কলকাতা, 13 সেপ্টেম্বর: নবান্ন ঘেরাও করে কোনও লাভ নেই বা মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েও কোন লাভ নেই ৷ আগে আইনে বদল আনতে হবে, ধর্ষকরা যাতে ভয় পায় কঠোর আইনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে হবে ৷ সম্প্রতি আরজি কর প্রসঙ্গ ও কলকাতা জুড়ে বিক্ষোভ-আন্দোলন নিয়ে মন খুলে কথা বললেন অভিনেতা তথা তৃণমূল সাংসদ দেব ৷ সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত টেক্কা-র টিজার লঞ্চ অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন দেব ৷
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র চিকিৎসকদের বৈঠক লাইভ করার প্রসঙ্গে দেব বলেন, "আমার মনে হয় যে জায়গা আজকে আন্দোলন চলছে সেখানে সমস্যার সমাধান হতে পারে সামনা সামনি আলোচনার মধ্য দিয়ে ৷ আমি এই আন্দোলনটাকে সাধুবাদ জানাই ৷ সরকার চেষ্টা করছে তাঁদের মতো করে ৷ আমরা সকলেই ন্যায়বিচারের জন্য অপেক্ষা করছি ৷ কিন্তু সত্যি কথা বলতে সরকারের হাতে আর ন্যায়বিচার নেই ৷ পুরোপুরি আছে সিবিআই-এর হাতে ৷ রয়েছে সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধান বিচারপতির হাতে ৷ আমার মনে হয় স্বাস্থ্য দফতরের ক্ষেত্রে সত্যিই একটা ভালো পরিকাঠামো দরকার ৷"
মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ প্রসঙ্গে দেব:
নবান্নে বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন মানুষের স্বার্থে তিনি পদত্যাগ করতে রাজি ৷ এই পরিপ্রেক্ষীতে দেব বলেন, "এই লড়াইটা নবান্ন ঘেরাও-এর নয় ৷ এই লড়াইটা-তো সংবিধান ঘেরাও-র লড়াই ৷ আমি চাই এর পরে যেন আর কোনও মেয়েকে নির্ভয়া বা তিলোত্তমা না ডাকতে হয় ৷ মানুষ যেন ভয় পায় ৷ আমরা এই একমাসের মধ্যে কতগুলো ধর্ষণের ঘটনা দেখেছি ৷ মানুষের এখন ভয় নেই ৷ তাহলে একটা নবান্ন ঘেরাও করে তো লাভ নেই ৷ ঘেরাও মানে এই নয় যে আন্দোলন করতে হবে ৷ সংবিধানে পরিবর্তন আনতে গেলে প্রতিটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে বসা উচিত ৷ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে আলোচনা করে পথ বের করা উচিত ৷"
এরপর অভিনেতা বলেন, "দেশে যত না জঙ্গির মৃত্যু হয় তার থেকে বেশি মেয়েদের সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ৷ তবুও আমাদের চোখ খুলছে না ৷ আমি কোনও পক্ষে কথা বলছি না ৷ এই আন্দোলনকে এত ছোট করে রাখা উচিত নয় ৷ আজ এই সরকার গেলে অন্য সরকার আসবে ৷ কিন্তু যারা ধর্ষণ করছেন তাদের মনে কোনও ভয় থাকছে না ৷ তাহলে এই লড়াই কীসের লড়াই ? আমাদের আইনে সংশোধন আনতে হবে ৷ বেটি বাঁচাও, কন্যাশ্রীর মতো দেশজুড়ে অনেক প্রকল্প আছে নারীদেরকে নিয়ে কিন্তু এর কোনও অর্থ হয় না যদি না আমরা সম্মান দিতে পারি ৷ মানুষের মধ্যে ভয় নেই, আমার কষ্ট এখানেই ৷"
আন্দোলন প্রসঙ্গে দেবের অভিমত:
অভিনেতা বলেন, "আমি চাই এরপর আমার রাজ্যের প্রত্যেকটা মানুষ যদি রাত দখল করে তাহলে তারা সংবিধান দখলও করুক ৷ নবান্ন দখল করে কোনও মেয়ে দেশের নিরাপত্তা পাবে না ৷ এবার সংবিধান ঘেরাও করতে হবে রাত দখলের মাধ্যমে ৷ যাঁরা সত্যিকারের প্রতিবাদ করছেন তাঁদের সঙ্গে আমি আছি ৷ কিন্তু আমার মনে হয় আন্দোলনের গতি অন্যদিকে চলে যাচ্ছে ৷ এমন নয় যে, প্রতিবাদ মানেই তোমাকে মোমবাতি নিয়ে রাস্তায় নামতে হবে ৷ এইভাবে কথা বলেও প্রতিবাদ জানানো যায় ৷ আমি চাই দেশের প্রত্যেকটা মেয়ে নিরাপদে থাকুক ৷ যারা ধর্ষণের মানসিকতা নিয়ে চলে তারা হতা দেওয়া তো দূরের কথা, তাকাতেও যেন ভয় পায় ৷ সেই আইন আনতে হবে ৷"
তিনি আরও বলেন, "কেন এই লড়াই রাজনৈতিক হবে? আমি জানি না এটাতে আমাকে ভালো বলবেন না খারাপ বলবেন আমাদের দেশের অবস্থা কোনও দিনও ভালো হবে না যতদিন আমরা পলিটিক্যাল মাইন্ড সেট নিয়ে চলব ৷ এ বলবে ওই রাজ্যে হচ্ছে, ও বলবে এই রাজ্যে হচ্ছে ৷ আমার মনে হয়, সব রাজ্যকে একসঙ্গে নিয়ে আসো ৷ একটা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পদত্যাগ করলে কোনও লাভ হবে না ৷ আমার মনে হয় জুনিয়র চিকিৎসকদের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করা উচিৎ ৷ নতুন পরিকাঠামো তৈরি করা উচিত ৷ লাইভ হল কি হল না বড় বিষয় নয় ৷ আমরা চাই সিস্টেমে পরিবর্তন আসুক ৷ আমি আউটকামের অপেক্ষা করছি ৷ আমি আর অজুহাত চাই না ৷"