ETV Bharat / entertainment

অভিভাবকদের আগ্রহের অভাবেই কি নাটকে কমছে শিশুদের অংশগ্রহণ ? - CHILDREN IN THEATRE

ছয় ইঞ্চির মোবাইল স্ক্রিনে খুদেরাও এখন অভিনেতা-গায়ক-তারকা ৷ সন্তানের প্রতিভা সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরতে ব্যস্ত ! ক'জন অভিভাবক চাইছেন সন্তানদের থিয়েটার বা নাটক শেখাতে ?

Etv Bharat
প্রতীকী ছবি (গেটি)
author img

By ETV Bharat Entertainment Team

Published : Jan 27, 2025, 12:42 PM IST

কলকাতা, 27 জানুয়ারি: নাটক মানুষের জীবন গড়ে দেয়। ছোটবেলা থেকে নাট্যচর্চা করলে মনের বিকাশ দ্রুততর হয়। আর তাই একটা সময় ছিল যখন ছানা বড় হলেই তাদের হাতে ধরে নিয়ে বাবা-মায়েরা ছুটতেন কোনও নাটকের দলে। সপ্তাহের শনি কিংবা রবিবারটা তাঁরা বরাদ্দ রাখতেন ছেলেমেয়ের নাট্যচর্চার জন্য। (কেউ কেউ আবার নাচ, গান, আঁকা বা অন্যান্য কিছুতেও।) আজ সেই দৃশ্য বিরল। থিয়েটারের মঞ্চে খুব কমই দেখা মেলে কচিকাঁচাদের। খুব কম সংখ্যক বাবা মায়েরা আজ নাটকমুখী করছেন তাঁদের ছেলেমেয়েদের। কিন্তু কেন? এই ব্যাপারে কী ধারণা বাংলার নাট্যকর্মীদের? জেনে নিল ইটিভি ভারত।

নাট্যকর্মী পৌলমী বসু বলেন, "বাচ্চাদের আগ্রহ যে খুব দেখতে পাচ্ছি তা নয়। কিছু আছে। তবে কমই। দোষ দিতে পারি না। থিয়েটার করে ক'টা টাকাই বা পাওয়া যায়? তাদেরও তো ভবিষ্যৎ আছে৷ তাদেরও তো ভাবতে হবে আগামী দিনগুলোর কথা। যতদিন না থিয়েটার থেকে একটা পাকাপাকি আয়ের ব্যবস্থা হবে ততদিন তারা কীভাবে কোন ভরসায় আসবে? বাবা মায়েরায়াও বা কোন ভরসায় নিয়ে আসবে তাদের নাটক শেখাতে?"

নাটকে কমছে শিশুদের অংশগ্রহণ (ইটিভি ভারত)

নাট্যকর্মী দেবদাস ঘোষ বলেন, "ছোটরা যে একেবারেই থিয়েটার শিখতে যাচ্ছে না তা নয়। তবে বহুলাংশে যাচ্ছে না। তারা কেন যাচ্ছে না সেটা অনুসন্ধান করতে গেলে প্রথমেই যেটা সামনে আসে সেটা হল আমরা বাবা-মায়েরাই বোধহয় আর চাই না। একসময় তারা চাইতেন তাই ছেলেমেয়েরা যেত। এখন বাবা মায়েরাই ভাবছেন থিয়েটার করে কী হবে। যে সময় থিয়েটারে ব্যয় করবে সেই সময়ে লেখাপড়া বা অন্যকিছু যাতে ভবিষ্যৎ আছে সেদিকে এগোনই ভালো। যাতে তারা আগামিদিনে রোজগার করতে পারবে। এতে কোনও অন্যায় নেই।

drama
থিয়েটারে শিশুশিল্পী (ইটিভি ভারত)
তবে, থিয়েটার করলে যে ওদের মন ভালো থাকে, ওরা নিজেদের মেলে ধরতে পারে সেগুলো তাঁরা ভাবেন না। তাঁরা বোধহয় সন্তানদের মন ভালো রাখার কথা ভাবেনও না। সবাই এখন ফাস্ট লাইফের পিছনে ছুটছে। একটা সময় বাবা মায়েরা চাইতেন ছেলেমেয়ে পড়াশুনার বাইরেও কিছু শিখুক। বড় উদাহরণ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে দেখেও অনেক বাবা মা ছেলেমেয়েকে খেলাধুলা-সহ অন্যান্য কিছুতে যুক্ত করতেন।"

তিনি আরও বলেন, "আজকাল বাবা মায়েরা নিজেদের না হওয়াগুলোকে বাচ্চাদের মধ্যে দিয়ে হওয়াতে চাইছেন। অনেকের অনেক রকমের চাহিদা। পেশাগত কারণে একটা অভিনয় শিক্ষার স্কুলে কোচ হিসেবে গিয়ে কিছু বাবা- মা'কে বলতে শুনেছি আমার বাচ্চাটাকে ওমুক শো-এর ওমুক বাচ্চাটার মতো করে দিন। তাঁরা তাঁদের বাচ্চাকে ছয় মাসের জন্য অনেক টাকা দিয়ে ভর্তি করিয়ে এই কথা বলেছেন। বড়দের এই দীন ভাবনা চিন্তা থাকলে কী ভাবে হবে? মানুষ ক্ষণিকে বিশ্বাসী।

থিয়েটার হল লং লার্নিং প্রসেস। অনেক আনন্দ আছে এতে। আবার এটাও ঠিক আমরা যারা এত কাল ধরে থিয়েটার করে আসছি তারাও হয়ত ছোটদের মতো করে কিছু করতে পারছি না। তাই হয়ত ওদের আগ্রহ কমছে। একইভাবে অনেক অভিভাবক ব্যস্ততার কারণে বাচ্চাদের রিহার্সালে নিয়ে আসতে পারেন না। আমি নিজে ছোটদের একটা প্রযোজনা করতে গিয়ে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। আসলে বাবা মায়েরা সিরিয়াসলি নেন না থিয়েটারকে। ছেলেমেয়েদের যে মনটা এতে ভালো থাকে বাবা মায়েদের কাছ থেকে এই বোধটা চলে গেছে। তাঁরা তো বোধহয় বাচ্চাদের রূপকথার গল্প পড়তেও বলেন না। চাঁদমামা পড়ে ওরা? পড়লেও ক'জন? মানসিক বিকাশ না হলে এই ধরনের আর্ট ফর্ম কেন ভালো লাগবে ওদের।"

নাট্যকর্মী দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বাচ্চাদের আজকাল কমই দেখি থিয়েটারে ৷ কেন কম সেটা ওদের পারিপার্শ্বিকতার উপর নির্ভর করে। অভিভাবকদের একটা বড় ভূমিকা থাকে এক্ষেত্রে, যে তাঁরা কী শেখাবেন বাচ্চাকে। থিয়েটারের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতে হয় ছোট থেকেই। আর সেটার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই। আগ্রহের বীজ বপণ করে দিতে হবে আমাদেরই। আমাদেরই বোঝাতে হবে এটা আমাদের সংস্কৃতি। বড় হয়ে তারা কী করবে সেটা পরের ব্যাপার।"

তিনি আরও বলেন, "আমাদেরই উচিত ওদেরকে একটা সুস্থ পরিবেশে দেওয়া। যেটাতে ওরা সবটা পাবে। থিয়েটার মানে তো শুধু সংলাপ নয়। থিয়েটার মানে গান, আবৃত্তি, গলার একসারসাইজ, ফিজিক্যাল একসারসাইজ। মানে সবটা একসঙ্গে ওখানেই হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হল, আমরা আজকাল নিজেদের সংস্কৃতির থেকেও অন্যের সংস্কৃতি নিয়ে বেশি মাতামাতি করি। তার উপরে আছে সময়ের প্রভাব। মোবাইলে ব্যস্ত তারা। আমরা আগে পাড়ায়, ক্লাবে থিয়েটার পেতাম। ওরা সেটা পায় না। ছোটদের নাটকের দলও কম। তবে আছে নান্দীকার, চেতনা, শুভম, ইচ্ছেমতো। তবে, বাচ্চাদের আগ্রহ কমেছে এটা সত্যিই।"



এক সন্ধ্যায় চারটি নাটক ! গান-অভিনয়ে মঞ্চ মাতালেন কারা ?

'নটী বিনোদিনী' রুক্মিণী পর্দায় কতটা সার্থক ? জমল কি রামকমলের ম্যাজিক ?

কলকাতা, 27 জানুয়ারি: নাটক মানুষের জীবন গড়ে দেয়। ছোটবেলা থেকে নাট্যচর্চা করলে মনের বিকাশ দ্রুততর হয়। আর তাই একটা সময় ছিল যখন ছানা বড় হলেই তাদের হাতে ধরে নিয়ে বাবা-মায়েরা ছুটতেন কোনও নাটকের দলে। সপ্তাহের শনি কিংবা রবিবারটা তাঁরা বরাদ্দ রাখতেন ছেলেমেয়ের নাট্যচর্চার জন্য। (কেউ কেউ আবার নাচ, গান, আঁকা বা অন্যান্য কিছুতেও।) আজ সেই দৃশ্য বিরল। থিয়েটারের মঞ্চে খুব কমই দেখা মেলে কচিকাঁচাদের। খুব কম সংখ্যক বাবা মায়েরা আজ নাটকমুখী করছেন তাঁদের ছেলেমেয়েদের। কিন্তু কেন? এই ব্যাপারে কী ধারণা বাংলার নাট্যকর্মীদের? জেনে নিল ইটিভি ভারত।

নাট্যকর্মী পৌলমী বসু বলেন, "বাচ্চাদের আগ্রহ যে খুব দেখতে পাচ্ছি তা নয়। কিছু আছে। তবে কমই। দোষ দিতে পারি না। থিয়েটার করে ক'টা টাকাই বা পাওয়া যায়? তাদেরও তো ভবিষ্যৎ আছে৷ তাদেরও তো ভাবতে হবে আগামী দিনগুলোর কথা। যতদিন না থিয়েটার থেকে একটা পাকাপাকি আয়ের ব্যবস্থা হবে ততদিন তারা কীভাবে কোন ভরসায় আসবে? বাবা মায়েরায়াও বা কোন ভরসায় নিয়ে আসবে তাদের নাটক শেখাতে?"

নাটকে কমছে শিশুদের অংশগ্রহণ (ইটিভি ভারত)

নাট্যকর্মী দেবদাস ঘোষ বলেন, "ছোটরা যে একেবারেই থিয়েটার শিখতে যাচ্ছে না তা নয়। তবে বহুলাংশে যাচ্ছে না। তারা কেন যাচ্ছে না সেটা অনুসন্ধান করতে গেলে প্রথমেই যেটা সামনে আসে সেটা হল আমরা বাবা-মায়েরাই বোধহয় আর চাই না। একসময় তারা চাইতেন তাই ছেলেমেয়েরা যেত। এখন বাবা মায়েরাই ভাবছেন থিয়েটার করে কী হবে। যে সময় থিয়েটারে ব্যয় করবে সেই সময়ে লেখাপড়া বা অন্যকিছু যাতে ভবিষ্যৎ আছে সেদিকে এগোনই ভালো। যাতে তারা আগামিদিনে রোজগার করতে পারবে। এতে কোনও অন্যায় নেই।

drama
থিয়েটারে শিশুশিল্পী (ইটিভি ভারত)
তবে, থিয়েটার করলে যে ওদের মন ভালো থাকে, ওরা নিজেদের মেলে ধরতে পারে সেগুলো তাঁরা ভাবেন না। তাঁরা বোধহয় সন্তানদের মন ভালো রাখার কথা ভাবেনও না। সবাই এখন ফাস্ট লাইফের পিছনে ছুটছে। একটা সময় বাবা মায়েরা চাইতেন ছেলেমেয়ে পড়াশুনার বাইরেও কিছু শিখুক। বড় উদাহরণ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। তাঁকে দেখেও অনেক বাবা মা ছেলেমেয়েকে খেলাধুলা-সহ অন্যান্য কিছুতে যুক্ত করতেন।"

