কলকাতা, 17 সেপ্টেম্বর: মেয়েদের নিরাপত্তার খাতিরে রাতে তাঁদের বাইরে কাজ না করাই ভালো। জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। এই বক্তব্য ঘিরে ব্যাপক প্রতিবাদ শুরু হয় বাংলা বিনোদন দুনিয়া-সহ অন্যান্য মহলেও। মঙ্গলবার আরজি কর কাণ্ডের শুনানিতে রাতে মেয়েদের কাজ করার নির্দেশ শুনে চমকে ওঠেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরাও।
প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নির্দেশ, রাজ্যকে ওই বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করতে হবে। তাঁর মন্তব্য, “নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব সম্পূর্ণ আপনাদের। মহিলারা রাতে কাজ করতে পারবেন না, এ কথা বলতে পারেন না।” উল্লেখ্য, রাতে মেয়েদের কাজ না করার ওই বিজ্ঞপ্তির যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন করেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, “বিমান পরিষেবা, সেনায় অনেক মহিলা রাতে কাজ করেন। ফলে এই বিজ্ঞপ্তি কেন?” সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়েছেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, বিদীপ্তা চক্রবর্তী, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়, রূপাঞ্জনা মিত্র।
অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত ইটিভি ভারতকে বলেন, "ভীষণ খুশি আমি। এই কথাটা আমিও বলেছিলাম যে মেয়েদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব রাজ্যের। কেন তাঁরা রাতে কাজ না করে ঘরে বসে থাকবে? তখন কি শুধু হিংস্র জন্তুরাই ঘুরবে রাস্তায়?" রূপা গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "আমি খুব খুশি। খুব ভালো পদক্ষেপ। সুপ্রিম কোর্ট বলছে সিবিআই-এর রিপোর্ট ভীষণ ডিসটার্বিং।" বিদীপ্তা চক্রবর্তী সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণের কথা জেনে বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের এই পদক্ষেপে আমি ভীষণ খুশি ৷ খুব ভালো একটা পদক্ষেপ।"
অভিনেতা ভাস্বর চট্টোপাধ্যায় বলেন, "খুশি তো অবশ্যই। সুপ্রিম কোর্টের এই রায়কে আমি কুর্নিশ জানাই। এই যে মেয়েরা রাতে কাজ করবে না বলা হয়েছিল তাতে খুব ছোট গণ্ডির ভিতরে তাঁদের আটকে রাখা হত। শুধু ডাক্তাররা নাইট ডিউটি করেন না। অন্যান্য মহিলারাও করেন। আয়ারা অনেক বৃদ্ধ মানুষের সঙ্গে থাকেন। তাঁরা কি কাজ বন্ধ করে দেবেন? তা হলে তাঁদের সংসার চলবে কী করে? পাশাপাশি ওই বৃদ্ধ মানুষটিরও কী হবে? কল সেন্টারের মেয়েরাও কাজ বন্ধ করে দেবে?"
অভিনেতা আরও বলেন, "শুটিং ফ্লোরের মেকআপ আর্টিস্ট, হেয়ার ড্রেসার, অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর, অভিনেত্রী সবাই বন্ধ করে দেবে? ডেলিভারি গার্ল, ক্যাব ড্রাইভারও আজকাল মহিলা। তাঁরাও কাজ করবেন না? রাজ্য মানে তো মানুষ। আসলে মানুষের দায়িত্ব মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া। কারোকে হেনস্তা করতে দেখলে প্রতিবাদ না করে লোকে ভিডিও তুলছে। এটা ঠিক না৷ প্রতিবাদ করতে হবে।"
রূপাঞ্জনা মিত্র বলেন, "ভাগ্যিশ সংশোধন করার কথা বলা হয়েছে, নইলে মেয়েদের আরও পিছিয়ে দেওয়া হতো আমাদের রাজ্যে। এমনিতেই এত পিছিয়ে আছি অনেক ক্ষেত্রে। বিশেষ করে কর্মসংস্থান যেখানে নেই বললেই চলে, যা খেয়ে পরে বেঁচে আছে মেয়েরা আর যতটুকু মাথা তুলে আছে সেই স্বাধীনতার ওপরে আঘাত হানলে আমরা হয়তো মেনে নিতে আর পারব না।"
চৈতী ঘোষাল বলেন, "আমরা এটা আগেই চেয়েছিলাম। রাত্রিবেলা মেয়েরা নাইট ডিউটি করবে না এটা তো হতে পারে না। উনি তো প্রাগৈতিহাসিক যুগেরও আগের কথা বলেছিলেন। নারী পুরুষের সমানাধিকার নিয়ে আমরা কথা বলি, আর সেখানে মেয়েরা রাতে কাজ করবে না এটা কীরকম নিয়ম ৷ আমরা যখন বলছিলাম তখন বলা হচ্ছিল নিরাপত্তার কথা ভেবে বলা হচ্ছে । আমরা ডেঙ্গুর ভয়ে রাস্তায় বেরোব না এটা হবে? আজ সুপ্রিম কোর্ট পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে মেয়েরা নাইট ডিউটি করবে না- এই নিয়মের কোনও যুক্তি নেই, কোনও ভিত্তি নেই।"