ডায়েটে রাখুন এই খাবারগুলি

3. ফ্রিজে খাবার তো রাখছেন, ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে না তো? সংরক্ষণের টিপস দিলেন পুষ্টিবিদ

হায়দরাবাদ: 25-এর নরেন বেশ কিছুদিন ধরেই জ্বর ও কাশিতে ভুগছেন ৷ ভাইরাল ফিভার ভেবে ওষুধ খেলেও কোনও লাভ পাননি ৷ সময়ের সঙ্গে অবস্থার অবনতি হলে নেন চিকিৎসকের পরামর্শ ৷ জানতে পারেন তিনি যক্ষা রোগে আক্রান্ত ৷ ধীরে ধীরে তাঁর শরীরে যক্ষা আঁকড়ে ধরছে, তা বুঝতেই চলে যায় অনেকটা সময় ৷ ফল মৃত্য়ু ৷ উপরের এই ঘটনা গল্প হলেও সত্যি হতে পারে ৷ তাই সচেতন হওয়া দরকার শুরু থেকেই ৷ সাধারণ জ্বর আর যক্ষার জ্বর-কাশির মধ্যে যে পার্থক্য করা দরকার তা বুঝতে হবে ৷ লক্ষণ চিনতে হবে ৷

যক্ষা ছোঁয়াচে রোগ ৷ এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ৷ কিন্তু অতীতের মতো মানুষের মনে এই রোগ নিয়ে যে বদ্ধ ধারণা ছিল, তা কি নির্মূল হয়েছে? ওয়ার্ল্ড টিউবারকুলোসিস ডে বা বিশ্ব যক্ষা দিবসে মানুষের মধ্যে সচেতনার আলো ছড়িয়ে দিতে আমরা কথা বলেছিলাম আর.এন ট্যাগোর হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাসের সঙ্গে ৷

TB
সঠিক সময়ে নিন চিকিৎসকের পরামর্শ

তিনি বলেন, "একটা কথা শুরুতেই বলতে হয় সচেতনতার বৃদ্ধি হয়েছে ৷ মানুষ এখন চিকিৎসা করাতে যায় বাড়ির মধ্যে না থেকে ৷ এখন সাধারণ মানুষ বুঝতে পেরেছে চিকিৎসা কেন্দ্রে বিনামূল্যে ওষুধ পাচ্ছে ৷ এখন মানুষ ভয়টা না পেয়ে চিকিৎসকের কাছে যাচ্ছে ৷ কিন্তু ভারতবর্ষের এমন অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে শিক্ষার আলো মানুষকে জাগরিত করেনি ৷ তখন তাঁদের বোঝাতে হয় ৷"

তিনি বলেন, "যক্ষা রোগে আক্রান্ত হলে কিছুদিন আইসোলেশনে থাকতে হয় ৷ ওষুধ শুরু করার দু থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে ছোঁয়াচে বিষয়টা আর থাকে না ৷ চিকিৎসা অনেকদিন চললেও অর্থাৎ ছয়মাস চললেও রোগটা ছড়িয়ে যাওয়ার যে ভয় থাকে, সেটা আর থাকে না ৷ তাছাড়া এখন সব জায়গায় কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের তরফে ওষুধের জোগানের ব্যবস্থা পর্যাপ্ত করা হয়েছে ৷ তবুও তা বলে কী আমরা সফল হতে পেরেছি? তা কিন্তু নয় ৷ 2018 সালের হিসাবে প্রতি এক লাখে 133 জন টিবি রোগী রয়েছেন ৷ সেটা কমছে ধীরে ধীরে ৷ সরকারের প্রচেষ্টা ভারত তথা রাজ্যকে টিবি মুক্ত করা 2025 সালের মধ্যে ৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে 2030 ৷ তবে চিকিৎসা পরিষেবা ঠিক মতো চলতে থাকলে এই রোগ নির্মূল হবে ৷ তবে এই রোগ নিয়ে যে কুসস্কার রয়েছে, মানুষকে এক ঘরে করে দেওয়ার প্রবণতা কমেছে কিন্তু পুরোপুরি শেষ হয়ে যায়নি ৷"

এই রোগের লক্ষণ কী? কীভাবে ছড়িয়ে পড়ছে ৷ চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস জানান, এটা হাঁচি-কাশি থেকে ছড়ায় ৷ যে টিবি রোগ বহন করছে তাঁর কাছে যখন কেউ পৌঁছাচ্ছে টিবি রোগীর কাশির জলকণার মধ্য দিয়ে এই জীবাণু ছড়ায় ৷ মাইকোব্যাক্টেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া এই রোগের জন্য দায়ী ৷ বারবার কাশি, বারবার জ্বর, সন্ধ্যে হলে জ্বর বেশি আসা, বুকে ব্যথা, দুবর্লতা, ওজন কমে যাওয়া প্রাথমিক লক্ষণ ৷ এই রোগের জীবাণু খারাপ দিকে গেলে বা ছড়িয়ে গেলে, কাশির সঙ্গে রক্ত আসতে পারে, শ্বাসকষ্ট প্রবল ভাবে হতে পারে, ফুসফুস-হার্ট-পেটে জল জমতে পারে ৷

