কলকাতা: নিজের কাজ কমাতে সন্তানের হাতে তুলে দিচ্ছেন মোবাইল ? এই মোবাইল দেখেই হয়ে যাচ্ছে শিশুর খাওয়া ? এখন থেকেই সাবধান । ছোট বয়স থেকেই অতিরিক্ত মোবাইল দেখায় তৈরি হচ্ছে একাধিক সমস্যা । যা পরবর্তীকালে মানসিক সমস্যায় রূপান্তর হচ্ছে । এই যন্ত্র হাতে পাওয়ার পরই সন্তান একদম চুপ । এমন জাদু এই ডিভাইসের । তবে মনে রাখবেন, নিয়মিত বাচ্চাদের হাতে মোবাইল তুলে দিয়ে কিন্তু তারই সর্বনাশ ডেকে আনছেন আপনি নিজেই ।
তবে শুধু বড় হলেই নয়, ছোটবেলাতেও এই সমস্যার একাধিক প্রভাব দেখা যায় । সেই বিষয়গুলি নিয়ে শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাগ্নিক মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বললেন ইটিভি ভারত । এই মোবাইল ফোন শিশুদের জন্য কতটা ভয়ানক ? তার ব্যাখ্যা দিলেন তিনি ।
ছোট থেকে শিশুর হাতে মোবাইল ফোন তুলে দেওয়ার ফলে তাঁরা মন বসায় কার্টুন অথবা রিলসে । চিকিৎসকদের মতে, ওই শিশুর মধ্যে কথা বলার অভ্যাস নষ্ট হয়ে যায় । মনরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সাগ্নিক মুখোপাধ্যায় জানান, "আমাদের কাছে এমন অনেক বাঙালি পরিবার আসে যার সন্তান ঠিকমতো বাংলা ভাষা বলতে পারে না । ফলে অনেকের ক্ষেত্রে বয়স এগিয়ে যায় কিন্তু কথা শিখতে পারে না ।" এছাড়াও নতুন প্রজন্মের ধৈর্য হ্রাস পাচ্ছে । এর অন্যতম কারণ হিসাবে চিকিৎসকের মত মোবাইল । তিনি বলেন, "একটার পর একটা রিলস মোবাইলে চলে আসছে । পছন্দ না-হলে তৎক্ষণাৎ বদলে দেওয়া যাচ্ছে । এর ফলের শিশুদের মধ্যে মনোযোগের বেশ অভাব দেখা যায় । তখন শিশুর মধ্যে এক ধরনের জেদ তথা রাগ বেশি তৈরি হয় ।"
এসবের পাশাপাশি চিকিৎসকরা মনে করেন, এই মোবাইল ফোন হাতে আসায় বন্ধুর সংখ্যা কমে যাচ্ছে । তাই ছোট থেকে আমরা যে সহমর্মিতার কথা বলে থাকি, তা এখনকার শিশুদের মধ্যে আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে । মা-বাবা কাজ বাঁচাতে, তাঁদের শিশুদের যন্ত্রনির্ভর করে তুলছে। আর এই যন্ত্র নির্ভর হয়ে যাওয়ায় বাড়ছে শিশুর মধ্যে অপরাধমূলক কাজের মনোভাব ৷
চিকিৎসক আরও জানান, কার্টুন দেখছে ঠিকই তার পাশাপাশি মোবাইলে রিলসে অনেক কিছু সে দেখে ফেলছে । হয়তো সেগুলি ওই বয়সে তার দেখার কথা না। কিন্তু তখন সে ওইগুলি দেখে নিয়ে তার মধ্যে সেই বিষয়ে উৎসাহী হয়ে যাচ্ছে ।
তবে এইগুলি থেকে মুক্তির উপায় শিশুকে মোবাইল ছাড়া রাখা । কিন্তু বর্তমান প্রজন্মে মা-বাবা দুজনেই কর্মরত হয়ে থাকেন । ফলে যন্ত্র-নির্ভর না করে কীভাবে নিজের সন্তানকে ভালো রাখা যায় ?
চিকিৎসক বলেন, "যদি আজকে আমি একটু সময় দিই নিজের সন্তানকে, তাহলে কাল আমি তার ভালোটা পাব । দরকার হলে এখন অনেক ধরনের জায়গা তৈরি হয়েছে, যেমন প্লে স্কুল । সেখানে আরও বিভিন্ন বাচ্চাদের সঙ্গে তাকে মিশতে দিন । ওখানেই আস্তে আস্তে বন্ধু তৈরি হবে, কথা বলার অভ্যাস হবে । কথা বলাটা খুব জরুরি, সেটা যার সঙ্গে হোক ।" এরই সঙ্গে গল্পের বই হল আরও একটি উপায় । এর জন্য গল্পের বই পড়ার অভ্যাস মা-বাবার রাখতে হবে বলেও জানান চিকিৎসক । আবার সেই অভ্যাস থেকে বাচ্চার মধ্যে তৈরি হবে গল্পের বই পড়া নেশা । যা মোবাইলের বিকল্প হিসেবে কাজে দেবে ।