কলকাতা, 24 সেপ্টেম্বর: টলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে প্রতিবাদ করলেই গুনতে হবে মাসুল ৷ কাজ থেকে সাসপেন্ড করা, সদস্যপদ কেড়ে নেওয়া, কাজ না দেওয়া, কার্ড না দেওয়া- কান পাতলে ইন্ডাস্ট্রির অন্দরে এমন অভিযোগ অহরহ শোনা যায়। সেই অভিযোগে প্রথম থেকে সরব হয়েছেন অভিনেত্রী শ্রীলেখা মিত্রও ৷ এখন অভিনেত্রীর মতো অনেক শিল্পী-পরিচালকও মনে করছেন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে জমিদারি প্রথা বিলোপ হওয়ার সময় হয়েছে।
শ্রীলেখা মিত্র বলেন, "আমাকে আজ ডিএইআই-এর মিটিংয়ে কিছু বলতে দেওয়া হল না কেন না আমি মুখ খুললেই শাসক দলের প্রসঙ্গ টেনে আনব। আমাকে বলা হল আমার কাছে ডিরেক্টরের কার্ড নেই। অথচ আমি কিন্তু পরিচালনা করেছি । ছোট ছবি, বিজ্ঞাপন পরিচালনা করেছি। একটা ওটিটি সিরিজ পরিচালনা করতে চলেছি। আমাকে যেটা বলা হল সেটাও পরোক্ষে 'থ্রেট কালচার'-এরই নমুনা।"
দিনের পর দিন কাজ না পেয়ে বসে থেকেছিলেন কেশসজ্জা শিল্পী। এহেন অবস্থা একটা সময়ে পার করে এসেছেন শ্রীলেখা মিত্রও। দীর্ঘদিন কোনও কাজ পাননি তিনি। আজ থেকে চার বছর আগে গর্জে উঠেছিলেন তিনিও। অভিনেত্রীকে বলা হয়েছিল তাঁর মধ্যে নাকি খামতি আছে, সেই কারণে তিনি কাজ পাচ্ছেন না। এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমার কাছে থ্রেটটা ছিল অন্যরকম। আমাকে বলা হয়েছিল আমি কেন মাথাদেরকে চটিয়েছি। সুতরাং আমাকে কাজ দেওয়া কঠিন। আমার কোনও প্রযোজকের সঙ্গে দহরম মহরম নেই কোনওদিনই। থাকলে দু'চারজনকে পাশে পেতাম হয়ত তখন। আমি শুধুই একজন অভিনেত্রী। আমার কথাকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি তখন।"
শ্রীলেখা আরও বলেন, "আমাকে বলা হয়েছিল আমি নাকি স্লাট শেমিং করছি। আমার যোগ্যতা নেই তাই কাজ পাইনি। এক সাংবাদিক আমাকে পোটেনশিয়াল রেপিস্ট বলেছিলেন।" তিনি এদিন প্রতিবাদে সরব হয়ে আরও বলেন, "সামাজিক মাধ্যমে আমার পোস্টে কমেন্ট করেন সাধারণ মানুষ। আমাকে এক পরিচালক বলেছেন আমার সব পোস্ট নাকি উনি ফলো করেন। কিন্তু অদ্ভুত উনি কোনও কমেন্ট করেন না। শুধু উনি নয়, কোনও ডিরেক্টর বা প্রোডিউসার বা অভিনেতাই এসে কমেন্ট করেন না। পাছে সবাই জেনে যায় যে আমার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক আছে। এতটাই ইনসিকিওরড ওঁরা। এটা বহুদিন ধরে চলছে। আমি নেই আমি উহ্য। এবং এটা চলবে।"
এদিন অভিনেত্রী জানান, যেই সময়ে তিনি কাজ পাচ্ছিলেন না তখন নিজেকে শেষ করে দেওয়ার কথাও ভেবেছিলেন ৷ তিনি বলেন, " ওই সময় আমি আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম। আজ কারোকে কাজ থেকে বসিয়ে দিলে তারও এরকম অবস্থাই হবে। সেদিন আমাকে বডি শেমিং করা হয়েছিল। আমার খামতি ধরেছিলেন এক মহান অভিনেত্রী। আমি কোনও বিনিময়ের জন্য প্রেম করিনি।"
এরপরেই উঠে আসে মালয়লম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে হেমা কমিটি গঠনের প্রসঙ্গ ৷ যেখানে দীর্ঘ বছর পর ন্যায় পাওয়ার আশা দেখছেন পরিচালকের কাছে যৌন হেনস্তার শিকার হওয়া শ্রীলেখা ৷ অভিনেত্রী বলেন, " মালয়ালম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে হেমা কমিটি এল। আমার সঙ্গে কী হয়েছিল ওখানে, তা এখন সবাই জানেন। একটা ভয়াবহ রাত ছিল সেদিন। চেয়ার সোফা টেনে দরজায় আগল দিয়েছিলাম ঘরে। প্রতিবাদ করেছিলাম। তার নিরিখে আজ পনেরো বছর পরে ওখান থেকে এসে আমার ইন্টারভিউ নেওয়া হল। হেমা কমিটি এল ওখানে। পরিচালক রিজাইন দিতেও বাধ্য হলেন। এবার এখানেও হেমা কমিটির আদলে কমিটি করা হবে। কিন্তু সেই লিস্টে আমার নাম নেই। লিস্টে যাঁদের নাম আছে তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে মি টু মুভমেন্ট হওয়ার কথা।"