চিকিৎসক আরও জানান, এই জীবাণু থেকে তাঁদেরই আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে যাঁদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল। অর্থাৎ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে 8 বছরের শিশু থেকে 80 বছরের প্রবীণ ৷ এছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্ত রোগীদের এই জীবাণুতে সংক্রমণের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। তবে যক্ষ্মার জীবাণু যে কেবল ফুসফুসকে আক্রান্ত করে তা নয়, এটি মস্তিষ্ক থেকে শুরু করে, ত্বক, অন্ত্র, লিভার, কিডনি, হাড়-সহ দেহের যে কোনও অঙ্গপ্রত্যঙ্গে সংক্রমণ হতে পারে। তবে ফুসফুসে যক্ষ্মা সংক্রমনের হার সবচেয়ে বেশি হওয়ায় সরকারি সচেতনতামূলক প্রচারে সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় ৷

তা হল টিবি রোগে আক্রান্ত হওয়ার পরে কী কী মেনে চলা উচিত? চিকিৎসক অরিন্দম বলেন, "ওষুধ চলার পাশাপাশি খাবারেও পরিবর্তন আনা উচিত ৷ যে সব খাবারের পুষ্টিগত মান ভালো দৈনন্দিন জীবনে তার ব্যবহার বাড়ানো উচিত ৷ হাসপাতালে চিকিৎসা চললে আলাদা বিষয় ৷ তবে যাঁদের বাড়িতে চিকিৎসা চলেছে তা যেন সম্পূর্ণ কোর্স মেনে হয় ৷ কোনও রকম সাইডএফেক্ট হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া ৷ রোগী রোগ মুক্তি হয়েছেন কি না, তা দেখার জন্য এক্স-রে করানো বা থুথু পরীক্ষা করানো উচিত ৷"

তিনি আরও বলেন, "মাথায় রাখতে হবে, ইমিউনিটি বাড়ানোর জন্য কোনও ওষুধ হয় না ৷ এটা ভুল ধারণা ৷ তার বদলে শাক-সবজি, ফল-মূল খাওয়া উচিত ৷ ভিটামিন মানসিকভাবে শক্তি বাড়িয়, শারীরিক ভাবে নয় ৷ আর এই রোগ একবার শরীর থেকে নির্মূল হলেও তা ক্যানসার রোগের মতো পুনরায় আসতে পারে ৷ হয়তো রোগী ঠিকমতো ওষুধের কোর্স সম্পূর্ণ করেননি বা টিবি রোগের জীবাণু শরীরে ঘাপটি মেরে বসে ছিল, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমলেই সেই সংক্রমণ আবারও জেগে উঠতে পারে ৷

এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয় হল করোনার যে লক্ষণ ও টিবির লক্ষণ তো প্রায় এক? একজন ব্যক্তি বুঝবেন কীভাবে? চিকিৎক অরিন্দম বলেন, "সাধারণত ভাইরাল ফিভার সাতদিনের বেশি থাকে না ৷ 10 দিনের মধ্যে মোটামুটি ঠিক হয়ে যায়৷ টিবির ক্ষেত্রে ধীরে ধীরে এগোবে ৷ জ্বর বারবার আসবে ৷ বুকে ব্যাথা হবে ৷ টানা কাশি ভাইরাল ফিভারে থাকলেও টিবির ক্ষেত্রে সেই কাশি যাবে না ৷ সাত দিন বা 10 দিনের বেশি জ্বর থাকলে টিবির কথা মাথায় রাখতে হবে ৷ আর চিকিৎসা শুরু হলে প্রতি মাসে লিভার ফাংশন টেস্ট করানো উচিত ৷ কারণ এই ওষুধ অনেক সময় ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় ৷ টিবির ওষুধ শুরু হলে চোখ ঠিক থাকছে কি না, লিভার ঠিক থাকছে কি না, নিউরোপ্যাথির মতো জটিলতা যাতে না হয়, তার খেয়াল রাখা উচিত ৷"

অনেক সময় টিবি বা এইচআইভির মতো রোগ একসঙ্গে হতে পারে ৷ উন্নত হয়নি এমন দেশে এটা সম্ভব, ভারতেও প্রায় সময় আমরা দেখে থাকি ৷ সেক্ষেত্রে এইচআইভির ওষুধ দিলে টিবির ওষুধ থামাতে হয় ৷ কারণ এইচআইভির ওষুধ দিলে শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাংঘাতিকভাবে বেড়ে যায় ৷ সেই সময় যক্ষার ওষুধ দিলে খারাপ প্রতিফলন ইমিউন রিঅ্যাক্টিভিশন সিনড্রোম বলি ৷ তাই যখন এইচআইভির ওষুধ চলে তখন দু'সপ্তাহ যক্ষার ওষুধ বন্ধ রাখতে হয় ৷ এই দু'টো রোগে একসঙ্গে আক্রান্ত হতে পারেন যে কোনও ব্যক্তি ৷ অর্থাৎ বিশ্ব যক্ষা দিবসে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো সচেতন হওয়ার পাশাপাশি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি বোঝা উচিত ৷ দেরি না করে সঠিক সময়ে চিকিৎসা শুরু হলে একযোগে বলা যেতে পারে 'হ্যাঁ, আমরা যক্ষা রোগকে নির্মূল করতে পারি' ৷

আরও পড়ুন:

1. অচেনা ডার্মাটোমায়োসাইটিস কাড়ল 'দঙ্গল গার্ল'কে, আপনি আক্রান্ত নন তো! কী বলছেন বিশেষজ্ঞ

2. বায়ু দূষণ থেকে ফুসফুস-হার্টকে নিরাপদ রাখতে ডায়েটে রাখুন এই খাবারগুলি

3. ফ্রিজে খাবার তো রাখছেন, ব্যাকটেরিয়া হচ্ছে না তো? সংরক্ষণের টিপস দিলেন পুষ্টিবিদ

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.