হায়দরাাবদ: রক্তচাপ বেশি হোক বা কম, দুটোই শরীরে নানা সমস্যা সৃষ্টি করে । বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ কখনও কখনও হৃদরোগ এবং অন্যান্য অনেক গুরুতর সমস্যার কারণ হয়ে ওঠে। একই সময়ে, খুব কম রক্তচাপও অনেক ঝুঁকির।
উচ্চ এবং নিম্ন রক্তচাপ: দিল্লির লাইফ হাসপাতালের চিকিৎসক আশরির কোরেশি ব্যাখ্যা করেন রক্তচাপ আমাদের শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা আমাদের রক্ত প্রবাহকে নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণত শরীরের প্রকৃতির উপর নির্ভর করে 90/60 mmHg এবং 120/80 mmHg-এর মধ্যে রক্তচাপ স্বাভাবিক বলে মনে করা হয়। কিন্তু রক্তচাপ এর থেকে অনেক বেশি বাড়তে বা কমতে থাকলে তা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক সমস্যা তৈরি করতে পারে।
এটি লক্ষণীয় যে, উচ্চ রক্তচাপ ব্রেন স্ট্রোক এবং কিডনি ব্যর্থতার মতো গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। একই সঙ্গে নিম্ন রক্তচাপ বা হাইপোটেনশনের ক্ষেত্রে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে সঠিকভাবে রক্ত সরবরাহ হয় না যার ফলে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা কিডনি ফেলিউর, হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোক-সহ নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে । একইসঙ্গে, এই অবস্থায় ব্যক্তির হঠাৎ অজ্ঞান হারানো বা মাথা ঘোরার মতো সমস্যা হতে পারে ৷ যার কারণে পড়ে গিয়ে ব্যক্তির আঘাত বা কোনও ধরণের দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও বাড়তে পারে।
কারণ ও লক্ষণ: উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বৃদ্ধির অনেক কারণ হতে পারে ৷ যেমন স্ট্রেস, স্থূলতা, বংশগতি, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, মেটাবলিক সিনড্রোম, থাইরয়েড, ক্রনিক কিডনি রোগ, অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া, নির্দিষ্ট ধরনের । ওষুধ, লবণ বা সোডিয়ামযুক্ত খাবারের অত্যধিক ব্যবহার, খারাপ খাদ্যাভ্যাস যেমন জাঙ্ক ফুডের অত্যধিক ব্যবহার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, শক্ত মরিচ এবং মশলাযুক্ত খাবার, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ ইত্যাদি। উপসর্গের কথা বলতে গেলে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা গুরুতর পর্যায়ে না-পৌঁছনো পর্যন্ত এর সুস্পষ্ট লক্ষণ দেখা যায় না। কিন্তু রক্তচাপ নির্ধারিত সীমা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর, যদি প্রচণ্ড মাথাব্যথা, শ্বাসকষ্ট, হৃদস্পন্দন বৃদ্ধি এবং নাক দিয়ে রক্ত পড়ার মতো উপসর্গ দেখা দিতে শুরু করে, তাহলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া বা হাসপাতালে যাওয়া জরুরি হয়ে পড়ে। চিকিৎসক আশরির কোরেশির মতে, যদি রক্তচাপ 130 mmHg/ 80 mmHg বা তার বেশি বৃদ্ধি পায়, তাহলে চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
নিম্ন রক্তচাপের জন্য অনেক কারণ রয়েছে ৷ যেমন-ডিহাইড্রেশন বা শরীরে জলের অভাব, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, শরীরে পুষ্টির অভাব, কোনও ধরনের ওষুধ বা চিকিৎসার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, সার্জারি বা গুরুতর আঘাত, বংশগতি, অতিরিক্ত মাত্রা মানসিক চাপ, অ্যালকোহল বা মাদক সেবন, দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুধার্ত থাকা বা খারাপ খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি । নিম্ন রক্তচাপের সমস্যায়, একজন ব্যক্তি মাথা ঘোরা, দুর্বলতা, ঝাপসা দৃষ্টি, বমি বমি ভাব বা বমি ভাব এবং বিভ্রান্তির মতো লক্ষণগুলি অনুভব করেন ।
সতর্কতা প্রয়োজন
তিনি আরও বলেন, এটি উচ্চ বা নিম্ন যাই হোক না কেন, একবার বিপির সমস্যা দেখা দিলে স্বাস্থ্য, খাদ্য এবং আচরণ সম্পর্কিত সতর্কতা অবলম্বন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে । বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা হলে চিকিৎসকের নির্দেশিত ওষুধ নিয়মিত সেবনের পাশাপাশি অন্যান্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা মেনে চলা খুবই জরুরি ৷ যাতে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় । উচ্চ এবং নিম্ন রক্তচাপের ক্ষেত্রে উপকারী হতে পারে এমন কিছু সতর্কতা নিম্নরূপ ।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা
আপনার নিয়মিত ডায়েট রুটিনে স্বাস্থ্যকর খাবারের পরিমাণ বাড়ান । যেমন-ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য । এছাড়া বেশি পরিমাণে লবণ বা সোডিয়াম যুক্ত খাবার, ভারী খাবার এবং ভাজা খাবার এড়িয়ে চলুন ।
স্বাভাবিক সীমার মধ্যে ওজন বজায় রাখার চেষ্টা করুন ।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন এবং একটি সক্রিয় রুটিন অনুসরণ করুন ।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করুন । এর জন্য যোগব্যায়াম এবং ধ্যান অনুশীলন করা উপকারী হতে পারে ।
ডায়াবেটিস বা অন্য কোনও রোগ বা সমস্যা হলে নিয়মিত ওষুধ সেবনের পাশাপাশি চিকিৎসকের নির্দেশিত সতর্কতা ও পরিহারের বিশেষ যত্ন নিন ।
ধূমপান এবং অ্যালকোহল সেবন হ্রাস করুন ।
নিম্ন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের উপায়
আপনার খাদ্যতালিকায় লবণ, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন বি12 এর মতো পুষ্টি উপাদান অন্তর্ভুক্ত করুন এবং সুষম খাবার খান ।
সারাদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন ।
আপনার দৈনন্দিন রুটিনে চা এবং কফির মতো ক্যাফেইনযুক্ত পানীয় অন্তর্ভুক্ত করুন । এতে রক্তচাপ বাড়তে পারে ।
দিনে ঘন ঘন কম কম খাবার খান । এটি রক্তচাপ স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে ।
হঠাৎ ঘুম থেকে ওঠা এড়িয়ে চলুন, বিশেষ করে সকালে । ধীরে ধীরে ঘুম থেকে উঠলে রক্তচাপ স্থিতিশীল থাকে ।
ডাঃ আশির কোরেশি ব্যাখ্যা করেন, রক্তচাপের ক্রমাগত ওঠানামা থাকলে, এটি উপেক্ষা করা উচিত নয় । উপরে উল্লেখিত উপসর্গ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা প্রয়োজন । যাদের ক্রমাগত উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপের সমস্যা রয়েছে তাদের নিয়মিত সময়ে রক্তচাপ পরীক্ষা করা উচিত । বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের দেওয়া খাদ্য ও ওষুধ সংক্রান্ত নির্দেশনা কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে ।