কলকাতা, 19 অগস্ট: আরজি কর কাণ্ডের জেরে কর্মক্ষেত্রে মেয়েদের নিরাপত্তার কথা ভেবে 'রাত্তিরের সাথী' প্রকল্প সামনে এনেছে রাজ্য সরকার। সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে একাধিক আচরণবিধি মেনে চলার নির্দেশ বা নিয়ম তুলে ধরা হয়েছে ৷ যার মধ্যে মেয়েদের নাইট ডিউটি থেকে বিরত রাখার কথাও লেখা আছে নির্দেশিকার 9 নম্বর পয়েন্টে। আর বিশেষ এই নিয়ম নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন টলিউড তারকা থেকে আম নাগরিক ৷ রাতেই যদি মেয়েরা কর্মক্ষেত্রে বা অন্য কোনও কারণে বেরোতে না পারে তাহলে 14 অগস্ট মেয়েদের রাত দখলের আন্দোলন বৃথা ৷
রবিবার রাতে অভিনেতা পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় টলিউডের মিছিলে 'রাত্তিরের সাথী'র 9 নম্বর পয়েন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন ৷ তিনি বলেন, "এই নিয়ম যদি চালু হয় তা হলে মেয়েদের রাত দখলের মানে কী? নারী পুরুষ নির্বিশেষে সবাই যদি একসঙ্গে কাজ না করতে পারে তাহলে এত প্রতিবাদের মানে নেই। এর বিরুদ্ধে হুঙ্কার তুলতে হবে। মেয়েদের রাস্তাঘাটে নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব প্রশাসনের। যেখানে তিনি কাজ করবেন সেখানকার কর্তৃপক্ষের। এমন নিয়ম হওয়া মানে রাতের কাজ থেকে মেয়েদের বঞ্চিত করা ৷ তাঁর অধিকার থেকে তাকে বঞ্চিত করা।"
এই নিয়ম নিয়ে প্রতিবাদে সরব হয়েছেন অভিনেত্রী চূর্ণী গঙ্গোপাধ্যায়ও ৷ অভিনেত্রী বলেন, "মেয়েরা রাতে বেরোবে না সেটা সুরক্ষা হতে পারে না। সুরক্ষা দেওয়া দরকার সেটা নিয়ম হতে হবে।" এর আগে ইটিভি ভারতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই নিয়েই প্রশ্ন তুলেছিলেন অভিনেত্রী তথা বিজেপি নেত্রী রূপা গঙ্গোপাধ্যায় ৷ তিনিও প্রশ্ন তুলে বলেন, "মেয়েরা কেন রাতে রাস্তায় বেরোবে না? আমরা তো কত রাতে আগে শুটিং সেরে ফিরতাম। ফ্লোরে কাজের জন্য বসে থাকতাম। মহিলা সাংবাদিকরা প্রায়ই খবরের জন্য রাত করে বাড়ি ফেরেন। তাহলে তারা কি কাজ করবেন না?"
একইভাবে মহিলাদের রাতের শিফট থেকে যথাসম্ভব বাদ রাখার নিয়মে আপত্তি জানিয়েছেন অভিনেত্রী মানসী সিনহা, সুদীপ্তা চক্রবর্তী, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়-সহ আরও অনেকে। সুদীপ্তা চক্রবর্তী সোশাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "9 নম্বর পয়েন্টটা ভুল ছাপা হয়েছে নিশ্চয়ই। কাইন্ডলি ঠিক করে নিন। ওটা 'পুরুষ' দের হবে। 2 নম্বর পয়েন্টটাও একটু দেখে নেবেন। বাড়তি মহিলা নিরাপত্তারক্ষী (+ দের নিরাপত্তা দেবার জন্য আরও বাড়তি পুরুষ নিরাপত্তারক্ষী)। তারপর তারা নিরাপত্তা দিতে পারছে নাকি, তারা নিজেরাই অপরাধ করে আসছে, সেটা দেখার জন্য আরও একদল নিরাপত্তারক্ষী।"
একনজরে দেখে নেওয়া যাক কি কি নিয়ম রয়েছে এই নির্দেশিকায় ? মুখ্যমন্ত্রীর মুখ্য পরামর্শদাতা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, "একাধিক দফতরের উদ্যোগেই "রাত্তিরের সাথী" প্রকল্প চলবে।
1) মহিলাদের জন্য হাসপাতালগুলিতে শৌচালয় ও আলাদা বিশ্রামকক্ষ
2) বাড়তি মহিলা নিরাপত্তারক্ষী
3) সিসিটিভির আওতায় থাকবে সেফ জোন
4) 'রাত্তিরের সাথী' মোবাইল অ্যাপ-এর সঙ্গে সংযোগ থাকবে স্থানীয় থানার
5) হেল্প লাইন 100/112 চালু করা
6) হাসপাতালে প্রবেশের সময়ে নিরাপত্তা ও শ্বাস পরীক্ষা করা হবে
7) মহিলারা দু'জন কিংবা গোষ্ঠীবদ্ধভাবে কাজ করবেন
8) হাসপাতালের সবক'টি তলায় পানীয় জলের ব্যবস্থা থাকবে
9) মহিলাদের রাতের শিফট থেকে যথাসম্ভব বাদ রাখা
10) রাতের শিফটে পুরুষ-মহিলা সমানুপাত
11) রাতে কাজের সময়ে পরিচয়পত্র পরে থাকা আবশ্যক
12) বেসরকারি সংস্থাকেও 'রাত্তিরের সাথী' অ্যাপ ইনস্টল করতে হবে।