তিনি আরও বলেন, "আজকাল বাবা মায়েরা নিজেদের না হওয়াগুলোকে বাচ্চাদের মধ্যে দিয়ে হওয়াতে চাইছেন। অনেকের অনেক রকমের চাহিদা। পেশাগত কারণে একটা অভিনয় শিক্ষার স্কুলে কোচ হিসেবে গিয়ে কিছু বাবা- মা'কে বলতে শুনেছি আমার বাচ্চাটাকে ওমুক শো-এর ওমুক বাচ্চাটার মতো করে দিন। তাঁরা তাঁদের বাচ্চাকে ছয় মাসের জন্য অনেক টাকা দিয়ে ভর্তি করিয়ে এই কথা বলেছেন। বড়দের এই দীন ভাবনা চিন্তা থাকলে কী ভাবে হবে? মানুষ ক্ষণিকে বিশ্বাসী।

থিয়েটার হল লং লার্নিং প্রসেস। অনেক আনন্দ আছে এতে। আবার এটাও ঠিক আমরা যারা এত কাল ধরে থিয়েটার করে আসছি তারাও হয়ত ছোটদের মতো করে কিছু করতে পারছি না। তাই হয়ত ওদের আগ্রহ কমছে। একইভাবে অনেক অভিভাবক ব্যস্ততার কারণে বাচ্চাদের রিহার্সালে নিয়ে আসতে পারেন না। আমি নিজে ছোটদের একটা প্রযোজনা করতে গিয়ে এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। আসলে বাবা মায়েরা সিরিয়াসলি নেন না থিয়েটারকে। ছেলেমেয়েদের যে মনটা এতে ভালো থাকে বাবা মায়েদের কাছ থেকে এই বোধটা চলে গেছে। তাঁরা তো বোধহয় বাচ্চাদের রূপকথার গল্প পড়তেও বলেন না। চাঁদমামা পড়ে ওরা? পড়লেও ক'জন? মানসিক বিকাশ না হলে এই ধরনের আর্ট ফর্ম কেন ভালো লাগবে ওদের।"

নাট্যকর্মী দেবনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বাচ্চাদের আজকাল কমই দেখি থিয়েটারে ৷ কেন কম সেটা ওদের পারিপার্শ্বিকতার উপর নির্ভর করে। অভিভাবকদের একটা বড় ভূমিকা থাকে এক্ষেত্রে, যে তাঁরা কী শেখাবেন বাচ্চাকে। থিয়েটারের প্রতি ভালোবাসা তৈরি করতে হয় ছোট থেকেই। আর সেটার দায়িত্ব অভিভাবকদেরই। আগ্রহের বীজ বপণ করে দিতে হবে আমাদেরই। আমাদেরই বোঝাতে হবে এটা আমাদের সংস্কৃতি। বড় হয়ে তারা কী করবে সেটা পরের ব্যাপার।"

তিনি আরও বলেন, "আমাদেরই উচিত ওদেরকে একটা সুস্থ পরিবেশে দেওয়া। যেটাতে ওরা সবটা পাবে। থিয়েটার মানে তো শুধু সংলাপ নয়। থিয়েটার মানে গান, আবৃত্তি, গলার একসারসাইজ, ফিজিক্যাল একসারসাইজ। মানে সবটা একসঙ্গে ওখানেই হয়ে যায়। কিন্তু সমস্যা হল, আমরা আজকাল নিজেদের সংস্কৃতির থেকেও অন্যের সংস্কৃতি নিয়ে বেশি মাতামাতি করি। তার উপরে আছে সময়ের প্রভাব। মোবাইলে ব্যস্ত তারা। আমরা আগে পাড়ায়, ক্লাবে থিয়েটার পেতাম। ওরা সেটা পায় না। ছোটদের নাটকের দলও কম। তবে আছে নান্দীকার, চেতনা, শুভম, ইচ্ছেমতো। তবে, বাচ্চাদের আগ্রহ কমেছে এটা সত্যিই।"



এক সন্ধ্যায় চারটি নাটক ! গান-অভিনয়ে মঞ্চ মাতালেন কারা ?

'নটী বিনোদিনী' রুক্মিণী পর্দায় কতটা সার্থক ? জমল কি রামকমলের ম্যাজিক ?

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.